কোটচাঁদপুরে শিশুকে বিষ খাইয়ে হত্যা মামলার আসামী সৎমা বন্যা গ্রেফতার



 মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, কোটচাঁদপুর  ঝিনাইদহ থাকে: 

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ঘাস নিধনের বিষ খাইয়ে ছয় বছরের এক শিশুকে হত্যা মামলার আসামী সৎমা গ্রেফতার। শনিবার দিবাগত রাতে র্যাব ৬ এর চৌকস টিম গ্রেফতার করে। জানা গেছে ছয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার মাহমুদা নামে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। 

 শুক্রবার রাতে শিশুর বাবা শাহিন আলম বাদী হয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বন্যা খাতুন ওরফে হুমায়রা (১৯) নামে মামলা দায়ের করেছিলেন।

 শিশু মাহমুদার দাদা আবুল কালাম আজাদ জানান, মাহমুদা আমার ছেলে শাহিন আলমের একমাত্র সন্তান। মাহমুদার জন্মের সময় তার মা মারা যায়। মা মরা শিশুটি ছিল আমাদের পরিবারের সবার চোখের মণি অতি আদরের।
 মাহমুদার মায়ের অভাব পূরণ করতে ছেলে শাহিন আলমকে একই গ্রামের জিয়াউর রহমান এর মেয়ে বন্যা খাতুনের সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম। বন্যা খাতুনের আগেও দুইবার বিয়ে হয়েছিল। তবে সে ছিল নিঃসন্তান। এ কারণেই তাকে পুত্রবধূ বানিয়ে বাড়িতে এনেছিলাম, যাতে সে একটি মেয়ে পায়, আর আমার নাতনিটাও মা পায়।
গত এক বছর ভালোই চলছিল। ফুটফুটে শিশুটিকে মায়ের আদর যত্ন নিত বন্যা খাতুন।
আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, সেদিন (১ মার্চ) আমার আদরের নাতনিটা মায়ের কাছে শরবত খেতে চেয়েছিল। সন্ধ্যায় মাহমুদাকে আরসির সঙ্গে ঘাস নিধনের বিষ মিশিয়ে তাকে খেতে দেয় বন্যা। খাওয়ার সাথে সাথেই মাহমুদা ছটফট করতে থাকে।
তখন বন্যা পরিবারের সদস্যদের জানায়, ‘আরসি ভেবে ঘাস পোড়ানো ওষুধ খেয়ে ফেলেছে মাহমুদা।’ 
সেদিন মাহমুদাকে উদ্ধার করে প্রথমে কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। তিন দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক আইসিইউতে নিতে বললে বেড ফাঁকা না থাকায় এবং ব্যয় বহন করতে না পেরে তিন দিন পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মাহমুদাকে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার হেরে যায় শিশু মাহমুদা। 
আবুল কালাম আরো জানান, মৃত্যুর আগে শিশু মাহমুদা বলে গেছে, সৎমা তাকে ঘরে নিয়ে আরসি খেতে দিয়েছিল। সেটা খেয়েই তার এ অবস্থা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কথাগুলো বলার সময় পরিবারের লোকজন ভিডিও ধারণ করে রেখেছে। 
শিশুর বাবা শাহিন আলম অভিযোগ করে বলেন, আমি সাফদারপুর গিয়ে  বাজার করে বাড়ি ফিরে মাহমুদাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করি কি হয়েছে তখন সে জানায় আমি শরবত খেতে চাইলে মা (বন্যা) তাকে ঘরের ভিতর নিয়ে  আরসি খাইয়ে দিয়েছে। তখন বন্যাকে আরসি খাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। এরপর হত্যার রহস্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ঘটনার পাঁচ দিন পর বন্যা ‘আত্মহত্যা চেষ্টার নাটক’ সাজায়। পরে কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালে এক দিন ভর্তিও থাকে সে। তবে মাহমুদার মৃত্যুর খবর পেয়ে সপরিবারে পালিয়ে ছিল। 
এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর বলেন, শিশু হত্যার অভিযোগে মামলার আসামী বন্যা ওরফে হুমায়রা কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। 

No comments

Powered by Blogger.