বাসর রাতে স্ত্রী বিধবা
মেহেদী রাঙানো হাতে স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ নববধূ ফাতেমা খাতুন। বাসর রাতে স্বামী লিটন আলি তার হাতে সোনার বালা পরানোর সময় হঠাৎ করেই যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন লিটন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিটন আলির মৃত্যু হয়।
গত শনিবার বাদ মাগরিব জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
লিটন আলি (৪৩) চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মৃত শুকুর আলির ছেলে। তিনি পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার ধোপাবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। শুক্রবার ঝিনাইদহ জেলার গান্না ইউনিয়নের কালুহাটি ঘোপপাড়া গ্রামের সোলায়মান হকের মেয়ে ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর বাসর রাতে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লিটন আলির প্রথম স্ত্রী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার প্রথম সংসারে লামিয়া খাতুন নামে একটি ৯ বছরের মেয়ে রয়েছে। প্রথম স্ত্রী মৃত্যুর আড়াই মাস পরে লিটন আলি গত শুক্রবার ফাতেমা খাতুনকে বিয়ে করেন। বাসর রাতে প্রথম স্ত্রীর রেখে যাওয়া সোনার বালাটি দ্বিতীয় স্ত্রীর হাতে পরানোর সময় হঠাৎ অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে তার অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করলে এর কিছুক্ষণ পরই লিটন আলি মারা যান।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হাসানুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে ৯টার পর পরিবারের সদস্যরা লিটন আলিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাদের বর্ণনা শুনে প্রাথমিকভাবে ব্রেইন স্টোক মনে হয়েছিল। ইসিজি রিপোর্টের পর দেখা যায় তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা কিংবা রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এর এক ঘণ্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
হঠাৎ স্বামীর মৃত্যুতে নববধূর নতুন সংসার গড়ার স্বপ্ন যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। হৃদয় বিদারক এই মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের কেউ। ৯ বছরের মেয়ে আর নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সংসারের স্বপ্ন যেন অপূর্ণ রয়ে গেল লিটন আলির।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন চাঁন বলেন, লিটন আমার ভাতিজা। পরিবারটির ওপর দিয়ে একের পর এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মা মরা মেয়েটি তার বাবাকে হারিয়ে একেবারে অসহায় হয়ে পড়ল। নিয়তির ওপরে তো কারো হাত নেই। তবে এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য খুব কম দেখা যায়। বাসর রাতেই স্ত্রী বিধবা। খুবই কষ্টদায়ক ঘটনা। একমাত্র মেয়ে লামিয়া খাতুন (৯) প্রথমে মাকে ও পরে বাবাকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছে। পৃথিবীতে আপন বলতে আর কেউ রইল না তার। গত শনিবার বাদ মাগরিব জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
No comments