ঈদে ক্যাম্পাসের নিজস্ব বাসে বাড়ি ফিরছে ইবি শিক্ষার্থীরা
তরিকুল ইসলাম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়ি ফিরতে শিক্ষার্থীবান্ধব ইবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য এমন মানবিক সিদ্ধান্ত দিয়ে সাড়া ফেলায় শিক্ষার্থীদের প্রশংসায় ভাসছে। প্রথম দিনে (১৬ জুলাই) ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরেছে। দ্বিতীয় দিন আগামীকাল ১৮ জুলাই বাসগুলি উত্তরবঙ্গের দুই বিভাগ রাজশাহী ও রংপুরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাস ও কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে যাবে ।
ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহণ প্রশাসক অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, “শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথম দিন ছয়টি বাস ক্যাম্পাস ও কুষ্টিয়া থেকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি বাস খুলনা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দিয়ে এসেছে এবং ক্যাম্পাস ও কুষ্টিয়া থেকে তিনটি রুটে তিনটি বাস ঢাকায় শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দিয়েছে। এছাড়াও বরিশাল ও ফরিদপুরের শিক্ষার্থী বেশি থাকায় একটি মিনিবাস ফরিদপুর পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে আগামীকাল রাজশাহী ও রংপুর রুটে দুইটি বা তিনটি করে বাসের ব্যবস্থা করা হবে। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যার ওপর ভিত্তিতে কম-বেশি হতে পারে।” দিনাজপুর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য কোন বাস কুষ্টিয়া- বগুড়া- দিনাজপুর রুটে যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ”সেটা সঠিক বলা যাচ্ছে না, তবে বাস রংপুর পর্যন্ত যাবে। রংপুরই শেষ গন্তব্য। তারা (শিক্ষার্থীরা) সুবিধাজনক স্ট্যান্ডে নেমে যেতে পারে।”
দ্বিতীয় দিন (১৮ জুলাই) যেসব রুটে বাস যাবে -
রাজশাহী বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ২/৩টি বাস ক্যাম্পাস- কুষ্টিয়া- নাটোর- রাজশাহী। রাজশাহী বা এর পার্শ্ববর্তী জেলার শিক্ষার্থীরা যাবে। যারা ক্যাম্পাস, ঝিনাইদহ, ক্যাম্পাস ও কুষ্টিয়া বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে তাদের জন্য।
রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ২/৩টি বাস ক্যাম্পাস- কুষ্টিয়া- নাটোর- বগুড়া- রংপুর। বগুড়া ও রংপুর বা এর পার্শ্ববর্তী জেলার শিক্ষার্থীরা যাবে। যারা ক্যাম্পাস, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে।
তবে দিনাজপুর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা চান অন্তত একটি বাস বগুড়া হয়ে দিনাজপুর রুটে দিলে দিনাজপুর ও পাশ^বর্তী জেলার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো। অনুরুপভাবে নঁওগা ও চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার অনেক শিক্ষার্থী থাকায় তাদের দাবি রাজশাহী বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া বাস একটি রাজশাহী হয়ে চাপাইনবাবগঞ্জ এবং অপরটি রাজশাহী হয়ে নঁওগা পর্যন্ত দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো।
ঈদে বাড়ি পৌছে দেওয়ায় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রতাশ করেছেন উচ্ছ্বাসত শিক্ষার্থীরা। বরিশালের আহমাদুল্লাহ সিদ্দিকী নামে এক শিক্ষার্থী জানান, “নিরাপদেই বাড়িতে এসে পৌঁছেছি। লকডাউনে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের ঈদ যাত্রাকে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলার লক্ষ্যে বাস দিয়ে সহযোগিতা করায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি যে সকল সাংবাদিক ও ইবির বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ভাইয়েরা এই উদ্যোগকে সফল ও কার্যকর করার জন্য দাবী উত্থাপন থেকে শুরু করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সকল ধরণের প্রচেষ্টা করেছেন, তার জন্যও আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ইবি প্রশাসন রুটভিত্তিক জটিলতা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে গন্তব্যে পৌঁছাতে ফরিদপুরের ভাংগা দেন, পরবর্তীতে লাইনের বাসে আসতে কিছুটা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ইবি প্রশাসনের এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগকে স্মৃতির ডায়েরীতে লিখে রাখবে ইবির গর্বিত শিক্ষার্থীরা।”
উল্লেখ্য, ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনে বিভাগীয় শহরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে গত ৭ জুলাই মাননীয় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি সম্মানিত পরিবহন প্রশাসক ও প্রক্টর মহোদয়ের নিকট প্রেরণ করা হয়। পরে মাননীয় উপাচার্যের নির্দেশক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ইবি প্রশাসন। প্রথমে ক্যাম্পাস পার্ম্ববর্তী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদেও তথ্য চাওয়া হয়। গুগল ফর্মের মাধ্যমে আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের তালিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন রুটে শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় শহরে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইবি প্রশাসন। আবেদনকৃত মোট ৭৪৪ জন শিক্ষার্থীর তালিকা থেকে নিকটবর্তী জেলার ৮০ জনকে বাদ দিয়ে মোট ৬৬৪ জন শিক্ষার্থীকে পরিবহন সেবা দেওয়া হচ্ছে।
No comments