হারিয়ে যেতে বসেছে ভাবদিয়া বাওড়টি, সরকারি প্রায় ২৫০ বিঘা জমির সবটুকু ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে

 স্টাফ রিপোর্টার-

বিল-বাওড়ের তালিকা থেকে আরো একটি বাওড় হারিয়ে যেতে চলেছে। ভাবদিয়া নামের এই বাওড়টির অবস্থান ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে। নানা অজুহাতে বাওড়টির সরকারি প্রায় ২৫০ বিঘা বিল শ্রেণীর জমি দখলদাররা তাদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। এখন সরকারের পক্ষ থেকে মামলা করে দখল ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।  

অবশ্য স্থানীয়রা বলছেন এটা নামমাত্র মামলা। এর সঠিক তদ্বির নেই, নেই শক্ত প্রতিবাদ। উল্টো দখলদাররা যাতে তাদের দখলদারিত্ব বজায় রাখতে পারে সে বিষয়ে নানা অজুহাত দেখানো হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিল নিয়ে ঝামেলা আছে। ইতিপূর্বে ভুমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়ায় এই জটিলতা দেখা দিয়েছে।   

সরেজমিনে দেখা যায় বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের গাড়াপোতা আর ভাবদিয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে ভাবদিয়া বাওড়টি বয়ে গেছে। এস.এ রেকর্ডে বাওড়ে তিনটি দাগে রয়েছে ২৫২ একর ৭ শতক সরকারি জমি। বাওড়টি দিয়ে পাশ^বর্তী ৩২৬ টি মৌজার মাঠের পানি বড়বিল হয়ে কোদলা নদীতে নেমে যেতো। বর্তমানে বাওড়ে অর্ধশত বড় বড় পুকুর কাটা হয়েছে। সেখানে তারা মাছের চাষ করেন। এই পুকুর কাটার কারনে বর্ষা মৌসুমে মাঠের নামতে পারে না। ফলে কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে যায়। 

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ^াস জানান, ভবদিয়া বাওড়টি সরকারি। এই বাওড়ে সরকারি জমি এস.এ ও সিএস রেকর্ডে সরকারের ১ নম্বর খতিয়ানে ছিল। আর.এস রেকর্ডের ৭১ জনের নামে রেকর্ড হয়েছে। যা তাদের নজরে আসলে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেন। বর্তমানেও ৭১ টি মামলা চলছে। ব্যক্তি নামে রেকর্ড হওয়া জমির ছাপা পরচা এখনও তারা পাননি, পেলে বুঝতে পারবেন সরকারের জমি কতটুকু আছে। তবে তিনি দাবি করেন বাওড়ের জমি ব্যক্তি মালিকের যাওয়ার সুযোগ নেই। ইতিপূর্বে বন্দোবস্ত দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ওই  বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার জানান, অল্পদিনে বাওড়টি বে-দখল হয়ে গেল। বড় বড় পুকুর কেটে দুই গ্রামের মানুষ বাওড়ের জমি দখল করেছে। আনুমানিক ২৫ বছর জমিগুলোতে পুকুর কাটা হয়। গোটা বাওড়ের জমি দখলদারদের কবলে চলে গেছে। তিনি আরো জানান, দখলদাররা আর এস রেকর্ডের সময় সরকারি কর্তাদের ম্যানেজ করে নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়েছেন। এখন তারাই মালিক বলে প্রচার দিচ্ছেন। 

তিনি আরো জানান, চেষ্টা করেছেন সরকারি জমি রক্ষায়। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। বাওড়টি বাঁচিয়ে রাখলে আগামীর প্রজন্ম মাছ খেতে পারতো। পাশাপাশি মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো না। কিন্তু এখন আর বাওড়ে সরকারের কোনো জমি নেই। 

গাড়াপোতা গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, একটি সময় ছিল তারা বাওড়ে মাছ ধরতে নামতেন। দেশিয় সব মাছ পাওয়া যেতো। বাওড় পাড়ের মানুষের মাছ কিনতে হতো না, অনেকে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। যা এখন ভাবলে স্বপ্নের মতো মনে হয়।   

এ ব্যাপারে ওলিয়ার রহমান জানান, তার কিছু জমি এখানে ছিল। যা তিনি পরবর্তীতে তিনি সেই জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন বাওড়ে তার কোনো জমি নেই। আব্দুল হক জানান, জায়গাটি বাওড়ের ছিল। ভুমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া জমি তারা ক্রয় করেন। এভাবে তারা জমির মালিক হয়েছেন। তিনি আরো জানান, আর.এস রেকর্ডে জমি তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। সরকার সকলের দখল উচ্ছেদ করলে তিনিও ছেড়ে দেবেন। বাওড়ে পুকুর আছে এমন একজন জানান, জমিটি তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। তারাই জমির মালিক।   

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ আনিচুল হক জানান, তারা ভাবদিয়া বাওড়ের জমি ফেরত পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এই জমি নিয়ে একটু সমস্যা রয়েছে। ইতিপূর্বে নানা ভাবে জমি জনগনকে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ফেরতের জন্য মামলা চালানো হচ্ছে। আশা করছেন সরকারের জমি সরকারের ঘরে ফিরে আসবে।  


No comments

Powered by Blogger.