কালীগঞ্জে প্রতিবন্ধী নারী ও শিশু সন্তানের সংগ্রামী জীবন
জন্ম থেকে দুইটি পা নেই প্রতিবন্ধি স্বাক্ষী খাতুনের। উচ্চতা মাত্র ২৭ ইঞ্চি। দুইটি হাত দিয়ে চলা-ফেরা তার। প্রযোজনীয় সব কাজ নিজেই করে থাকেন। উচ্চতায় কম তাছাড়া প্রতিবন্ধি হওয়ায় বিয়ে দিতে বেগ পেতে হয়েছে পরিবারের। শেষমেশ বিয়েও জোটেছে তার। বিয়ের পরেও দরিদ্র কৃষক পিতার সংসারে বোঝা হয়ে আছেন তিনি। আর এই সংসারে তার শিশু সন্তান বোঝার পাল্লাটাকে যেনো আরো ভারি করেছে। যে কারণে নিজের জীবনের অনাগত দিনগুলো কথা চিন্তা করতেই কপালে ভেসে ওঠে চিন্তার ভাঁজ। সমাজের কাছেও প্রতিবন্ধী এই নারী যেনো বোঝা। কেউ খোজ রাখে নি তার। একটিমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড ছাড়া আর কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতাও মেলেনি কপালে। তাই অনিশ্চয়তা, শংশয় ও সংকটে কাটছে প্রতিবন্ধী এই নারীর জীবন।
স্বাক্ষী খাতুন (৩৭) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা উল্লা গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে। গত ৮ বছর আগে বিয়ে হয় পাশের কোলা ইউনিয়নে দৌলতপুর গ্রামের মৃত জামাত আলীর ছেলে গাছ কাটা শ্রমিক আখের আলীর সাথে। দীর্ঘদিন ঘরসংসারের পর স্বাক্ষী খাতুন গর্ভবর্তী হন। গত তিন মাস আগে কোল জুড়ে আসেছে ফুট ফুটে কন্যা সন্তান।
স্বাক্ষী খাতুন জানান, ৪ বোন ৩ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় আমি। বিবাহিত হয়েও বাপের সংসারে বোঝা হয়ে আছি। তিনি জানান, স্বামীর আগের পক্ষের স্ত্রী-সন্তান থাকায় তেমন একটা খোজখবর নেন না তার। কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার পরও কোন খরচা-পাতি দেন না তিনি। খুবই কষ্টে দিন পার হয় তার। দরিদ্র পিতার ঘরে ও স্বামীর কাছে আর বোঝা হয়ে থাকতে মন চান না। তিনি আরো জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও অনেকে তো কাজ করছেন। আমিও তাদের মতো কিছু করতে চাই। আর এর জন্য প্রয়োজন সহযোগিতার। আমার শিশু সন্তানকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
সাক্ষী খাতুনের পিতা নুরুল ইসলাম জানান, অভাব অনটনের সংসারে আমার এই প্রতিবন্ধী মেয়ে ও তার শিশু সন্তানকে নিয়ে আমরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। সরকার যদি আমার এই মেয়ের দিকে একটু তাকাত তাহলে ওদের জীবনটা সহজ হতো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান জানান, খোজ খবর নিয়ে তাকে সরকারি কি কি সুবিধা দেওয়া যায় সেটা দেখব। তিনি সাক্ষী খাতুনের নাম মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবেন বলেও জানান।
No comments