আগাম জামিন পেয়ে হুমকি দিচ্ছে শৈলকুপার ইউপি মেম্বার রিপন হত্যা মামলার আসামিরা // নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের মিনগ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান রিপন নিহত হওয়ার পর তার পরিবার, স্বজন ও সমর্থকরা নতুন করে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন। নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে তারা সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাবিবুর রহমান রিপন প্রতিপক্ষের লোকদের পিটুনি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত এবং তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর ভাংচুর এবং লুটের ঘটনার পরও ওই ইউনিয়নের মিনগ্রামের সাধারন মানুষের মন থেকে ভয় যাচ্ছে না। রিপনের পরিবারের সদস্য ও কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত জানান, আসামীপক্ষের বেশ কয়েকজন উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেবার পর এলাকায় ফিরে আসার আগেই বাদীপক্ষের লোকদের টেলিফোন ও অন্যান্য মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে, শাসিয়ে দিচ্ছে আবার দেখে নেবার। ফলে উপায়ান্তর না পেয়ে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আবার থানায় সাধারন ডায়েরি করেছেন তারা ও তাদের সমর্থকদের নিরাপত্তার জন্য। গ্রামে নতুন করে সহিংসতা না ঘটে, সেজন্য গ্রাম এবং আশেপাশের গ্রামে পুৃলিশ মোতায়েন করা হলেও শংকায় দিন কাটছে নিহত ও আহতদের পরিবার, তাদের স্বজন এবং সমর্থকদের।
১৫ অক্টোবর রোববার গভীর রাতে হাবিবুর রহমান রিপন (৪৫) নামের ইউপি সদস্যকে উপজেলার আবাইপুর-মীনগ্রাম সড়কে হাতুড়ি ও দা দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয় তার দুই সহযোগি আমিনুর কাজী ও আরেকজনকে। রিপন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেবার পরপরই মারা যান। আবাইপুর ইউপি’র ওয়ার্ড সদস্যের পাশাপাশি রিপন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শতবর্ষী হেডমাস্টার আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালাম মাস্টারের ছোট ছেলে রিপন বাবার মতই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত হয়ে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হতে চেয়েছিলেন আর সেটাই তার জন্য কাল হয়ে দেখা দেয় বলে জানান রিপনের বাবা। আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের পরবর্তী নির্বাচনে রিপন বর্তমাণ চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী মুক্তার আহমেদ মৃধার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বলে এলাকাবাসি জানান।
এ হত্যাকান্ডের বদলা নিতে হত্যাকারিদের সমর্থকদের ৬-৭টি বাড়িতে হামলা বা ভাংচুরের ঘটনা ঘটলেও নিহতদের সমর্থক ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাংচুর লুটপাটের চিহ্ন বিদ্যমান। মিনগ্রামের শহিদুল জর্দার, লুৎফর শেখ, রিপন শেখ, মোসলেম বিশ্বাস, ছত্তার শেখ, কামরুল ইসলাম, ওমর শেখ ও আব্দুল কুদ্দুসসহ বেশ ক’জন গ্রামবাসির সাথে আলাপ করলে তারা একবাক্যে জানান, হামলাকারিরা রিপনদের ওপর হামলার পরপরই রিপনদের সমর্থক বাবুল মিয়া, রেজাউল মিয়া, হিবাদুল শেখ, শহিদুল, সিরাজ শেখ, রিপন শেখ, পলাশসহ কমপক্ষে ৪০টি বাড়ি ও দোকানে লুটতরাজ চালায়।
বয়োবৃদ্ধ শহিদুল জর্দার, লুৎফর শেখ, মোসলেম বিশ্বাস, ছত্তার শেখ ও ওমর শেখ জানালেন, এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মুক্তার আহমেদ মৃধার সাথে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ রিপনের বাবা আবুল কালাম আজাদ মাষ্টারের। তিনি বর্তমাণ জাতীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই-এর গোড়া সমর্থক। অন্যদিকে স্থানীয় ওই নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইদানিং হাত মিলেয়েছেন বর্তমাণ ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রুপের সাথে। ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে নির্বাচিত ওয়ার্ড সদস্য হাবিবুর রহমান রিপনকে বঞ্চিত করায় দ্বন্দ প্রকাশ্যে রুপ নেয় যা রিপনকে হত্যার মধ্য দিয়ে কিছুটা প্রতীয়মান হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ ঠাকুরদাস মন্ডলের সাথে আলাপ করলে তিনি জানালেন, নিহত রিপনের পরিবারের পক্ষে জনৈক আতিকুর রহমান ওই পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে ২৫ অক্টোবর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেছেন। এর আগে এ হত্যা ও হামলার বিষয়ে ঘটনার তিনদিন পর ৩২ জনের নামে মামলা হয়েছে।
No comments