বোর্ড পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়নে জবাবদিহিতা ও পূনঃ মূল্যায়ন দরকার।

 এম.এ. কাদের

পরীক্ষার্থীর খাতা অবমূল্যায়নে প্রতি বছর কত শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হচ্ছে তার হিসাব নেই। এমনকি অনেকের জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে পরীক্ষার খাতা, এমনকি সরকার নিয়ন্ত্রিত বোর্ড পরীক্ষার খাতাও (এসএসসি ও এইচএসসি) অবমূল্যায়ন হয়ে থাকে। চলতি বছরে সারা দেশে ১১টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে  গত ১৫ই সেপ্টেম্বর প্রায় ২০ লক্ষ ২১ হাজার ৮ শত ৬৮ জন শিক্ষার্থী এস, এস, সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। অনেক শিক্ষার্থী ভাল ফলাফলের জন্য রাতদিন পড়াশুনা করে ভাল পরীক্ষা দেওয়ার পরেও খাতা অবমূল্যায়নের ভয়ে উদ্বিগ্নতায় দিন কাটায়, তাদের খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন হবে কিনা?

শিক্ষার্থীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এসএসসি, এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষার খাতা বিভিন্ন কারণে অবমূল্যায়ন হয়ে থাকে। যেমন, অদক্ষ পরীক্ষক দ্বারা খাতা মূল্যায়ন, সঠিক নিরীক্ষণ না করা, পরীক্ষক কর্তৃক নিজ হাতে খাতা মূল্যায়ন না করা, স্বল্প সময়ে অধিক খাতা মূল্যায়ন, পরীক্ষার উত্তরপত্র ভালোভাবে না পড়ে অনুমানের ওপর নম্বর দেয়া, খাতা মূল্যায়নের সময় পারিবারিক বা অন্য কাজে মনোযোগ দেয়া, খাতা মূল্যায়নের সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারি না থাকা, পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ না থাকা, দুর্বল শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভালো শিক্ষার্থীর খাতা মিশে যাওয়া, পরীক্ষার মূল খাতার সঙ্গে লুজ শিট সুতা দিয়ে সেলাই না করে পিন মারা, খাতা অবমূল্যায়নে শাস্তির বিধান না থাকা, শিক্ষার্থীর খাতা পুনঃমূল্যায়নের (কল) সহজ পন্থা না থাকা, পরীক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন না করা ইত্যাদি।

একজন শিক্ষার্থী নার্সারি-প্লে ক্লাস থেকে শুরু করে ১২ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। তার এই ১২ বছরের প্রতি মিনিটের সুফল নির্ভর করে পরীক্ষার ফলাফলের ওপর। কিন্তু কোনো কারণে পরীক্ষকের অবহেলা, গাফিলতি বা সঠিক নিয়ম না মানার কারণে পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়ন হলে ওই শিক্ষার্থীর যে ক্ষতি হয় সেটা কোনোভাবেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। কাজেই যেনতেনভাবে খাতা মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই। কোনোভাবেই অদক্ষ পরীক্ষককে খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব দেয়া যাবে না। কমপক্ষে ১০ বছর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকা বাঞ্ছনীয়।

খাতা মূল্যায়নের জন্য বোর্ড থেকে বণ্টনের পর পরীক্ষকদের ওপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় পরীক্ষক দায়বদ্ধতা হারায়। অবশ্যই তদারকি ও যোগাযোগের মাধ্যমে বিষয়টি মাঝে মধ্যে স্মরণ করে দিতে হবে। শিক্ষার্থীর পরীক্ষার সিট প্ল্যানের কারণে অধিক দুর্বল শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভালো পরীক্ষার্থীর খাতা মিশে গিয়ে খাতা অবমূল্যায়ন হতে পারে। এজন্য প্রতিটি খাতার প্রতিটি লাইন পড়ে মূল্যায়ন করতে হবে। কোনোভাবেই মনে করা যাবে না বান্ডিলের সব খাতাই দুর্বল শিক্ষার্থীর।

শিক্ষার্থীর খাতা পুনঃমূল্যায়নের জন্য সহজ শর্তে পূনঃমূল্যায়নের ক্ষেত্রে শুধু নম্বর যোগ দিয়ে নয়, প্রথম মূল্যায়িত নম্বর লিখে রেখে খাতায় দেয়া প্রতিটি নম্বর ফ্লুইড দিয়ে মুছে পুনরায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দায়িত্বে মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে হবে। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর পুনঃমূল্যায়নেও অভিযোগ থাকলে প্রয়োজনে দ্বিগুণ ফি জমা নিয়ে তার উপস্থিতিতে বুঝিয়ে দিতে হবে। বর্তমানে পরীক্ষককে একটি খাতা মূল্যায়নের জন্য মাত্র ২৫ টাকা দেয়া হয়। এটা একেবারেই অপ্রতুল। অবশ্যই প্রতিটি খাতা মূল্যায়নের জন্য পারিশ্রমিক যুক্তিসঙ্গতভাবে বাড়াতে হবে এবং অভিজ্ঞ পরীক্ষকদের অধিক মূল্যায়ন করতে হবে।

পরীক্ষকের অবহেলা-অনিয়মে কারও উত্তরপত্র যদি অবমূল্যায়িত হয়, তাহলে ওই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সান্তনা পাওয়ার আর কিছুই থাকে না। অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পরিশ্রম সার্থক বলে প্রমাণ করতে হবে এবং উচ্চশিক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ জোগাতে হবে।


সাংবাদিক ও কলামিষ্ট 

B‡gBjt makader958@gmail.com


No comments

Powered by Blogger.