মুজিববর্ষের উপহার, মানুষশুন্য গ্রামে পাওয়া যাবে মানুষের কোলাহল
চিত্রা নিউজ ডেস্ক-
৬৫ থেকে ৭০ বছর পর মানুষশুন্য মঙ্গলপুর গ্রামটিতে মানুষের বসতি গড়ে উঠতে যাচ্ছে। মুজিববর্ষে ভুমিহীনদের ঘর নির্মানের মাধ্যমে এই বসতি গড়ে উঠবে আশা প্রশাসনের। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নে এই মঙ্গলপুর গ্রামে ৭ টি ভুমিহীন পরিবারের বাসযোগ্য ঘর নির্মান দ্রুত এগিয়ে চয়েছে। পাশেই নির্মান সম্পন্ন হয়েছে মঙ্গলপুর কমিউনিটি ক্লিনিক।
অথচ সরকারি নথিতে মঙ্গলপুর গ্রামটির অস্তিত্ব ছিল, ছিল ফসলি জমি, পুকুর, গাছগাছালি। শুধু ছিল না মানুষের কোলাহল। জনশ্রুতি আছে বহুবছর পূর্বে মঙ্গলপুর গ্রামের মানুষের মধ্যে ‘অমঙ্গল’ আতংক ভর করে। ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায় মানুষগুলো। সেই থেকে গ্রামটি মানুষশুন্য ছিল, যেখানে নতুন করে মানুষের বসতি শুরু হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন নির্মান শেষে বাগডাঙ্গা, পাশপাতিলা ও বলাবাড়িয়া গ্রামের ৭ টি ভুমিহীন পরিবারকে এখানে বসবাসের জন্য ঘরগুলো দেওয়া হবে।
কোটচাঁদপুর এলাকার প্রবীন ব্যক্তি মোশারফ হোসেন জানান, ৬৫ থেকে ৭০ বছর পূর্বে মঙ্গলপুর গ্রামে মহামারি আকারে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেক মানুষ মারা যান। আতংকে অন্যরা আশপাশের গ্রামে আশ্রয় নেন। কিছু পরিবার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে ভারতে চলে যান। পাশ^বর্তী বলাবাড়িয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের। গ্রামে যখন কলেরা মহামারি আকার ধারন করে তখন অনেক মানুষ মারা যান। ওই সময় গ্রামে একটা কথা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের খাল-বিল, পুকুর-কুয়ার পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে থাকলে সবাইকে মরতে হবে। এই প্রচারের পর গ্রামের মানুষ দল বেঁধে ভারতে চলে যায়। কিছু মানুষ পাশের গ্রামগুলোতে চলে গিয়েছিল, যারাও পরে অন্যত্র চলে গেছেন। তিনি আরো জানান, সর্বশেষ নেটে ঠাকুর নামের একজন মঙ্গলপুরে থাকতেন, তিনি পরবর্তীতে খুন হলে গ্রামটি সম্পূর্ণ ভাবে মানুষশুন্য হয়ে পড়ে।
এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, এলাঙ্গী ইউনিয়নটি ১৬ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। যার মধ্যে মঙ্গলপুর একটি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম এই মঙ্গলপুর। কিন্তু এই গ্রামে কোনো মানুষ বাস করতো না। তারা লোকমুখে শুনেছেন অজানা আতংকে গ্রামের মানুষগুলো গ্রাম ছেড়ে চলে যান। তিনি আরো জানান, মানুষশুন্য গ্রামটির কথা বর্তমান প্রজন্মের মানুষ ভুলে গিয়েছিল। যা সংবাদপত্রের মাধ্যমে আবারো সবাই জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ৭ টি পরিবার ওই গ্রামে বসবাস শুরু করবে। আস্তে আস্তে গ্রামে আরো বসতি গড়ে উঠবে এই প্রত্যাশা তাদের।
এলাঙ্গী ইউনিয়ন ভুমি অফিস সুত্রে জানাযায়, মঙ্গলপুর গ্রামটি ৬৬ নম্বর মঙ্গলপুর মৌজায় অবস্থিত। এই মৌজায় একটিই গ্রাম রয়েছে। গ্রামে ২০৬ টি খতিয়ারভুক্ত জমি আছে। কিন্তু কোনো পরিবার নেই।
এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেরুন নেছা জানান, তারা ওই গ্রামে ৭ টি ঘর নির্মান করছেন, যা প্রায় শেষের পর্যায়ে। এটা মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ৭ টি ভুমিহীন পরিবারকে দেওয়া হবে। যারা এখানে বসবাস করবেন। মানুষশুন্য মঙ্গলপুর গ্রামে মানুষের বসতি গড়ে উঠবে।
প্রসঙ্গত, মানুষশুন্য মঙ্গলপুর গ্রামটির কথা অনেকেই ভুলতে বসেছিল। সরকারি খাতাপত্রে এর অতিত্ব থাকলেও বাস্তবে কেউ ভাবেননি বিষয়টি। এখানকার জমি সব চাষাবাদ হচ্ছিল, বাড়ি ঘরের সব অতিত্ব শেষ হতে চলেছি।। সেই সময়ে একটি জাতীয় দৈনিকে মানুষশুন্য গ্রাম নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামটিতে নতুনকরে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। অবশেষে বসতি শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খাঁন।
No comments