চিকিৎসক ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ বিভিন্ন সংকট কালীগঞ্জ হাসপাতালে ২ বছরেও চালু হলো না এক্সরে মেশিন
এম শাহজাহান আলী সাজু-
হাসপাতালে এক যুগেরও অধিক সময় ধরে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনচালু নেই। যে কারনে পড়ে থেকেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মুল্যবান এ যন্ত্রটি। ২ বছর আগে নতুন এক্সরে মেশিন আসলে মাত্র ২ দিন চলে সেটিও অদ্যবধি বিকল হয়ে পড়ে আছে। চালু নেই জেনারেটর মেশিনও। ফলে লোডশেডিং বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন সময়ে বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীদের নির্ভর করতে হচ্ছে দোকানের কেনা মোমবাতির উপর। আবার পুরাতন ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হচ্ছেন রোগীরা। কর্তৃপক্ষ খসে পড়া পলেস্তারোর স্থানে পুটিং ও রঙ করে সেখানেই চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন অবস্থায় দীর্ঘদিনের ভবনটির পলেস্তারো ভিতর থেকে ফুলে ফেঁপে উঠছে। আবার কখন জানি কি হয় অবস্থা। হাসপাতালটিতে মোট ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১২ জন। এরমধ্যে আবার ২ জন আছে বুনিয়াদি প্রশিক্ষনে। এছাড়াও প্রায়ই সরকারী নানা কর্মসূচীতেও দু একজনকে গিয়ে হাসপাতালের প্রতিনিধিত্ব করতে হয়। ফলে গড়ে ৮-৯ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে রোগীর চাপের ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের হাসপাতালটি। এদিকে রোগীদের অভিযোগ, একটি উপজেলা হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় মোট ১১ জন কনসালট্যান্ট থাকার কথা থাকলেও স্কিন ও এ্যানয়েস্তেশিয়া ছাড়া অতি প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল, গাইনী,
মেডিসিন, শিশুসহ গুরুত্বপূর্ণ রোগের চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। যে কারনে তারা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দেয়া চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে একটু জটিল রোগে আক্রান্ত হলেই বাধ্য হয়ে রোগীদেরকে যেতে হচ্ছে ব্যয়বহুল যশোর অথবা দুরের চিকিসকদের কাছে। এভাবেই চলছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জবাসীর চিকিৎসা সেবা।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এক্সরে কক্ষে নতুন মেশিন স্থাপন করা হলেও কক্ষটি তালাবদ্ধ। একইভাবে জনবল সংকটে এক পাশে অকেজো হয়ে পড়ে আছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটিও। সে সময়ে নজরে পড়ে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত এক যুবক বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার হতে পা প্লাস্টার করে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকছেন। ভিতরে মাত্র ৫/৬ জন চিকিৎসক বহিঃ বিভাগের রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান অফিসসূত্রে জানাগেছে, হাসপাতালটিতে আগের এক্সরে মেশিনটি নষ্ট থাকায় এই সেবাটি বন্ধ ছিল। গত দুই বছর আগে সরকারীভাবে নতুন এক্সরে মেশিন এসেছে। কিন্তু মাত্র ২ দিন পর থেকে সেটিও বিকল হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় আহত হাত বা পা ভাঙা রোগীকে পশ্ববর্তী ডায়াগনষ্টিক সেন্টার বা অন্যত্র রেফার্ড করাহয়। জনবল সংকটে নষ্ট অবস্থায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। জেনারেটর মেশিনটিও নষ্ট। যা দ্রুত পেতে চাহিদা দেয়া হয়েছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের রিপোর্টতো দেয়া আছেই। সম্প্রতি দুর্ঘটনায় আহত উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার ফয়সাল ইসলাম জানান, তিনি সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। এ সময় হাসপাতালের এক্সরে মেশিন নষ্ট হওয়ায় অন্য ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে রিপোর্ট করাতে গিয়ে আমাকে খুব বেগ পেতে হয়। এছাড়াও রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের রোগীদের সেবা দেওয়া হয় পুরাতন ভবনে। ছাদের পলেস্তারা খসে আহত হচ্ছেন রোগী ও স্বজনেরা। ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মহিলা ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্তারা খসে আহত হন রোগী স্বজনসহ ৩ জন। এরমধ্যে গুরুত্বর আহত হন সুমি খাতুন ও ফুলজান বেগম। ফুলজান বেগমের ডান পায়ে ২০টি সেলাই দেওয়া হয়। আর সুমি খাতুনকে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেই ভবন পুটিং ও রঙের আল্পনায় করা হয়েছে চকচকা। সেখানেই রোগী ভর্তি করে ঝুঁকি মাথায় নিয়েই চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে। এ ঘটনা জানাজানির পর থেকেই যারা এখন ভর্তি থাকেন সব সময় তারা ভয়ে থাকেন। এদিকে তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সটি এখন আর জেলার বাইরে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। গাইনি, শিশু, মেডিসিন ও সার্জারী কনসালট্যান্ট নেই। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। কোহিনুর বেগম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তিনি গত কাল হাসপাতালে তার স্বজনকে ভর্তি করেছিলেন। রাতে মাত্র ১ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল। এদিকে রোগীকে রেখে মোমবাতি কিনতে যেতে পারেননি তিনি। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং চলাকালীন গোটা সময় অন্ধকারেই থাকতে হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর হোসেন জানান, নতুন এক্সরে মেশিন স্থাপন করা হলেও চালু করা সম্ভব হয়নি। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটিও জনবল সংকটে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। জেনারেটরটিরও একই অবস্থা। এছাড়াও নতুন ভবন নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে রোগীদের কল্যানে দ্রুত এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালু করার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
No comments