এমপি আনার খুন নাকি নিখোঁজ, কী হবে এমপি পদের?
" হুসাইন কবীর সুজন "
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার কি আসলেই খুন হয়েছেন?এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে, গেলো কয়েকদিন ধরে ঢাকা এবং কলকাতার পুলিশ বারবার করে বলে আসছেন হত্যা করা হয়েছে আনোয়ারুল আজিমকে।
এরপর মরদেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলি ব্যাগে ভরে ফেলে দেয়া হয়েছে খালে। এমনকি ট্রলি ব্যাগে করে আনোয়ারুল আজিমের মরদেহের খণ্ডিত অংশ নিয়ে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ করেছে পুলিশ। তারপরেও তিনি খুন হোননি! এই প্রশ্নই তো উঠবে?কিছু প্রশ্নের অবতারণা করি। সেগুলোর উত্তর মিললে তারপর আসা যাবে আনোয়ারুল আজিমের খুন হওয়া নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলছি।
ভারতে গিয়ে চারদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার – এমন দাবি নিয়ে গোয়েন্দা কার্যালয়ে গেলেন তার মেয়ে। এই প্রথম গণমাধ্যমে এলো বিষয়টি। এরপর দুইদিন না কাটতেই গণমাধ্যমে পুলিশের বরাতে খবর খুন হয়েছেন আনার। বুধবার (২২ মে) কলকাতা এবং ঢাকার পুলিশ একযোগে জানালো এই খবর।
নড়েচড়ে বসলো পুরো দেশ। ভারত এবং সবখানেই হতভম্ব সবাই। শোকে স্তব্ধ আনারের পরিবার, স্বজন, ভক্ত সবাই। বুধবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পর কথা বললেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার। পরের দিন তিনি সংবাদ সম্মেলন করে তিনজনকে আনার খুনের দায়ে গ্রেফতারের কথা জানালেন। কিভাবে আনারকে খুন করা হয়েছে সেই বর্ণনাও তিনি গ্রেফতারকৃতদের বরাতে গণমাধ্যমকে জানালেন।
লোমহর্ষক সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা শুনে আপামর মানুষ শিউরে উঠলো। কিন্তু কখন, কিভাবে, কারা আনারকে হত্যা করলো সেটা একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বের করতে পারলেও হত্যার মোটিভ বা কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এদিকে কলকাতা পুলিশের বরাতে গণমাধ্যমে এলো স্বর্ণ চোরাচালানের দ্বন্দ্বে আনার খুন হয়েছেন। এরপরে তারাও খুনের কারণ সম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। হ্যাঁ, মানছি এ রকম একটা খুনের কারণ বের করা এতো সহজ নয়। কিন্তু তাহলে তো অনিবার্যভাবে এই প্রশ্নটাও আসবে, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে তোলার আগেই হত্যা রহস্যের পুরোটাই বের করা গেলো, কিন্তু কারণ বা মোটিভ বের করা যাচ্ছে না কেন?
আচ্ছা, কলকাতা পুলিশ বললো, আনার খুন হয়েছেন সঞ্জিভা গার্ডেনে। সেই ফ্ল্যাট থেকে আনারের রক্তমাখা কাপড় এবং জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। এখন এটা যে আনারের রক্ত সেটা প্রমাণ হয়েছে কোথায়? কীভাবে? এটা তো অন্য কারো রক্তও হতে পারে! কোনোরকম বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়াই তারা কীভাবে বললেন এটা আনোয়ারুল আজিম আনারের রক্ত? আদালতে কি টিকবে এসব কথা?
বলা হচ্ছে, আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ ৮০ টুকরো করে হলুদ মাখিয়ে খালে ফেলেছে হত্যাকারীরা। জিহাদকে নিয়ে দুইদিন ধরে খালে অভিযান চালাচ্ছে কলকাতার পুলিশ। টেলিভিশনগুলোর ফুটেজে বাগজোলা খাল যতোটুকু দেখা গেছে, শীর্ণ জলধারার এক প্রায় মৃত খাল বলে মনে হচ্ছে। এটা সাগরও নয়, নদীও নয় – যে স্রোতে ভেসে চলে যাবে খণ্ডিত মরদেহ। তবে কি জিহাদ বিভ্রান্ত করছে?
আনোয়ারের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার ট্রলি ব্যাগের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এই ব্যাগের ভেতর যে আসলেই আনোয়ারুল আজিমের মৃতদেহের খণ্ডিত অংশ আছে সেটা প্রমাণ করলো কে? সিসিটিভির ফুটেজে পুলিশ ব্যাগ নিয়ে যেতে দেখেছে। লাশ কিংবা লাশের অংশ সেটার মধ্যে আছে, নাকি অন্য কিছু আছে সেটা তো এখনো দেখেনি।
আরেকটি বিষয়। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ বললো, গ্রেফতারকৃতরা কিভাবে হত্যা করেছে সেই বর্ণনা দিয়েছে। কিন্তু এসব কথার কোনো আইনি মূল্য আছে? কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশের কাছে কী বললো না বললো সেটা ফোজদারি কার্যবিধিতে কোনো গুরুত্ব রাখে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আদালতের কাছে বলছে।
বলছি না, আনারকে হত্যা করা হয়নি। আবার যারা এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে তারাও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন, তাও বলছি না। শুধু বলতে চাইছি, পুরো বিষয়টাই এখনো প্রমাণ সাপেক্ষ।
আমাদের বিচার ব্যবস্থায় একটি কথা প্রচলিত আছে। কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ার পর তার আইনজীবীর সঙ্গে দেখা হওয়া আর না হওয়ার সময়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। পুলিশ হেফাজতে থেকে ভয়ে কিংবা নানা পারিপার্শ্বিক কারণে অনেক কথাই স্বীকার করেন আসামিরা। কিন্তু আদালতে গেলে সেসবের অনেক কিছুই উল্টে যায়।
আরেকটি প্রশ্ন। আনোয়ারুল আজিমের সংসদ সদস্য পদের কী হবে? সেটি কি শূন্য ঘোষণা করা যাবে? তিনি খুন হয়েছেন এই কারণ দেখিয়ে? তাহলে তো অনিবার্যভাবেই প্রশ্ন আসে, তিনি যে খুন হয়েছেন সেই প্রমাণ কোথায়? পুলিশের মুখের কথাই তো আর প্রমাণ হবে না!
No comments