কালীগঞ্জ সুন্দরপুর রেলষ্টেশন বন্ধ, থামে এক লোকাল ট্রেন, চুরি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র
শাহজাহান আলী সাজু-
লোকসানের লাগাম টানতে লোকাল, মেইলসহ সকল ট্রেন পর্যায় ক্রমে বন্ধ করে
দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন স্টেশনটি বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের
ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। এতে স্থানীয় যাত্রীদের একটি বড় অংশ
দূরের স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ভ্রমণ করছেন। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলায়
তিনটি রেলষ্টেশন রয়েছে তন্মধ্যে দুটি চালু রয়েছে আর সুন্দরপুর
রেলস্টেশনটি প্রায় দুবছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ থাকা
সুন্দরপুর স্টেশনটি রেলের খাতায় অলাভজনক হিসেবে চিহ্নিত। লোকসান ও
লোকবল সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সুন্দরপুর রেলওয়ে
স্টেশন। রাতে এসব স্টেশনে বাড়ছে মাদকসেবীদের আনাগোনা, ঘটছে চুরি,
ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ। স্টেশনটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাংলাদেশে
রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে।
কিন্তু জনবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে কালীগঞ্জের সুন্দরপুর রেলস্টেশনটি।
স্টেশনের অধিকাংশ মালামাল ঘরের টিন, লোহার রড, জানালা, দরজা চোরে নিয়ে
গেছে ও চারপাশে সকল জমি দখল করে এলাকার মানুষ কৃষি আবাদ করছে।
সুন্দরপুর রেলস্টেশনটি প্রায় ২ বছর আগে সকল প্রকার ট্রেন দাঁড়ানো বন্ধ
হয়ে যায়। এর আগে রাত ও দিনে প্রতিদিন ৫ টি ট্রেন থেমে যাত্রী আনা
নেওয়া করতো। কিন্তু দুই বছর আগে হঠাৎ করে সকল ট্রেন থামা বন্ধ করে দেয়
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এলাকার মানুষের পড়তে হয় বড় ধরনের বিড়ম্বনায়। এলাকার
মানুষের যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল
আজীম আনার রেলমন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করে দুপুর ২ টায় মহানন্দা
ট্রেনটি থামানোর ব্যবস্থা করে দেন। এ ছাড়া অন্য কোন ট্রেন এখন আর
থামে না ও রেলস্টেশনে কেউ কোন দায়িত্ব পালন করে না। সুন্দরপুর রেলস্টেশনটি
বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ কোন স্টেশন
মাস্টার না থাকায় সাধারণ লোকাল একটি ট্রেনে যাত্রীরা টিকিট না কেটে
ট্রেনে উঠতে হয়। বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে ট্রেনের ভিতর থেকে
চেকারদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হয়। বর্তমানে একটি
লোকাল ট্রেন থামে ও অন্য ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আর কোন ট্রেন
সুন্দরপুর স্টেশনে থামে না। ফলে ট্রেনের যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। বন্ধ
থাকা সুন্দরপুর রেলস্টেশনটি ব্রিটিশ আমলের। বর্তমানে রেলে অনেক
পরিবর্তন এসেছে। সুন্দরপুর রেলেষ্ট্রেশনটি গণপরিবহণ হিসাবে পরিচিত
ছিল একসময়। বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ বেকায়দায় পড়েছে। এ স্টেশনে দাঁড়াত
বলে স্থানীয় যাত্রীরা কম দূরত্বেও ট্রেনে চলাচল করত। নিম্ন-আয়ের লোকজন,
স্কুল কলেজ শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষের ভরসা ছিল ট্রেন।
সুন্দরপুর বাজারের পাশে সুন্দরপুর রেলওয়ে স্টেশন প্রায় দুই বছর বন্ধ রয়েছে।
সর্বোপরি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। লোকসান ও লোকবল
সংকটের কারণ দেখিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ চালুর
কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় স্টেশনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
চুরি হয়ে গেছে। পাশাপাশি এসব স্টেশনে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ জমে
ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় একদিকে সরকার
রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অন্যদিকে যাত্রীরা তাদের যাতায়াত ও মালপত্র
পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্টেশনের দুপাশের জমিগুলো দখল করে
বিভিন্ন ফসলের চাষ করছে কেউ বা স্টেশনের প্লাটফর্মে ধান, তিলসহ
বিভিন্ন ফসল, শুকাতে দেওয়া হয়েছে পল বিচালির পালা। সুন্দরপুর বাজার
সামনে স্টেশনের সিগন্যাল ভবনটিতে দুই জন স্টাফ দায়িত্ব পালন করেন। স্টেশন
থেকে প্রায় ৫০০ গজ সামনে এক গেটম্যানের সিগন্যাল ভবন। দায়িত্বে
থাকা রুবেল আহম্মেদ বলেন, তিনি এখানে ৪ বছর দায়িত্ব পালন করছেন। এর
আগে কোটচাদপুর রেলস্টেশন মাস্টার প্রতিদিন সুন্দরপুর রেলেষ্টেশনে এসে
ট্রেন পারাপর করতো। স্টেশনটি বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে।
স্টেশনে ট্রেনের নির্ধারিত সময় অনুমান করে যাত্রীরা লোকাল ট্রেনের জন্য
অপেক্ষা করতে হয়।
সুন্দরপুর গ্রামের শাহাজান আলী, কাঠালিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম,
আবদুল মজিদ জানান, একসময় এ স্টেশনে ট্রেনের সময়সূচি ও টিকিট
পাওয়া যেত। এখন ট্রেন থামে না যে কারণে লোকাল মেইল ট্রেন স্টেশনে
এসেই হুইসেল দিয়ে চলে যায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ স্টেশন বন্ধ থাকায়
ট্রেনে যাতায়াতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একসময়ের
জমজমাট স্টেশনটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সর্ব সময়
আড্ডা, নেশাখোরদের আখড়া। যেন এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে
স্টেশনটি। কালের বিবর্তনে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায়
রেলওয়ে স্টেশনর গুরুত্ব ও চাহিদা কিছুটা কমে গেলেও রেলওয়ের নিরাপদ এবং
আরামদায়ক ভ্রমণের ফলে এখনও এ অঞ্চলের মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করতে ব্যাকুল।
স্টেশন বন্ধ থাকায় একটি ট্রেন থামে ফলে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ
করছেন যাত্রীরা। প্রতিটি রেলস্টেশনে একজন স্টেশন মাস্টার ও সহকারী মাস্টার
এবং চারজন করে পয়েন্টম্যান থাকার কথা। সঠিক তদারকি না থাকায় নষ্ট
হচ্ছে স্টেশনের মূল্যবান সরঞ্জাম। হচ্ছে চুরি ও দখল হয়েছে রেলওয়ের সম্পত্তি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ রেলষ্টেশন মাস্টার শাহাজান আলী জানান,
সারা বছর লোকসান ও লোকজনবলের অভাবে সুন্দরপুর রেলষ্টেশন টিতে ট্রেন
থামা বন্ধ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শুধু মাত্র মহানন্দা লোকাল ট্রেন
টি কিছু সময়ের জন্য বিরতি দেয়।
No comments