কোটচাঁদপুরে প্রচন্ড গরম আর ঘন ঘন লোডশেডিং এ জনজীবন অতিষ্ঠ
রোকনুজ্জামান,কোটচাঁদপুর থেকে-
প্রচন্ড গরম, আর ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কোটচাঁদবাসীর জনজীবন। প্রচন্ড গরমে দিনে-রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। দিনে তিন থেকে চার বার, আবার কোন কোন এলাকায় পাঁচ থেকে ছয়বারও বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। একটানা দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশিও লোডশেডিং হচ্ছে কোথাও। বাদ যাচ্ছে না নামাজের সময়ও। এতে কর্মজীবী মানুষের দৈনন্দিন কাজে চরম ব্যাঘাত ঘটছে।
গত কয়েকদিন ধরে কোটচাঁদপুর উপজেলায় মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এর ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিশু, শিক্ষার্থী, রোগী ও ব্যবসায়ীসহ সববয়সী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় নবজাতক ও রোগীদের। বাইরের কড়া রোদ আর ঘরে বিদ্যুৎ না থাকায় ভ্যাপসা গরমে ঠিকমতো ঘুমাতেই পারছেন না লোকজন। অভিভাবকরা বলছেন, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের ফলে রাতে ঘুম না হওয়ায় দিনের বেলায় এর প্রভাব পড়ছে। পড়াশুনায় মনোযোগী হতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা।
গত কয়েকদিন থেকে সকাল ৭টার পর সূর্যের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। দুপুরে তীব্রতা আরও বেশি। সব শ্রেণী পেষার মানুষের জন্য কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রচণ্ড এ গরমে সবচেয়ে বিপদে আছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। রোদে তাকালেই চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। টানা গরম আর অনাবৃষ্টিতে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হলকার মতো। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই।
এর মধ্যে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে ঘন ঘন লোডশেডিং। লোডশেডিং হলে বাসার মধ্যে যেন দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা।গ্রামের তুলনায় শহরে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি।
একই অবস্থা ব্যবসায়ীদেরও। বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতা সংকটে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। বৈশ্বিক নানা সংকটের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বাগড়া দিচ্ছে লোডশেডিং। ঈদের পরে বেঁচাকেনায় দিনেও বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে অলস সময় পার করছেন তারা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দিনে-রাতে গড়ে কয়েক ঘণ্টা করে ৪-৫ বারও হচ্ছে লোডশেডিং। পিক আওয়ারে অতিরিক্ত লোডশেডিং হওয়ায় ক্রেতারাও আসছেন না। ফলে কমে গেছে কেনাবেচাও।
কোটচাঁদপুরে অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি বাজার দখল করে আছে সবচেয়ে বেশি কাঁঠের ব্যবসা। পৌরসভা শহরের মধ্যে গড়ে উঠা ৩৫ থেকে ৪০ টির মতো কাঁঠ ফাড়ানো /চিরাই করা করাত কল ( স মিল)
অপরিকল্পিত এমন লোডশেডিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব সাইজ কাঠ ব্যবসায়ীরা। কথা হচ্ছিল কোটচাঁদপুরের সাইজ কাঠ ব্যবসায়ী জুয়েল ভাইয়ের সাথে, তিনি এপ্রতিবেদককে দুঃখ করে বলছিলেন, এমন বেপরোয়া লোডশেডিংয়ের কারনে চরম লচে পড়ে যাচ্ছি। কারন বিদ্যুৎ ঠিকমতো না থাকায় সময়মতো কাঠ পাঠাতে পারছিনা ফ্যাক্টরিতে। ফলে ফ্যাক্টরি মালিকরা এখন ঠিকমতো ফোনও রিসিব করছে না, টাকাও দিচ্ছে না। অপরিকল্পিত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করছে। ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ এর কোটচাঁদপুরের আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ সাহিদুজ্জামান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের প্রাপ্যতা/সরবরাহ ছিল, ফলে সে সময় লোডশেডিং হতোনা। বর্তমানে পাওয়ার প্লান্ট একটি বসে যাওয়া, কৃষকরা ধান রোপণে মটর ব্যবহার, এবং অত্যাধিক গরমের কারণে গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। জেলা জুড়ে এভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে এবং ঘাটতি রয়েছে। প্রচন্ড তাপদাহের সময় বিদ্যুতের চাহিদা ও প্রাপ্যতার মধ্যে সমন্বয় করতে হচ্ছে। ফলে তিনি, গ্রাহকগণকে ধৈর্য্য ধারণসহ লোডশেডিং এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। তবে এঅবস্থা দু চারদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে জানালেন, পল্লী বিদ্যুতের কোটচাঁদপুর সাব জোনাল এর এ জি এম অমলেশ সরকার।
No comments