কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা ১০০ শয্যা ভবন ১৭ মাসে মেলেনি চালুর অনুমোদন

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, কোটচাঁদপুর থেকে :ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৫ জন চিকিৎসক। যা ইনডোর, আউটডোর, নাইট ডিউটি, জারুরী বিভাগ সহ সকল ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা খুবই দুষ্কর। হাসপাতালটি ১৭ মাস আগে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত কল্পে ভবন নির্মাণ হলেও এখনো মেলেনি চালুর অনুমোদন। অব্যবহৃত থাকাই নির্মাণের ১৭ মাসেই চুরি হয়েছে ভবনের টিভি, পানির ট্যাবসহ অন্যান্য সামগ্রী।  বর্তমানে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও এখানে ১০০ থেকে ১২০ জন রোগী সব সময় ভর্তি থাকেন। কখনো কখনো রোগীর সংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে বেড সংকুলানে বারান্দায় থাকতে বাধ্য হয় রোগীরা।  জনবল বলতে গেলে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট। প্রতিদিন আউটডোরে সেবা প্রার্থী থাকে ৮ শত থেকে সাড়ে ১ হাজার জন। যা গরম কালে বেড়ে ১২ শত থেকে ১৫ শত পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।  প্রায় ২ লাখ মানুষ এই  উপজেলায় বসবাস করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে কোটচাদপুর পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ৫ উপজেলার মানুষ এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন । এতে বিপুল সংখ্যক জনগণের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। চিকিৎসকদের কোন রেস্ট বা বিশ্রাম নেয়ার অবকাশ নাই বললেই চলে।  এই হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যা হিসাবে মোট কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ১২৪ জন, সেখানে রয়েছে ৭১ জন। দীর্ঘদিন শূণ্য পদ রয়েছে ৫৩ টি।  ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিত কার্যক্রম শুরু হলে পদের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।  গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ১৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন, শূণ্য আছে ১২ টি ডাক্তারের পদ। ৭ জনের মধ্যে আবার ২ জন আছেন ডেপুটেশনে অথ্যাৎ চিকিৎসক আছেন মাত্র ৫ জন। আগামী ২৫ তারিখে আরো ২ জন কনসালটেন্ড বদলীল আদেশ হয়েছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা।  

এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারীর বেশির ভাগ পদ দীর্ঘদিন শূন্য সহ আল্ট্রাসনোলজিস্ট না থাকাই কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। অত্র কমপ্লেক্সের  অপরিচ্ছন্নতা, ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত বাথরুম, খাবারে অনিয়ম সহ নানা সমস্যা রয়েছে হাসপাতালটিতে। স্থানীয়রা জানান, ৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলিয়ে উপজেলায় অন্তত ২ লাাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এটি। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত কল্পে নতুন ভবন নির্মাণ হলেও রয়েছে অকেজো অবস্থায়। এমনকি বাড়েনি সেবার মান। দেওয়া হয়নি চাহিদামতো জনবল।  সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপতালের  ডেন্টাল সার্জন এর পদ ১ টি, রয়েছে ১টি।  নার্স এর পদ ৩২ টি, রয়েছে ২৮ টি। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ ৮ টি, রয়েছে ৫ টি । ফিল্ড স্ট্যাফ এর পদ ১৮টি আছে ৮ জন, নেই ১০টি। হারবাল এ্যাসিসটেন্ট এর পদের সংখ্যা ১ টি, নেই ১ টি, এছাড়াও ফার্মাসিস্ট,  স্যাকমো, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, , সহঃ স্বাস্থ্যঃ পরিদর্শক, কার্ডিওগ্রাফার, ড্রাইভার, কম্পিউটার অপারেটর, টিএলসি, কুক/মশালটি, অফিস সহায়ক,  প্রধান সহকারী, ক্যাশিয়ার, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোর কিপার,  কম্পাউন্ডার নিরাপত্তা প্রহরীর, জুনিয়র মেকানিক,  মালী, আয়া, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ওয়ার্ডবয়সহ মোট ৪৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২১ জন, নেই ২৪ টি পদের জনবল। বিপুল সংখ্যক পদ শুন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা জনগণকে অনেক সময় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। অনেক সময় আউটডোরে টিকিট কেটে দুই তিন ঘন্টা অপো করে ডাক্তার দেখাতে পারেনা রোগীরা। আবার চিকিৎসা দিতে না পারায় উন্নত চিকিৎসার কথা বলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। প্যাথলজি বিভাগেও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় পরিক্ষা নিরীক্ষার জন্য রুগীদের যেতে হয় বাহিরের ক্লিনিকে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সংকটে চরমভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই হাসপাতালটি। 
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার পারলাট গ্রামের বৃদ্ধা হামিদা বেগম ও হাওয়া বেগম বলেন, প্রেসার ও গ্যাসের সমস্যা জনিত কারণে ডাক্তার দেখতে এসেছিলাম। ১ ঘন্টা যাবৎ লাইনে দাঁড়িয়ে আছি এখনো ডাক্তার দেখাতে পারিনি। টাকা দিয়ে বাইরে থেকে ডাক্তার দেখানোর অবস্থা নেই। হাসপাতালে ডাক্তার দেখতে পারলে খুবই উপকার হতো। আযমপুরের সামাউল বলেন আঘাত জনিত ব্যাথ্যা নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছি যে ভিড় দেখতেছি ডাক্তার দেখাতে পারবো কিনা জানিনা।  রাজাপুরের বিথীকা রানী ও একই সমস্যার কথা জানান। সরেজমিনে রবিবার সকাল ১১ টার সময় দেখা যায় ডাক্তারের সামনে পুরুষ ও মহিলা রুগীদের বিশাল লাইন। রোগীরা ভাগ হয়ে ৪ টি লাইনে অন্তত্ব ২০০  জন দাঁড়িয়ে আছে। টিকিট বিক্রেতা জানান এখন পর্যন্ত ৫০০ এর অধিক টিকিট বিক্রি হয়েছে আরো অনেক টিকিট বিক্রি হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আমানউল্লাহ মামুন জানান, তিনি কয়েক মাস আগে এখানে যোগদান করেছেন  হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও ব্যাপক জনবল সংকট রয়েছে,  হাসপাতালের চিকিৎসক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পর্যাপ্ত জনবল নেই।  অপ্রতুল সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। জরুরি  ভিত্তিতে শূণ্য পদের জনবল পূরণ না করলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া আমাদের অত্যান্ত কঠিন হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অনেক পদই শূন্য রয়েছে। যে কারণে আমরা প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। ইতোমধ্যে ১০০ শয্যা  উন্নীততে ভবন নির্মাণ হলেও  নতুন ভবনের  যেহেতু প্রশাসনিক অনুমোদন নেই তাই সেখানে আসবাবপত্র, জনবল ও বাজেট  নেই। আশাকরি, কর্তৃপ জনবল সংকট ও ১০০ শয্যা উন্নীততে অনুমোদনের  বিষয়গুলো বিবেচনায় নিবেন। এতে করে জনগণ তাদের যথাযথ চিকিৎসা সুবিধা সুনিশ্চিত করতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.