রাজবংশ ও রাজার স্মৃতি বহণ করছে ঝিনাইদহের নলডাঙ্গা রাজবাড়ি রির্সোট এন্ড পিকনিক স্পট
ফয়সাল আহমেদ, ঝিনাইদহ -
রাজবংশ ও রাজার স্মৃতি বহণ করছে ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত গ্রাম তৈলকুপীতে অবস্থিত নলডাঙ্গা রাজবাড়ি রির্সোট এন্ড পিকনিক স্পট, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আসতে শুরু করেছে দর্শনার্থীরা।
জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত তৈলকুপী গ্রাম। এই গ্রামেই নলডাঙ্গার রাজা ‘প্রমথ
ভূষন’র স্মৃতি ধরে রাখতে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় ‘নলডাঙ্গা রাজবাড়ী রিসোর্ট এন্ড পিকনিক স্পট নামে এই বিনোদন কেন্দ্রটি। গ্রামে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে পার্কটির প্রধান ফটক। যেখানে স্মৃতি বহন করছে রাজার রাজ মহলের। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে নান্দনিক, নৈসর্গিক অপরূপ সোন্দর্য। ২০ একর জমির উপর নির্মিত এই পার্কে রয়েছে মায়াবী স্পট, কৃত্রিম অভয়ারন্য, ডু-প্লেক্স কটেজ, পার্কে শিশু কিশোরদের জন্য একাধিক রাইডস, সুবিশাল লেক, হংসরাজ প্যাডেল বোট, ওয়াটার পার্ক, পাহাড়, বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য স্টেজসহ বিভিন্ন রকমের মুর্তি। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ বেষ্টিত নয়নাভিরাম, রকিং হর্স, ব্যক্তি প্রদত্ত নিরাপত্তা কর্মীর তত্বাবধানে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশ। যা দেখতে গত বছরও ভীড় করতো হাজার হাজার দর্শক। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি কিছিুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দুর দুরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা। ফলে কিছুটা হলেও বিগত দিনের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন বলে মনে করছেন পার্কের স্বত্তাধীকারি আব্দুল মতিন পাতা মিয়া। তিনি সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পার্কটিতে সুস্থ্য বিনোদনের জন্য আসার আহবান জানান।
স্থানীয় সাগর মিয়া জানান, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা এই পার্কটিতে শিশু ও কিশোরদের পাশাপাশি বিনোদন পিয়াসী সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের আনন্দের খোরাক যোগাতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
আসানুর শেখ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, আমি পরিবার নিয়ে এই পার্কে ঘুরতে এসেছি। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি এবং আমার সকল বন্ধুসহ শুভাকাঙ্খিদের নিয়ে আবারও আসবো। এখানে না আসলে বোঝা যাবে না এখানকার মনোরম প্রকৃতি সম্পর্কে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানা থেকে আগত সুমাইয়া খাতুন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন করোনার মাঝে দীর্ঘদিন ঘর বন্ধি ছিলাম। আজ স্বপরিবারে এখানে এসে পার্কের সুন্দর পরিবেশ দেখে খুব ভালো লাগছে। আগামীতেও এখানে ঘুরতে আসবো।
যশোর থেকে আসা বসির আহমেদ নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, নলডাঙ্গা পার্কের নাম শুনেছিলাম। কিন্তু সময়ের কারণে আসার সুযোগ হয়নি। আজ এখানে ঘুরতে এসে মনের কাছে খুব ভালো লাগছে। এর আগে অনেক বিনোদন কেন্দ্রে আমি ঘুরতে গেছি। কিন্তু এত সুন্দর মনোরম পরিবেশ কোথাও দেখিনি। আমি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ভবিষ্যতে যেন বিনোদন কেন্দ্রটির সুন্দর সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় থাকে।
পার্কের কর্মচারি মিঠুন হোসেন জানান, ইতিপূর্বে প্রতিদিন পার্কে দুর দারান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী বিনোদন করতে আসতো। এতে করে আমাদের যেমন ভালো লাগতো দর্শনার্থীরাও সুন্দর বিনোদন করতো। বর্তমানে করোনার মাঝে পার্কে দর্শনার্থী কমে যাওয়ায় সেগুলো যথাযতভাবে চালু না থাকায় সকল যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পার্কের ম্যানেজার আলাউদ্দিন খান জানান, আমরা যারা এখানে কর্মচারি আছি করোনার মধ্যে পার্কে কোন আয় না থাকলেও আমাদের মালিক প্রত্যেকের বেতন এখনও পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছে। পার্কটি যদি চালু থাকতো তাহলে মালিকও বাঁচতো আমরাও বাঁচতাম।
ঝিনাইদহের নলডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এ এস আই) মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকি, পাশাপাশি বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।
নলডাঙ্গা রাজবাড়ি রির্সোট এন্ড পিকনিক স্পটের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ইমদাদুল হক সোহাগ বলেন, আমাদের ঝিনাইদহ জেলার ইতিহাস মানেই নলডাঙ্গা রাজবাড়ির ইতিহাস। সেই ইতিহাসের ধারক ও বাহক ছিল রাজবাড়ি রিসোর্ট এন্ড পিকনিক স্পট। এই ইতিহাসকে সংরক্ষণ করার জন্যই আমার পিতা আব্দুল মতিন পাতা মিয়া মূলত এই পার্কটি স্থাপন করেন। তিনি আরও বলেন, মাদকের প্রবনতা কমাতে নির্মল বিনোদনের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিনোদন কেন্দ্র গুলো খোলা থাকলে সরকারের মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে অগ্রণী ভ’মিকা পালন করবে। এ বিষয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার দাবিও জানান তিনি।
No comments