ঝিনাইদহে করোনা ইউনিটের ১৭ কর্মচারীর মানবেতর জীবন
এম এ কবীর, ঝিনাইদহ -
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে যখন কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে ঠিক তখন আউট সের্সিংয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ১৭ জন কর্মীর নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফলে ঝিনাইদহ করোনা ইউনিটের সেবা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ঢাকায় স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত এক প্রভাবশালী কর্মচারীর আবদার রক্ষা করা হয়নি বলে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়োগ ১৭ জন কর্মচারীর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগে ক্ষমতাধর ওই কর্মচারী তার এক স্বজনকে আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগ দিতে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপদেয়। করোনা মহামারি শুরু হলে ২০২০ সালের ১৬ আগষ্ট ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে জরুরী ভিত্তিতে ল্যাব এটেনডেন্ট, পরিচ্ছন্নকর্মী, ওয়ার্ডবয় ও আয়াসহ ১৭ জনকে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়।
নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী তারা দুই মাস বেতন পেলেও ৭ মাস বিনা বেতনে কাজ করেছেন। দেশের অন্যান্য হাসপাতালে এ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্তদের আরো ৬ মাস মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাশ করা হলেও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের কর্মচারীদের ফাইল ফেরৎ দেয়া হয়েছে। ফলে ঝিনাইদহ করোনা ইউনিটের সেবা কার্যক্রম নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের (প্রশাসন) দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ১৭২ নং স্মারকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক অফিস ১৭ জন কর্মচারির চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম মেয়দ বৃদ্ধির প্রস্তাবটি ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল ১৮৫৯/১ নং স্মারকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবর পাঠিয়ে দেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে প্রস্তাবটি পাশ হয়নি। এ নিয়ে হতাশায় পড়েছেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কর্মরত ১৭ জন কর্মচারী। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ল্যাব এটেনডেন্ট শামিম আক্তার জানান, তিনি করোনা রোগীর রক্ত নিতে গিয়ে ৩ বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার জীবন ছিল ঝুঁকির মধ্যে। মেয়াদ বৃদ্ধি না হলেও এখনো করোনা ইউনিটেই সেচ্ছা শ্রমে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এ ভাবে বিনা বেতনে কাজ করতে গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান। রহমতুল্লা ও শিউলি বেগম জানান, করোনা ইউনিটে কাজ করতে গিয়ে তারাও করোনা আক্রান্ত হন। নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি না হওয়ায় তাদের ভাগ্য অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে কর্মরত লুনা খাতুন, মমতাজ পারভিন, রাজু আহম্মেদ, শেখ আনাস শাকিল ও কামরুজ্জামান জানান, তারা আশা করেছিলেন অন্যান্য হাসপাতালের মতো তাদেরও নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে হয়নি। বিনা বেতনে তারা ৭ মাস করোনা ইউনিটে কাজ করছেন। তবে মেয়াদ শেষ হলেও রোগীদের দুর্দশা লাঘবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেচ্ছাসেবী হিসেবে এখন কাজ করাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ হারুন অর রশিদ জানান, ১৭ জন কর্মচারির মেয়াদ বৃদ্ধি প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু অনুমোদন হয়নি। তিনি বলেন এই ১৭ জন কর্মচারী চলে গেলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যহত হবে। ফলে স্থানীয়ভাবে তারা বিনা বেতনে সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন।
No comments