ধ্বংস করা প্রতিষ্ঠান সংস্কারের পর নির্বাচন বিদেশী কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে ড. ইউনূস

চিত্রা নিউজ ডেস্ক - প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বর্তমান সরকারের প্রধান কাজ হলো যত দ্রুত সম্ভব একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তবে এর আগে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমের আমূল সংস্কারের মাধ্যমে একটা উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। ক্ষমতায় থাকার চেষ্টায় শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকার দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের নবযাত্রায় বাংলাদেশের বন্ধু, অংশীদার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বর্তমান সরকারের পাশে থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিদেশী কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের দেয়া ব্রিফিংয়ে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রথম বিদেশীদের সাথে তিনি সরাসরি মতবিনিময় করলেন। এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর বিদেশী কূটনীতিকদের ব্রিফ করেছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি এমন একটি সময়ে দেশের দায়িত্বভার নিয়েছি, যখন অনেক দিক থেকেই পুরোপুরি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষমতায় থাকার চেষ্টায় শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকার দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘ দেড় দশকের নির্মম নৃশংসতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করা হয়েছিল। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম তাদের ভোটাধিকারের চর্চা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট হয়েছে। আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুণ্ঠন করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনী কাজ চালিয়ে যাবে। সব ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। গণমাধ্যম সংস্কার নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার সরকার মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করতে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন নির্বতনমূলক আইন করেছিল। এখন গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রসমাজ ও জন-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আর্থিক খাতে বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ। আমরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। তবে কেউ বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহ কাঠামো বিঘিœত করার চেষ্টা করলে তা কোনোভাবে সহ্য করা হবে না। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারদের বাংলাদেশের প্রতি আস্থা অটুট রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ যত আন্তর্জাতিক চুক্তি করেছে, যত আইনি বাধ্যবাধকতা আছে সেগুলো মেনে চলা হবে। ড. ইউনূস বলেন, দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে। শেখ হাসিনার নৃশংস স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল লাখো বীর ছাত্র-জনতা। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভয়াবহতম বেসামরিক গণহত্যা চালিয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন। তিনি বলেন, আমি সেই সব বীর ছাত্র এবং নিরীহ মানুষদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, যারা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। আমাদের সাম্প্রতিক স্মৃতিতে অন্য কোনো দেশের শিক্ষার্থীদের তাদের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা প্রকাশের জন্য এত মূল্য দিতে হয়নি, যারা একটি বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং পরিবেশবান্ধব দেশের স্বপ্ন দেখেছে, যেখানে নাগরিকের মানবাধিকার সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি স্বপ্ন আমাদের মুগ্ধ করেছে, যে স্বপ্ন একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। ছাত্ররা এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখছে যেখানে মানুষ তাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে, নিজেদের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে ও মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়াসহ মানবিক সাহায্য অব্যাহত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। দেশের পুনর্গঠনে আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে তার নিরপেক্ষ তদন্তে জাতিসঙ্ঘের দলকে আমি স্বাগত জানাই।

No comments

Powered by Blogger.