ঝিনাইদহের শৈলকুপায় চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বিএনপির কর্মীরাও!

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হাকিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেনের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বিএনপি কর্মীরা। তার সামাজিক দলে না আসায় দেওয়া হচ্ছে হুমকি করা হচ্ছে জমি দখল ও মারধর, নেওয়া হচ্ছে চাঁদা। গত দুই সপ্তাহ ধরে ওই ইউনিয়নের হরিহরা, নাগপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাকিমপুর ইউনিয়ন বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন এলাকায় নিরব চাঁদাবাজি শুরু করেছে। এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন গ্রামের বিএনপির নেতাকর্মীদের দলে ভেড়াতে জোর করছে। কেউ তার কথায় রাজি না হলে নানা ভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে।

ভুক্তভোগী নাগপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এর আগে নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের এজেন্ট হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছি। মাসের পর মাস বাড়ি ছাড়া ছিলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভেবেছিলাম এখন মনে হয় সুদিন ফিরবে। কিন্তু এখন যেন তার থেকে অত্যাচার বেশি হচ্ছে। হাকিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন এখন আমাদের উপর অত্যাচার করছে। জাকির হোসেন ও তার সহযোগী সিদ্দিক মেম্বর আমার বাড়ি ঘিরে দিয়েছে। আমার মাঠের ফসলাদি লাগাতে দেয়নি। আমরা দুইটা ভাই মাঠে ধান লাগাতে পারিনি। এখন আমার বসবাস করা কস্ট হয়ে যাচ্ছে।

হরিহরা গ্রামের ভুক্তভোগী রাজু আহম্মেদ বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর জাকির আমাকে বলল তার দলে যেতে হবে। আমি জাকিরকে বললাম আমি ওসব ঝামেলার মধ্যে থাকতে চাইনা। এতে সে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে বলে আমার দলে যেতেই হবে। আমি না যাওয়ায় পরের দিন তার ভাতিজা চয়ন, জহুরুলসহ তিনচার জন আমাকে মারধর করেছে। আমি ৪/৫ দিন হাসপাতালে থাকার পর বাড়ি আছি কিন্তু পলাতক ভাবে। গ্রামে খুব একটা বের হতে পারছি না। খুব চাপে আছি।

একই গ্রামের নওয়াব আলী বিশ্বাস বলেন, কয়েকদিন আগে হরিহরা গ্রামের জনাব আলী আমাকে বলেন, আমি নাকি তার কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। এর কয়েকদিন পর জাকির আমাকে ডেকে শালিস করে ২২ হাজার টাকা দিতে জোর করে। আমি উপায় না পেয়ে তার ২২ হাজার টাকা দিয়ে আসি। তবে আমি কিন্তু কোনদিন জনাব আলীর কাছ থেকে টাকা নিই নি। আমাকে চাঁদাস্বরূপ টাক দিতে হলো।

আব্দুল্লাহ নামের এক কৃষক জানায়, আমার কাছ থেকেও জোর করে ২৮ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি নাকি একজনের কাছে টাকা দেনা সেই কথা বলে শালিসে ডেকে নিচ্ছে। যখন প্রমাণ চাচ্ছি তখণ বলছে ওসব কিছু না চাঁদা দিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের এক বিএনপি নেতা বলেন, জাকির হোসেন এলাকায় চাঁদাবাজি করছে। একেক পাড়ায় একেকজন লোককে পাঠিয়ে তাদের কাছে টাকা পাবে বলে হুমকি দিচ্ছে। পরে জাকির তাদের ডেকে জোর করেই সেই টাকা আদায় করছে।

অভিযুক্ত জাকির হোসেন বলেন, চাঁদাবাজির কোন ঘটনা ঘটেনি। যারা টাকা দিয়েছে তারা ৭/৮ বছর আগে ওই টাকা নিয়েছিলো। সেই টাকায় শালিস করে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির গঠন করা ‘চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, দখলদারি, গাছকাটা জমিদখলসহ যেকোন অন্যায় বিরোধী’ কমিটির সদস্য রাকিবুল হাসান খান দিপু বলেন, জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আমরাও এমন অভিযোগ পেয়েছি। ২/১ দিনের মধ্যেই বিষয়টি তদন্ত করে প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


No comments

Powered by Blogger.