ভেঙ্গে দেওয়া জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে শেষ সময়ে ৪০ লাখ টাকার গাছ ৬ লাখ ২৯ হাজারে বিক্রির অভিযোগ।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি -
কাঠ ব্যবসায়ীদের মতে গাছগুলোর আনুমানিক মুল্য ৪০ লাখ টাকা। জেলা পরিষদ সেগুলো বিক্রি করেছেন মাত্র ৬ লাখ ২৯ হাজার ৭৮৭ টাকায়। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে তিনটি সড়কের এই ১০ টি গাছ টেন্ডারে বিক্রি করেছেন কর্তৃপক্ষ। ঝিনাইদহ শহরের গোবিন্দপুর এলাকার জনৈক রিপন মুন্সী সর্বচ্চো দরদাতা হিসেবে গাছগুলো পেয়েছেন। ইতোমধ্যে গাছ কাটতে শুরু করেছেন, এখনও কাটা চলছে।
কাঠ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসজাসে বিক্রির পূর্বে গাছের মুল্য নিদ্ধারণও করা হয়েছে খুবই কম। আর টেন্ডারে অংশগ্রহনকারী মাত্র তিনজন। যারা একই দিনে একই ব্যাংক থেকে পরপর নাম্বারের তিনটি পেমেন্ট ওর্ডারে জামানতের টাকা জমা দিয়েছেন। এতে প্রমান করে পছন্দের তিনজনের নামে দরপত্র জমা দিয়ে একজন কমমুল্যে গাছগুলো দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের ভাষায়, এই গাছ বিক্রিতে কোনো প্রতিযোগিতা হয়নি, হলে অনেক বেশি টাকায় বিক্রি হতো। সরকারের আয় বাড়তো।
অবশ্য জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা সকল নিয়ম মেনেই এই টেন্ডার করিয়েছেন। তিনটি দরপত্র জমা পড়েছে, আইনানুযায়ী সেখানে যার দর বেশি ছিল তাকেই গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নিতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরুর পূবেই সড়কের দুইপাশের বড় বড় গাছ বিক্রি করা হয়েছে। যা বেশির ভাগ কাটা হয়েছে, এখনও কাটা চলছে। সবুজ গাছগুলো বিক্রির পর এবার পাতা ঝরা, ডালপালা শুকনা ১০ টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এই গাছগুলোর একেকটির মুল্য আনুমানিক ৩ থেকে ৪ লাখ বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
জেলা পরিষদ সুত্রে জানাযায়, কালীগঞ্জ শহরের ডাকবাংলো হতে বৈশাখী তেল পাম্প পর্যন্ত ১ টি মেহগুনি ও ৫ টি রেইন্টি কড়াই, কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর রোডে ১ টি মেহগুনি ও ১ টি তেতুল এবং কালীগঞ্জ-কোলা রোডে ১ টি ইপিল ইপিল ও ১ টি মেহগুনি গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এই বিক্রির জন্য চলতি বছরের ২ মে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে টেন্ডার পক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ৭ মে সভা, ১৯ মে দরপত্র বিক্রয়, ২০ মে দাখিল, একই দিনই দরপত্র খোলার দিন নিদ্ধারণ করা হয়। ১৪ জুলাই দেওয়া হয় কার্যাদেশ।
কার্যাদেশে দেখা যায় অনুমোদিত সর্বচ্চো উদ্ধৃত দর (৭.৫% ভ্যাট ও ১০% আয়কর সহ) ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এখানে অনুমোদিত নিট সর্বোচ্চ উদ্ধৃত দর (বিক্রি মুল্য) রয়েছে ৬ লাখ ২৯ হাজার ৭৮৭ টাকা। অর্থাৎ বিক্রি মুল্যের সঙ্গে ভ্যাট ও আয়কর যোগ করলে অনুমোদিত সর্বচ্চো উদ্ধৃতদর এর সমান দাড়িয়েছে। এছাড়া দরপত্রে তিনজন অংশ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এরা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার শালিখা গ্রামের মোঃ নুরুল ইসলামের পুত্র মোঃ হারুন অর রশিদ, মহেশপুর উপজেলার যোগিহুদা গ্রামের মোঃ আব্দুল ওহাব এর পুত্র মোঃ নাছির উদ্দিন ও ঝিনাইদহ শহরের গোবিন্দপুর গ্রামের খালেক মুন্সীর পুত্র মোঃ রিপন মুন্সী। হারুন অর রশিদের নিট মুল্য দিয়েছেন ১ লাখ ৯১ হাজার ৪৮৯ টাকা, নাছির উদ্দিন নিট মুল্য ১ লাখ ৭০ হাজার ২১২ টাকা ও রিপন মুন্সীর নিট ৬ লাখ ২৯ হাজার ৭৮৭ টাকা। রিপন মুন্সীর নিট মুল্যের সঙ্গে ভ্যাট ও আয়কর যোগ দিয়ে দাড়িয়েছে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
দরপত্রে আরো দেখা যায় এই তিনজন ঠিকাদার ঝিনাইদহ শহরের স্ট্যান্ডার ব্যাংক থেকে ২০ মে পেমেন্ট অর্ডার (পিও) করেছেন। রিপন মুন্সীর পেমেন্ট অর্ডার নম্বর পিও-৩১১৪৯৭৫, নাছির উদ্দিনের করা পেমেন্ট অর্ডার নম্বর পিও- ৩১১৪৯৭৬ ও হারুন অর রশিদের করা পেমেন্ট অর্ডারের নাম্বার পিও - ৩১১৪৯৭৭। এদের মধ্যে রিপন মুন্সীর পেমেন্ট অর্ডারের বিবরণীতে স্টান্ডার ব্যাংকের পাশাপাশি অগ্রনী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার আরো একটি পেমেন্ট অর্ডারের (পিও-৪১০১৫৪৮) নাম্বার উল্লেখ করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার একাধিক কাঠ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানান, এই গাছ বিক্রির ক্ষেত্রে মুল্য নিদ্ধারণ থেকে শুরু করে সর্বত্র অনিয়ম-দূর্নীতি করা হয়েছে। টেন্ডার পক্রিয়া খতিয়ে দেখলে তার প্রমান পাওয়া যাবে। কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তা তারা এখনও জানেন না। কালীগঞ্জে শত শত কাঠ ব্যবাসয়ী এই টেন্ডারে অংশ নেওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর সরকার আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
এ ব্যাপারে তিনজন ঠিকাদারকে দরপত্রে দেওয়া নাম্বার ধরে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ফোন দেওয়া হলে একজন (হারুন অর রশিদ) এর স্ত্রী ধরেন। পরে তার স্বামী হারুন অর রশিদ ফোন করে জানান, তিনি ঢাকায় থাকেন। তার নামে অন্য একজন এই দরপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি এর কিছুই জানেন না। মহেশপুরের নাছির উদ্দিনের ফোনটি এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না বলে মুটোফোন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। রিপন মুন্সী জানান, তারা সব নিয়ম মেনে টেন্ডার দিয়েছেন। কাজ তিনি পেয়েছেন,এখন গাছ কাটা চলছে। একসঙ্গে একই ব্যাংক থেকে পেমেন্ট অর্ডার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর না দিয়ে ফোন রেখে দেন।
জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা সাংবাদিকদের জানান, টেন্ডার পক্রিয়া সঠিক ভাবেই হয়েছে। বন বিভাগ গাছের মুল্য নিদ্ধারণ করেছেন। তারা নিদ্ধারিত মুল্য পেয়ে গাছ দিয়েছেন।
বিঃ দ্রঃ- ই-মেইল এ ছবি আছে \
No comments