কোটচাঁদপুরে সূর্যমুখী চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন খাইরুল হাসান ঝন্টু
রোকনুজ্জামান কোটচাঁদপুরঃ
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় কৃষি জমিতে নানা ধরনের ফসলের পাশাপাশি এখন জাইগা দখল করে নিচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। বিস্তীর্ণ জমিতে আবাদ হচ্ছে এই ফসল। উপজেলার এখন প্রায় জাইগাই দেখা যায় সূর্যমুখী ফুলের হলুদ রং এর ঝলকানি। এ যেন হলুদ ফুলের রাজ্য। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। সূর্যমুখী যেন সূর্যের দিকেই মুখ করে থাকে। সূর্যমুখী ফুল শুধু দেখতে রূপময় নয়, গুণেও অনন্য। একদিকে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার দৃশ্য, অন্যদিকে সূর্যমুখী ফুল তাকিয়ে থাকার দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম। তা ছাড়া প্রতিদিন দেখা যায় প্রজাপতির মেলা। প্রাকৃতিক এ অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুকছেন এখানকার কৃষকেরা।
উপজেলার বকশিপুর গ্রামের খাইরুল হাসান ঝন্টু জানান, সূর্যমুখী চাষটা অল্প খরজের মধ্যো করা যায়। আর বর্তমানে যে পরিমানে তেলের দাম এই জন্য আমি এবার সূর্যমুখী চাষ করেছি যাতে করে আমার সংসারে তেলের চাহিদাও পূরন হবে আবার এটা আমি বাজার যাত ও করতে পারবো। আমার ১০ কাটা জমিতে এই আবাদ করতে ২ হাজার টাকা মত খরজ হয়ছে। আমি খরজের তুলনায় অধিক ফলন পাবো। বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মন হারে ফল পাবো বলে আশা করছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার রাজিবুল হাসান বলেন, উপজেলায় এবার সূর্যমুখী চাষ হয়েছে ১৬ হেক্টর জমিতে। কৃষকেরা বীজ সংগ্রহ করতে না পারায় চাষ কমছে, তবে এর উৎপাদনের দিক থেকে চিন্তা করলে কৃষকেরা ভালো উৎপাদন পেয়েছে।সূর্যমুখীর যে বীজের সরবরাহতা আমাদের দেশে ভালো জাতের যে বীজ টা এটা নাই। আমাদের সব হাইব্রিড বীজ। যেটা আমাদের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। বীজ যদি আমরা একবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে আবাদের গ্রহীতা বাড়বে। না হলে এটা কমবে। কারণ কৃষকতো বীজ টা সংগ্রহ করে রাখতে পারছেনা। হাইব্রিড বীজ এটা সংগ্রহ করে রাখা যায় না। এটা কোম্পানি তৈরী করে এবং সে অনুযায়ী তারা কৃষকের কাছে দেয়। এবং পরবর্তীতে তারা এটা চাষ করে।
তিনি আরো বলেন, সূর্যমুখী তেলটা অনেক ভালো। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো একটা তেল, চাহিদাও আছে। কিন্তু নিজের স্বল্পতার জন্য কৃষক এটার উৎপাদন মুখী হতে চাই না। এজন্য আমাদের গতবারের থেকে এবার আবাদ কমেগেছে। আমাদের যেমন গতবার উৎপাদন হয়েছে পার হেক্টরে ২.২৮ মেট্রিক টন। সূর্যমুখী চাষে কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে। যেমন বেশি হাইট হয় তাহলে ঝড় হলে ভেঙ্গে পড়ে যায়। আবার পাখিদেরও একটা উপদ্রব আছে। আলাদা একটা টেককেয়ারের বিষয় আছে। বিভিন্ন জায়গায় সূর্যমুখীর ভাঙ্গানোর যে ঘানি এটা আমরা বলি এটা শুধু সূর্যমুখী ভাঙ্গানো এরকম ঘানি কিন্তু আমাদের এখানে নাই। সরিষার ঘানিতে সূর্যমুখীটা ভাঙ্গানো হয়। কোটচাঁদপুরের পেক্ষাপটে আরও কিছু বিষয় আছে। যেমন ড্রাগন ফলের আবাদ ও বাড়ছে। এই কারণে কিছু কিছু জায়গায় কৃষকরা যেখানে বেশি লাভ পাচ্ছে সেই সব ফসলের দিকে ঝুকে যাচ্ছে।
সূর্যমুখী চাষ করে একদিকে যেমন কৃষকেরা লাভোবান হচ্ছেন তেমনি সংসারের নিজেদের তেলের চাহিদা ও পূরন হচ্ছে। তবে বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারলে এর চাহিদা আরো বাড়বে বলে মনে করেন চাষিরা।
No comments