কুমার নদীর জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মানের অভিযোগে তত্ববাধায়ক সরকারের সময়ে ভেঙ্গে দেওয়া বিএনপি নেতার ‘ফাতেমা মার্কেট’ আবার দুইতলা হচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার-
কুমার নদীর জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মানের অভিযোগে ভেঙ্গে দেওয়া ‘ফাতেমা মার্কেটটি’ নতুন করে দুইতলা ভবনের নির্মান কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে পিলার উঠে গেছে, ছাদ ঢালাই এর প্রস্তুতি চলছে। মার্কেটের মালিক ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলা বিএনপি নেতা খলিলুর রহমান। তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকা কালে শহর বৃদ্ধির অজুহাতে কুমার নদীর ৭ একর জায়গা ভরাট করে সেখানে তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গোড়ে তোলেন। যার মধ্যে তার দখলে ফাতেমা মার্কেট সহ আরো বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে।
এলাকাবাসি বলছেন, তত্ববাধায়ক সরকারের সময়ে এই ফাতেমা মার্কেটের অর্ধেকাংশ সহ আরো বেশ কিছু দোকান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভেঙ্গে দেওয়া ঘরগুলো নতুন করে মেরামত করেন মালিকপক্ষ। ভেঙ্গে দেওয়া সেই ফাতেমা মার্কেটটি সম্প্রতি দুইতলা করার কাজ চলছে। এই মার্কেটে একতলাতে বড়-ছোট ১৭ টি দোকান রয়েছে। উপরে ব্যাংক, বীমা বা ক্লিনিক করা হবে বলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার চতুড়া গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমান প্রথম জীবনে জাসদ করতেন। এরশাদ সরকারের সময় শৈলকুপা আসন থেকে দবির উদ্দিন জোয়ার্দ্দার সাংসদ নির্বাচিত হলে তিনি গমের ডিলারী পান। ১৯৮৭ সালে গম আত্বসাতের অভিযোগে তিনি প্রায় ২ মাস কারাগারে ছিলেন। পরে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৯২ সালে নির্বাচনে তিনি বিএনপি’র টিকিটে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামীলীগ সরকারের সময় দেশের সবকটি পৌরসভায় নির্বাচন হলেও আইনী জটিলতায় শৈলকুপার প্যেরসভার নির্বাচন বন্ধ থাকে। দ্বিতীয়দফা বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি আবারো চেয়ারম্যান নির্বাচতি হন। বর্তমানে তিনি শৈলকুপা উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্বে আছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে খলিলুর রহমানের ফাতেমা মার্কেটের উপর তলার কাজ চলছে। দ্রুতগতিতে শ্রমিকরা কাজ করে যাচ্ছেন। মার্কেটের যে অংশটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল সেই অংশ ইতিপূর্বে মেরামত করে নেওয়া হয়েছে। সেখানে আবারো দোকান প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মার্কেটের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানান, মাত্র ৬ টি দোকান ছিল, বাকিগুলো ভাঙ্গ হয়েছিল। সেগুলো মেরামত করা হয়েছে অনেক পূর্বেই, এখন দুইতলা করার কাজ চলছে। একজন গার্মেন্টস মালিক জানান, তারা মোটা টাকা পজিশন দিয়ে ঘর নিয়েছেন। ১ হাজার থেকে ২৫ শত টাকা পর্যন্ত ভাড়া রয়েছে দোকানগুলোতে। এগুলো সবই সাবেক চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান নিচ্ছেন। শহর বৃদ্ধর কথা বলে নদীর জায়গা দখল করে সেখানে তিনি ব্যক্তিগত মার্কেট তৈরী করেছেন বলে তারা শুনেছেন।
কুমার নদীর জায়গায় ব্যবসা করেন এমন একাধিক দোকানী জানান, খলিলুর রহমানের দখল করা নদীর ৭ একর জমির মধ্যে কিছু অংশে ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে প্রতিষ্ঠা করেছেন ফাতেমা মার্কেট। মেয়ে ফাতেমার নামে প্রতিষ্ঠা করা ওই মার্কেটের উপরে গড়ে তুলেছিলেন বিলাস বহুল বাড়ি। যেখানে তিনি সববাস করতেন। খলিলুর রহমান একটি সময়ে দখল করা নদীর জায়গার মধ্যে ৪ একর ২৪ শতক জায়গা বরাদ্ধ পাবার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। যদিও তার সে আবেদন প্রত্যাক্ষান হয়েছে। বিগত সময়ে তত্ববাধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফাতেমা মার্কেটের আংশিক ভেঙ্গে দেওয়া হয়।
শহরের বাসিন্দা শওকত হোসেন জানান, খলিলুর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর প্রথমেই কুমার নদীর প্রায় ৭ একর জমি অবৈধ ভাবে দখল করেন। যে স্থান ২৪/২৫ ফুট গর্ত ছিল, নদীর শ্রোত চলতো। খলিলুর রহমান দোকান বসানোর লোভ দেখিয়ে নিজের পছন্দের কিছু লোক দিয়ে মাটি ভরাট করান। অথচ তিনি এই মাটি ভরাটের জন্য সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প এনে পৌরসভার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছিলেন। এছাড়া চেয়ারম্যান থাকা কালে খলিলুর রহমান ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালি উঠিয়ে পাড় ভরাট করছিলেন। এতে কুমার নদীর উপর থাকা সেতুটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এই বালি উঠানোর অভিযোগে দায়েরকরা মামলায় তার ৪ বছরের কারাদন্ডও হয়েছিল।
এ বিষয়ে খলিলুর রহমান এর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তার মার্কেটটি কবিরপুর মৌজায় ভেবে সেই সময়ে সরকারি লোকজন ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। কারন কবিরপুর মৌজা নদীর জায়গা। আসলে তিনি মার্কেট করেছেন শৈলকুপা মৌজায়। তিনি দাবি করেন, জায়গাটি এখন তার। সব কাগজপত্র আছে। যে কারনে তিনি মার্কেট করেছেন। অবশ্য শৈলকুপা উপজেলা সহকারী ভুমি কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীল জানান, তিনি সরেজমিনে মার্কেট নির্মান স্থান দেখতে গিয়েছিলেন। জায়গাটি নদী ও পেরিফেরিভুক্ত বাজারের জায়গা। তারপরও দখলকারী খলিলুর রহমান আদালত রায় সহ কিছু কাগজপত্র দেখাচ্ছেন। যার বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ ইতিমধ্যে আপিল করেছেন। তিনি আশা করছেন সরকারি জায়গা সরকারের অনুকুলে আসবে।
No comments