জমিসরকারি, বাগান বাড়ি বানাচ্ছেন প্রভাবশালী দখলদার
জমি সরকারের, দখলে আছে দখলদার। সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলে সেই জমিতে পাঁকা ভবন তৈরী করছেন প্রভাবশালী ওই দখলদার। ইতিমধ্যে ভবনের ছাদ দেওয়ার কাজ শেষ করেছেন। ভেতরে চলছে নতুন নতুন স্থাপনা। তৈরী করা হচ্ছে বাগান বাড়ি। সরকারের অর্ধকোটি টাকা মুল্যের এই ৪৩ শতক জমি বে-দখল হতে চলেছে। ঘটনাটি ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের। দখলদার একই গ্রামের ফয়জুর রহমান চৌধুরী ওরফে সাবলু চৌধুরী।
স্থানীয়রা বলছেন, গ্রামের কয়েকজন হতদরিদ্র মানুষ এক সময় ওই জমিতে থাকার জন্য কয়েকজন ভুমিহীন বেড়ার ঘর উঠাতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সরকারের লোকজন উঠাতে দেয়নি। এখন প্রভাবশালী ব্যক্তি দখলকরায় সরকারি কর্মকর্তারা হাত-পাঁ গুটিয়ে ফেলেছেন। গ্রামবাসি বলছেন, তারা লিখিত অভিযোগ দিলেও কর্মকর্তারা নাম মাত্র পরিদর্শন করেছেন। দখল উচ্ছেদের কোনো পদক্ষেপ নেননি। ফলে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে প্রভাবশালীর দখলদারের এই বাগান বাড়ি।
প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামে এক সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিত্তশালী ব্যক্তিরা বসবাস করতেন। তাদেরই একজন ছিলেন লক্ষন প্রামানিক। গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আরজ আলী জানান, ৪৭ সালের পর তাদের এলাকার অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে চলে যান। লক্ষন প্রামানিকও স্ব-পরিবাওে ভারতে চলে গিয়েছেন। যাবার সময় বেশকিছু জায়গা জমি ফেলে রেখে যান, যা পরবর্তীতে ভিপি তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভালাইপুর-সুন্দরপুর সড়কের ধারের ১৩৫ নম্বর সুন্দরপুর মৌজার আর.এস ১/১ খতিয়ানের ২৯৯ দাগের ৪৩ শতক জমি। এই জমি সরকারের হয়ে যায়, তবে সরকারের দখলে যায়নি। সরকার কখনও জমি দখল নিতে আসেননি। দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকার পর গ্রামের দরিদ্র মানুষ জমিতে চাষাবাদ করার চেষ্টা করেছিলেন। তখন সরকারের ভুমি অফিসের লোকজন জমিতে কাউকে না যাবার জন্য নির্দেশ দেন। গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম (সেই সময়ের ভুমিহীন) জানান, তার যখন মাথা গোজার মতো কোনো জায়গা ছিল না, তখনও এই জমিতে ঘর বরে বসবাস করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ভুমি অফিসের লোকজন করতে দেয়নি। এভাবে জমিটি সরকারের ঘরেই দীর্ঘদিন পড়েছিল। সেখানে বড় বড় মেহগুনি, কড়ই গাছ ছিল।
গ্রামের বাসিন্দা ডিটল চৌধুরী জানান, প্রায় ১৩-১৪ বছর হলো তাদের গ্রামের প্রভাবশালী ফয়জুর রহমান চৌধুরী জায়গাটি দখলে নেন। প্রথমদিকে সেখানে নানা চাষাবাদ শুরু করেন। একটি সময় সীমানা প্রাচীর দেন। প্রাচীরের মধ্যে টিনের চালা তৈরী করেন। আর বর্তমানে ওই প্রাচীরের মধ্যে অনেকটা জায়গা জুড়ে পাঁকা ভবন তৈরী করছেন। গ্রামবাসি আরো জানান, এর সবগুলোতেই তারা প্রতিবাদ করেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সরকারি কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে সবগুলো বিষয় অবগত করেছেন, কিন্তু তারা দেখেন নি। সর্বশেষ দখলদার প্রাচীরের মধ্যে পাঁকা ভবন তৈরী শুরু করেন। বাইরে থেকে যা দেখা বা বোঝার উপায় ছিল না। ভবনের গাঁথুনি উচুতে উঠে যাবার পর তারা বুঝতে পারেন। এরপর তারা গত ১২ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছেন। মহেশপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবর এই অভিযোগ দেন এবং দ্রুত কাজ বন্ধ সহ পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানান। তারপরও ১৪ সেপ্টেম্বর ভবনের ছাদ ঢালাই এর কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন প্লাস্টারের কাজ চলছে। ডিটল চৌধুরী জানান, তারা অভিযোগ দেওয়ার পর স্থানীয় এসবিকে ইউনিয়নের ভুমি কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন, কিন্তু কাজ বন্ধ হয়নি। উল্টো কাজের গতি বেড়েছে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন জানান, ১৩৫ নম্বর সুন্দরপুর মৌজার ২৯৯ দাগের ৪৩ শতক জমি সরকারের। এখানে কোনো ব্যক্তির পাঁকা ঘর নির্মানের কোনো সুযোগ নেই। ফয়জুর রহমান চৌধুরী ঘর করছেন খবর পেয়ে তারা গিয়েছিলেন, কাজ না করার নির্দেশও দিয়েছেন। তারপরও কাজ করছেন। বিষয়টি তিনি সহকারী কমিশনার (ভুমি) কে অবহিত করেছেন। তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। আরিফ হোসেন আরো বলেন, ফয়জুর রহমানের দাবি এই জমি তার। এ বিষয়ে আদালতে একটি মামলাও করেছেন। কিন্তু মামলা করেই সরকারি জমি দখল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান ওই কর্মকর্তা। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কাজী আতিকুল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি এই মাত্র শুনলেন। খোজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন।
আলহাজ ফয়জুর রহমান চৌধুরী দাবি করেন জয়গাটি তার হিন্দুদেও নিকট থেকে ক্রয় করা। জায়গাটি প্রায় ৩০ বছর দখলে আছে। ইতিপূর্বে ফার্ম করেছিলেন, এখন বাগান বাড়ি মতো করছেন। পরিবারের সদস্যরা সব ঢাকায় থাকেন, তিনি একাই এখানে থাকেন। উল্লেখ এই বাগান বাড়ির আনুমানিক ৬ শত মিটার দূরে তার দুইতলা বাড়ি রয়েছে। যেখানে তিনি থাকেন না। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় একটি মহল তার সম্মান নষ্ট করতে এই অভিযোগ দিচ্ছে।
No comments