ভাটা নির্মানে হতদরিদ্র কৃষকের শেষ সম্বল ১৬ শতক চাষের জমিও জোর করে দখল করেছে কর্তৃপক্ষ, আরো ২০ একর চাষযোগ্য জমি নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা
স্টাফ রিপোর্টার-
“শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋনে
বাবু বলিলেন বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে”।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই বিঘা জমি কবিতার লাইন দুইটির মতো এক দখলদার অসহায় কৃষক আলী আকবারের শেষ সম্বল মাত্র ১৬ শতক জমিও ইটের ভাটায় দখল নিতে চান। ইতোমধ্যে সেই জমিতে মাটি ফেলে দিয়েছেন। ধানের জমি ভাটায় দিতে না চাইলেও জোর করেই দখল করছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, জমিটা তার প্রয়োজন, জোর করে হলেও নিতে হবে।
ঘটনাটি ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলার নস্তি এলাকার। ওই কৃষক আলী আকবার হচ্ছেন নস্তি গ্রামের নবি সর্দ্দারের পুত্র। শুধু তার একার নয়, ভাটার পাশের আরো চাষযোগ্য ২০ একর জমির মালিকরা জমি নিয়ে চিন্তিত। বেশ কয়েকজনের জমিতে মালামাল ফেলে দখল করা হয়েছে।
আলী আকবার জানান, মাঠে তার মাত্র ১৬ শতক চাষযোগ্য জমি আছে। তার ৪ মেয়ে আর ১ ছেলে। তিন মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন, এখন বৃদ্ধা মা স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে তার সংসার। এই ১৬ শতক জমির ফসলই তার সম্বল। নিজে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন।
আলী আকবার আরো জানান, তাদের গ্রামের কামাল হোসেন নস্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ শত গজের মধ্যে কয়েকজনের জমি বর্গা নিয়ে ‘শাকিল ভাটা’ নামে একটি ভাটা নির্মান করেন। গত তিন বছর এই ভাটা চালিয়েছেন। এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। পাশাপাশি স্কুলের পাশে হওয়ায় অনেকের আপত্তিও ছিল। এ বছর জমির মালিকরা তাদের জমি ছেড়ে দিতে বললে কামাল হোসেন পূর্বের স্থান থেকে সামান্য পশ্চিমে সরে নতুন করে ভাটা নির্মানের কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ভাটার চিমনি সহ আনুষাঙ্গিক কাজ অব্যহত রেখেছেন। তিনি জানান, নতুন করে স্থাপন করা জায়গার পাশেই রয়েছে তার ১৬ শতক জমি। এই জমি থেকেই তার পরিবারের মানুষগুলোর মুখের খাবার জোটায়। তিনি প্রথম থেকেই বলে আসছেন চাষের জমি ভাটায় দেবেন না।
আলী আকবার কান্নাকন্ঠে জানান, তিনি জমি দিতে চাননি তাই তাকে মারতে যাওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তার অনুমতি ছাড়াই জমিতে মাটি ফেলে দিয়েছেন। সেখানে ইটের স্তুপ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি দুঃখ করে বলেন, এই জমিটুকু চলে গেলে কিভাবে জীবন চালাবেন।
গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর জানান, কামাল হোসেন ওই স্থানে ৮ বিঘার কিছুটা বেশি জমি ক্রয় করেছেন। সেখানেও পুকুর ও মাটি রাখার হয়েছে ৪ বিঘায়, আর ইট তৈরীর স্থান করেছেন ৪ বিঘা। এছাড়া আরো ৩ বিঘা জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। এই জমির উপর ভাটা নির্মান শুরু করেছেন। সাধারনত একটা ভাটা করতে গেলে ছোট হলেও কমপক্ষে ২৫ বিঘা জমির প্রয়োজন হয়। এখন ওই পরিমান জমি জোগাড় করতে কামাল নানা ভাবে অন্যদের জমি দখলের পায়তারা করছেন। কারো জমিতে জোর করে মাটি ফেলে, আবার কারো জমিতে বালু রাখছেন। এমনই ভাবে আলী আকবারের ধানের জমিতেও মাটি ফেলে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ওই ভাটা এলাকায় ২০ একরের বেশি চাষযোগ্য জমি রয়েছে। ভাটা হলে ওই জমিগুলো অকেজো হয়ে যাবে। যে কারনে স্কুলের পাশে কৃষি জমিতে যেন ভাটা নির্মান বন্ধ করা হয় সে জন্য গণস্বাক্ষর করে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিকট অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ভাটা নির্মান অব্যহত রেখেছেন। অবশ্য বর্তমানে কামাল একটি হত্যা মামলায় কারাগারে। তবে ভাটার কাজ চলছে।
ভাটার ব্যবস্থাপক বজলুর রহমান জানান, ভাটা করার পূর্বেই জমির মালিক আলী আকবার সহ অন্যদের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তারা জমি দিতে চেয়ে এখন দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, যে স্থানে ভাটার চিমনি করা হয়েছে তাতে আলী আকবারের জমি কখনও ভালো থাকবে না। এই জন্য জমিটা দিতে বলেছেন।
এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মামুনুল করিম জানান, তিনি এলাকার লোকজনের একটি লিখিত পেয়ে ভাটা নির্মানের কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপরও কাজ চললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments