কালীগঞ্জে রমরমা মাদক ব্যবসা ॥ অবাধে চলছে সেবন, বাড়ছে অপরাধ

এনামুল হক সিদ্দীক স্টাফ রিপোর্টার- ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। প্রকাশ্যেই চলছে মাদক ব্যাচাকেনা ও সেবন। মরণ নেশায় জড়িয়ে পড়ছে সমাজের কিশোর-তরুণ তরুনী ও বয়স্করা। ফলে বাড়ছে নানাবিধ সামাজিক অপরাধ। বিশেষ করে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সারাদেশে অঞাত কারনে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে মাদক অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় মাদক কারবারী ও সেবনকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ৫ আগস্টের পর কালীগঞ্জ থানা এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ টি মাদক মামলা হয়েছে। তবে, পুলিশের দাবি, মাদক নির্মূলে চেষ্টা চলছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করে উপজেলা ব্যাপী মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। তারা কালীগঞ্জ পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্পúটে খোলামেলা ভাবে মাদক কেনাবেচা করছে। এর মধ্যে রয়েছে পৌর এলাকার আড়পাড়ায় অবস্থিত পৌর কসাইখানা, কোটচাঁদপুর রোডে বিসিআইসি সার গোডাউনের সংরক্ষিত এলাকা, ঢাকালেপাড়া, আয়েশা ফিলিং স্টেশনের পাশের চায়ের দোকানে এবং তার পেছনের এলাকা, পোস্ট অফিসের পাশে নবনির্মিত সরকারি মডেল মসজিদের পেছনে, ইউনিভার্সাল পোল্ট্রি হ্যাচারির পূর্ব দিকের মাঠে রাস্তার পার্শে, আনন্দবাগ নলডাঙ্গা সড়ক, ফয়লা মিশন পাড়া, হেলাই মাঠপাড়া, বলিদাপাড়া চিত্রা নদীর পাড়, মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশন এর আশপাশে এলাকা, কাশিপুর হঠাৎপাড়া ও শিবনগর ইটভাটা এলাকা। এছাড়া রয়েছে নকল বিড়ির উৎপাদনকারী গ্রাম দেবরাজপুর, মঙ্গলপৈতা চিত্রা নদীর ধারে এবং শ্মশান ঘাট, বারবাজারের বাদেডিহি খাঁ পাড়া, বাদেডিহি বেদেপল্লীর, বারোবাজার রেল স্টেশন রোড (মাছ বাজারের পাশে), ধর্মতলা, সোনালীডাঙ্গা তিন রাস্তার মোড়ে, জগন্নাথপুর আবাসন, বারোপাখিয়া মাঠ, কোলা বাজারের পাঠকাঠি হাটা, গোমরাইল মন্দিরের পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মদ, ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক। বিভিন্ন কৌশলে কালীগঞ্জ উপজেলায় ঢুকছে মাদক। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে কোটচাঁদপুর সড়ক বেশি ব্যবহার করে থাকে মাদক কারবারিরা। আবার এই রোডেই মাদক সেবনকারীদেরও যাতায়াত বেশি। এসব কাজে জড়িত বেশ কয়েকজন তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। যাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে। এর মধ্যে অনেকে আটক হলেও জামিনে বেরিয়ে পুনরায় মাদকের কারবার শুরু করেন তারা। মাঝেমধ্যে ছোট মাদক ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন রাঘববোয়ালরা। এদিকে মাদকের টাকা জোগাড় করতে সেবনকারীরা জড়িয়ে পড়ছে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন কোটচাঁদপুর রোডে অবস্থিত বিসিআইসির সার গোডাউনের মধ্যে সংরক্ষিত এলাকায় নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে মাদক সেবন চলছে। পোস্ট অফিসের পাশে মডেল মসজিদের আশপাশেও একই চিত্র। সকাল থেকে শুরু করে রাত অব্দি সেখানে চলে মাদক বেচাবিক্রি ও সেবন। যশোর রোডে আয়েশা তেল পাম্পের পাশের একটি চায়ের দোকানে হারহামেশা বিক্রি হচ্ছে মাদক। দোকানটির পেছনে মাদক সেবনকারীদের আনাগোনা সব সময় লক্ষ করা যায়। আবার আড়পাড়ায় অবস্থিত পৌর কসাইখানার ভেতরে চলে মাদক বেচা বিক্রি ও সেবনের জমজমাট কারবার। স্থানীয়রা বলেন, হঠাৎ করে নানা ধরনের মাদক এলাকায় ছেয়ে গেছে। পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে যুবসমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছায়ে গেছে । মোট কথা মাদক ব্যাবসায়ীরা সিজন টাইম পার করছে বর্তমানে। যা সকলের জন্য অশনি সংকেত। যে কারণে দ্রুত মাদকের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালিত হওয়া দরকার বলে তারা মনে করেন। কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিষয়ে আইনের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবো মাদক কারবারি ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে। আর এজন্য যা যা করণীয় তাই তাই করবো। পাশাপাশি বলল শুধু পুলিশের পক্ষে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। দল মত নির্বিশেষে কালীগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা পেলে আমি বিশ্বাস করি কালীগঞ্জকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব হবে। মাদকের বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ থানা পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্স । মাদক কারবারি যেই হোক, তাকে মোটেও ছাড় দেওয়া হবে না এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

No comments

Powered by Blogger.