ঝিনাইদহের ক্রিড়াঙ্গন এখন ধ্বংসের পথে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামের সামনে হাটু পানি

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-

মাঠে বল গড়ায় না দীর্ঘ ৭ বছর। বন্ধ ফুটবল, ভলিবল এমনকি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। নেই খেলার কোন প্রতিযোগিতা। সংস্কার নেই স্টেডিয়ামের। মাঠের গ্যালারি, ড্রেসিং রুম আর ক্রিড়া সংস্থার অবকাঠামোগুলো রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে চাকচিক্য হারাচ্ছে। স্টেডিয়ামের সামনে এখন জমে আছে হাটু পানি। ধ্বংসের পথে ক্রিড়াঙ্গন। একমাত্র বৃহৎ খেলার মাঠ ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামটি খাঁ খাঁ করছে। 

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেশাদার খেলোয়াড়দের নিয়ে বেশ ভালই চলছিল ঝিনাইদহ জেলা ক্রিড়া সংস্থা। জমজমাট থাকতো বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম। কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতারা ক্রিড়া সংস্থা দখল করে নেওয়ায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে খেলার মান। ক্লাব ভিত্তিক খেলার প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। 

২০১৭ সালে ক্রিড়া সংস্থায় কাউন্সিলর বানানো নিয়ে যুবলীগ নেতা রাশিদুর রহমান রাসেল ও আ’লীগ নেতা জীবন কুমার বিশ্বাসের মধ্যে দ্বন্দ বাঁধে। সেই দ্বন্দ্ব গড়ায় উচ্চ আদালতে। মামলা হওয়ায় স্টেডিয়ামে সব ধরণের প্রতিযোগিতাসহ খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। খেলেয়াড়দের পরিবর্তে আমলাদের নিয়ে গঠিত হয় ক্রিড়া সংস্থার এডহক কমিটি। এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের মাঝে। এদিকে খেলাধুলা বা বড় ধরণের কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন না থাকলেও ক্রিড়া সংস্থার খরচ থেমে নেই। ২০১৪ সালের ১০ মে থেকে ২০২৪ সালের ২২ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ক্রিড়া সংস্থার জনতা ব্যাংকে জমা হয় মোট ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ২২ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ব্যায় হয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। 

অপরদিকে ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকে ক্রিড়া সংস্থার আরেকটা একাউন্টে জমা ছিল ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের ১০ জুন দুইটি চেকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের ওই একাউন্ট থেকে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই টাকা কোন খাতে ব্যায় দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে তার হিসাব জেলা ক্রিড়া সংস্থায় নেই। দীর্ঘদিন আভ্যন্তরীন অডিট না হওয়ায় ক্রিড়া খাতে বেশুমার লুটপাট হয়েছে এমন অভিযোগও তুলেছেন কেউ কেউ। 

ঝিমিয়ে পড়া ঝিনাইদহের ক্রিড়াঙ্গন নিয়ে জেলার সাবেক ফুটবলার ও বিশিষ্ট ক্রিড়া সংগঠক আহসান উদ্দীন আফাঙ্গীর জানান, ক্রিড়া সংস্থার নেতৃত্ব পেশাদার খেলোয়াড়দের হাতে ফিরিয়ে না দিলে মাঠে প্রানবন্ত পরিবেশ ফিরে আসবে না। তিনি দ্রুত মামলা নিস্পত্তি করে ক্রিড়া সংস্থার নির্বাচন দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানান।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, ক্রিড়া সংস্থার নতুন কমিটি গঠন হলেই কেবল ক্রিড়ায় প্রাণ ফিরতে পারে। আমি নতুন করে পিস তৈরী করেছি। স্টেডিয়াম রং করেছি। এখন আমি দায়িত্বে নেই। যারা দায়িত্বে আছেন তারা করবেন। 

জেলা ক্রিড়া অফিসার মো: মিজানুর রহমান জানান, মামলা জটিলতায় এখনো কোন কমিটি হয়নি। দ্রুত উন্নয়ন কাজ করা হবে। এ জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক  নতুন আসছেন। সেজন্য একটু সময় লাগবে। বর্ষা মৌসুম চলে গেলে আশা করা যায় ফুটবল, ভলিবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এর আয়োজন করা হলে আবারো প্রানবন্ত হয়ে উঠবে জেলার একমাত্র বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম।


No comments

Powered by Blogger.