৪০ দিনেও আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ, উল্টা আসামীর মিথ্যা হুমকির অভিযোগে থানায় শালিশি বৈঠক,পুলিশ জানেনা অভিযোগকারী এজাহার ভূক্ত আসামী
চলছে দুই পক্ষে সালিশি বৈঠক। উভয় পক্ষে অভিযোগ শুনছেন মধ্যস্থতাকারী পুলিশ কর্মকর্তা। চলছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা তর্ক-বিতর্ক। এরই মধ্যে একজন বললেন স্যার অভিযোগকারী এজাহার ভূক্ত আসামী। তার নামে মামলা হয়েছে। একথা শুনামাত্রই পুলিশ কর্মকর্তা হতভম্ভ হয়ে শালিশি মোড় অন্য দিকে ঘুরে যায়। ঘটনাটি শনিবার সকাল ১১টার সময় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানা চত্তরের।
জানা গেছে, মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছেন কালীগঞ্জ শহরের আড়পাড়া গ্রামের সরোয়ার খন্দকারের ছেলে সুমন(২৯)। গত ২৭ নভেম্বর’২২ তারিখে বিজ্ঞ মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ বিশেষ ট্রাইবুনাল ঝিনাইদহ আদালতে মামলাটি করেন প্রতারক উপজেলা বড় শিমলা গ্রামের হবি বিশ^াস(৫২)এর বিরুদ্ধে। গত ১লা ডিসেম্বর’২২ তারিখে নালিশী দরখাস্তটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা রুজু করে তদন্ত করার জন্য অফিসার ইনচার্জ কালীগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত ঝিনাইদহ। সে মোতাবেক গত ১৩ই ডিসেম্বর বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত হইয়া মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মমলাটি রুজু করেন কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো : আব্দুর রহিম মোল্লা। মামলা নং ০৮, তারিখ ১৩-১২-২০২২ ইং। মামলা রুজু হওয়ার ৪০ দিন পার হলেও এজাহার ভুক্ত আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো এজাহার ভূক্ত আসামীর মিথ্যা অভিযোগে থানায় উভয় পক্ষকে নিয়ে শালিশি বৈঠক করলেও মধ্যস্থতাকারী পুলিশের উপ-পরিদর্শক জানেনা অভিযোগকারী এজাহার ভূক্ত আসামী। শালিশি বৈঠক চলাকালী এক পর্যায়ে মধ্যস্থতাকারী পুলিশের উপ-পরিদর্শক জানতে পারেন অভিযোগকারী একজন এজাহার ভূক্ত আসামী। একথা শুনামাত্রই পুলিশ কর্মকর্তা হতভম্ভ হয়ে শালিশি মোড় অন্য দিকে ঘুরে যায়। তাৎক্ষনিক ভাবে উভয় পক্ষকে থানা থেকে চলে যাওয়র নির্দেশ দেন এই পুলিশের কর্মকর্তা।
এবিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হরিদাস রায় জানান, মামলা হলেই যেকাউকে গ্রেফতার করা যায়না। উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশে মামলা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
৪০ দিন আগে রুজু করা মামলার আসামী গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো : আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, এটা তদন্তের ব্যাপার। একজন এজাহার ভূক্ত আসামী কি বাদীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে পারে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অভিযোগ অন্য কারো মাধ্যমে দিতে পারে। তবে বিষয়টি কি হয়েছে আমি দেখচ্ছি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, বাদী সুমনকে ভাল বেতনে বৈধ ফ্রি ভিসায় অভিযুক্ত উপজেলার বড় শিমলা গ্রামের হবি বিশ^াস তাহার আতœীয়ের মাধ্যমে সৌদি আরব দেশে ৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পাঠাই। বাদীর পিতা কাশিপুর গ্রামের তাহার তৈত্রিক শেষ সম্বল যাহা ৪শতক জমিতে ২ রুম বিশিষ্ট একতলা বসত বাড়িটি ৬ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করে অভিযুক্ত হবি বিশ^াসকে স্বাক্ষীগণের সমনে গত ০২-০৪-২০২২ ইং তারিখে প্রদান করলে আসমী নিজ দায়িত্বে বাদীকে সৌদি আরব দেশে পাঠাইয়া দেন। বাদী সৌদি আরব বিমান বন্দরে পৌছানোর পর ওই দেশে দালাল বাদীকে নির্জন একটি বাড়ীর কক্ষে কয়েকদিন আটকে রাখে এবং বাদীর পাসপোর্ট ভিসাসহ অন্যান্য কাগজ পত্র কাড়িয়া লয়। কয়েকদিন পর সৌদি দালাল বাদীকে আরো এক লক্ষ টাকার দাবী করেন। বাদী নিরুপায় হয়ে আসামী হবি বিশ^াসের সাথে যোগাযোগ করে আরো এক লক্ষ টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে ঐ সৌদির দালাল এক নির্জন স্থানে ছেড়ে দেন। কিছুদিন অবৈধ ভাবে কাজ করার পর বাদী সুমন গত ১৬-০৯-২০২২ ইং তারিখে দেশে ফিরতে বাধ্য হন। আসামী হবি বিশ^াসকে স্থানীয় ব্যাক্তি বর্গের একাধীবার সালিশ বৈঠক করার চেষ্টা করলেও আসামী হবি বিশ^াস শালিশ বৈঠকে হাজির হতে অস্বীকার করেন। এঘটনায় গত ২০-১১-২০২২ ইং তারিখে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ আদালতে যাবার পরমর্শ দেয়। সেকারণে বাদী গত ২৭-১১-২০২২ ইং তারিখে সুবিচার পাওয়ার জন্য বিজ্ঞ মানব পাচার অপরাধ দমন ও প্রতিরোধ বিশেষ ট্রাইবুনালে মামলা করলে গত ১৩ই ডিসেম্বর বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে প্রাপ্ত হইয়া মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মমলাটি রুজু করেন কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো : আব্দুর রহিম মোল্লা। মামলা রুজু হওয়ার ৪০ দিন পার হলেও এজাহার ভুক্ত আসামী হবি বিশ্বাসকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
No comments