একটি তর্জনী একটি অমোঘ কণ্ঠের আহ্বান
এম এ কবীর-
পৃথিবীতে অনেক নেতা তাঁদের নিজ নিজ দেশের স্বাধীনতা লাভে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো এত আত্মত্যাগ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার মতো আর কোনো নেতা আছেন কিনা, সন্দেহ। একটি তর্জনী ও একটি অমোঘ কণ্ঠের স্বাধীনতার আহ্বান সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে এক মোহনায় মিলিত করে স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করার এই জাদুকরী সম্মোহন আর কোনো নেতার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। তাই তিনি জাতির নেতা থেকে বিশ^নেতা হয়ে উঠেছেন।
একাদশ শতকে যাদের হাতে ভারতের শাসনভার ছিল, তারা কেউ বাঙালি ছিলেন না। সেন ও পালবংশের রাজারাও বাঙালি ছিলেন না। এমনকি মুর্শিদাবাদের নবাব সিরাজউদ্দৌলা, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব বলে যাকে গৌরবের সঙ্গে স্বীকৃতি দেয়া হয়, তিনিও বাঙালি ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই হচ্ছেন সেই নেতা, যিনি প্রথম নিজেকে বাঙালি হিসেবে অধিষ্ঠিত করে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। হাজার বছরের ইতিহাসে এ এক মহাকালীন অর্জন, যার ¯্রষ্টা বঙ্গবন্ধু।
কাজটি সহজ ছিল না। টুঙ্গিপাড়ার মতো একটি অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে এসে একদিন এক ছোট্ট খোকাই যে একটি জাতিগোষ্ঠীর পিতা হয়ে উঠবেন- এ ছিল কল্পনারও অতীত। কিন্তু নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে মুজিব ধীরে ধীরে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকেই এগিয়ে গেছেন। সেই যাত্রাপথ তাঁর জন্য অনুকূল ছিল না। পদে পদে পাকিস্তানি হায়েনারা তাঁর পথরোধ করে দাঁড়িয়েছে। তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করে তাঁর চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে। কিন্তু যে জীবন অথৈ সমুদ্রে ডিঙি নৌকায় পাড়ি দেয়ার, তাকে প্রতিহত করতে পারে কে? পারেওনি। তাই জেল-জুলুম উপেক্ষা করে তিনি সগৌরবে মাথা উঁচু করে তার বিজয়ের রথকে ছুটিয়ে নিয়ে গেছেন এবং তাকে গন্তব্যে পৌঁছেই তিনি তাঁর নেতৃত্বের মহিমায় নিজেকে অভিষিক্ত করেছেন।
আজ থেকে শতবর্ষ আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়তো সম্ভব হয়ে উঠত না। বাঙালি জাতি সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতিতে ভারতীয় উপমহাদেশে সব সময়ই অগ্রগণ্য ছিল। কিন্তু বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্র ছিল না। বঙ্গবন্ধু এই অগ্রসর জাতিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র দিয়ে জাতির হাজার বছরের পরিক্রমায় এক অনন্য স্থান অধিকার করে নিয়েছেন। তাই আমরা তাকে বলি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।
আজ ২০২০ সালে তিনি জীবিত থাকলে দেখতেন তার সেই প্রাণপ্রিয় সাড়ে সাত কোটি বাঙালি বেড়ে হয়েছে সংখ্যায় সতের কোটি। আর সতের কোটি বাঙালির চৌত্রিশ কোটি হাত আজ ঊর্ধ্বে উঠিয়ে আনন্দের ফানুস উড়িয়ে দু’হাতে করতালি দিয়ে আরেকবার আবেগঘন হৃদয়ে মনের কোঠরে গেঁথে নিলেন জাতির পিতাকে, যার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফল হিসেবে আমরা পেয়েছি স্বাধীন একটি দেশ, একটি পতাকা আরেকটি নতুন মানচিত্র।
কেমন ছিল ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এর দিনটি- যেদিন ফিরলেন পিতা মুক্ত স্বদেশে, বিজয়ী বীরের বেশে ? সেদিন আকাশে যে সূর্য উঠেছিল সেই সূর্য কি জানত যে,এক মহান পুরুষ ওই আলো গায়ে মেখে বিজয়ীর বেশে নিজের দেশে ফিরবেন, মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ? ফিরলেন তিনি বাঙালীর ভালবাসা ছুঁয়ে। বাঙালী জাতির হৃদয় ভরিয়ে দিয়ে নিজের দেশে ফিরলেন সেই মহাপুরুষ, যাঁর জন্য অপেক্ষায় ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ।
যে দিনটিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিশ^স্বীকৃত সেই মহামানব হানাদার শত্রুদের দুর্ভেদ্য লৌহপ্রকোষ্ঠ ছিন্নভিন্ন করে হিমালয়ের মতো শির উচুঁ করে তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে অশ্রুসজল নয়নে, সহাস্য বদনে বিমান থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিলেন।
নয় মাস পর তিনি এলেন, সমবেত লাখো মানুষের হৃদয় উদ্বেলিত করে খোলা ট্রাকে করে রেসকোর্স ময়দানে তারই জন্য তৈরি মঞ্চে যাওয়ার পথে নয়নভরা জলে রাস্তার ধারের হাজারও জনতার চোখেও জল বইয়ে দিলেন।
কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতায় বলতে হয়, ‘অমনি পলকে দারুণ ঝলকে হৃদয়ে লাগিল দোলা।/ জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা।’ বঙ্গবন্ধুকে বরণ করল তাঁর প্রিয় স্বদেশভূমি। বুক ভরে নিশ^াস নিলেন তিনি। প্রিয় দেশের বাতাস নিলেন বুক ভরে। স্পর্শ করলেন এই দেশের মাটি। প্রিয় আলো তাঁকে ছুঁয়ে দিল। নাম না জানা কোন পাখি কি দূরে কোথাও গান গেয়ে উঠেছিল ? জানা যায়নি। সেদিনের সেই অপরাহ্ন নিয়ে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি লন্ডনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টটি ছিল এ রকম, ‘ঢাকায় আজ জনতা তাঁকে এক বিজয়ী বীরের সংবর্ধনা দেয়।’
তারই সম্মানে সবাই পালন করবে তার জন্মশতবার্ষিকী একটি দিনে নয়, সারা বছর ধরে প্রতিদিন, যা পরিচিতি পাবে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে। মুজিববর্ষ নাম হয়েছে তারই নামানুসারে, যার নামটি ঠাঁই করে নিয়েছে বাংলার ইতিহাসে, যে নাম ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের’ গায়ে খোদিত হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে সুনীল আকাশে- তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সবার প্রিয় ‘শেখ মুজিব’।
কেন মুজিববর্ষ ২০২০? কী থাকবে এ বর্ষে? জানার কৌতূহল হয়তো আছে অনেকেরই। গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতায় দেখেছি, অনেকেই জানেন না মুজিববর্ষ কী এবং কেন পালন করা হবে এটি। প্রায় সবাই জানতে চেয়েছেন এর বিস্তারিত বিষয়। স্বল্প পরিসরে অনেক কিছুই লেখা সম্ভব হবে না। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে উল্লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে বলতে পারি, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ার এক অজপাড়াগাঁয়ে সম্ভ্রান্ত বাপ-দাদার টিনের ঘরে জন্ম নেয়া ‘রাখাল রাজা’ অকুতোভয় শেখ মুজিব অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে, জীবনের মূল্যবান সময় জেলহাজতে থেকে, পরিবার-পরিজনের মায়া-মমতা থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন কাটিয়ে শত দুঃখ-দুর্দশার মধ্যেও শুধু একটি চাওয়া নিয়ে জীবনভর যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে।
আর সে চাওয়া ছিল তৎকালীন পূর্ব বাংলার জন্য একটি আলাদা পতাকা, একটি স্বাধীন সত্তা আর সব বাঙালির জন্য একটি সম্মানজনক জীবন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকেই তিনি এ ভাবনা হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছিলেন; তখনই তার মনে হয়েছিল, ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি দেশ থাকতেই হবে শুধু বাঙালিদের জন্য।
সৃষ্টি করলেন তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বপ্ন। ধীরে ধীরে বুনন করে দিলেন এ স্বপ্ন সব বাঙালির হৃদয়ে। এ স্বপ্নের মধ্যেই প্রোথিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের শিকড়। সময়ের বিবর্তনে একদিন ‘রাখাল বালক’ থেকে হয়ে উঠলেন ‘বঙ্গবন্ধু’।
তার প্রজ্ঞা দিয়ে তিনি সব বাঙালিকে এক কাতারে নিয়ে এলেন, ঐক্যের পতাকার নিচে দাঁড় করালেন, এক সুরে একটি স্বাধীন দেশ সৃষ্টির জন্য সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করলেন এবং একাত্তরের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে মুক্তির কথা, স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করলেন।
আর চূড়ান্ত পর্যায়ে ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার অতর্কিত অমানবিক বর্বরোচিত আক্রমণের মুখে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছড়িয়ে দিলেন ইথারের মাধ্যমে মধ্যরাতের একটু পরেই, বন্দি হওয়ার আগ মুহূর্তে: ‘... আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন...’।
সারা জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম মুক্তিযুদ্ধে। ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বাধীনতা।
আর এ মহান পুরুষকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন, তার আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করা, প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে তার নীতি-আদর্শ সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়া বর্তমান প্রজন্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এ বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত পুরো এক বছর হবে মুজিববর্ষ।
মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা কেন হচ্ছে? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড.কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর ভাষায় : ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অসাধারণ সময়। সেদিন পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন। সারা বাংলাদেশ যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল তেজগাঁও বিমানবন্দর ও রেসকোর্স ময়দানে। বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মুজিববর্ষ ইউনেস্কোর সদস্যভুক্ত ১৯৫টি দেশে একযোগে পালিত হবে। ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর ফলে বঙ্গবন্ধুর বিশ^স্বীকৃতি আবারও প্রমাণিত হল এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তার অবদান ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হল।
মুজিববর্ষে সারা দেশের শহরে, গ্রামেগঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হবে স্বাধীনতার সত্য-ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর অবদান, দর্শন, আদর্শ, চিন্তাচেতনা যা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতাপূর্ব সময়কালে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।
বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ- এ কথাটি তরুণ প্রজন্মের মনে গেঁথে দিতে হবে; তাদের জানাতে হবে বঙ্গবন্ধু কেন একটি স্বাধীন দেশ চেয়েছিলেন, কেন তিনি জীবনের সব সুখভোগ বিসর্জন দিয়ে শুধু একটি পতাকার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, কেন তিনি জল্লাদদের কারাগারে থাকা অবস্থায় মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও স্বাধীন বাংলাদেশের ব্যাপারে আপস করেননি, কেন তিনি সব বাঙালির জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পথে পা বাড়িয়েছিলেন এবং সব ধরনের শোষণের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর কীর্তিই বাঙালি জাতিকে সারা বিশে^ মর্যাদার আসনে আসীন করেছে এবং তার কীর্তিই আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছে, বুক ফুলিয়ে কথা বলার অধিকার দিয়েছে, শির উঁচু করে চলার সুযোগ করে দিয়েছে।
তার কীর্তি আর মহত্ত্ব প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে, তরুণ মনে সাহস জোগাবে, তারই প্রতিষ্ঠিত দেশকে উন্নয়নের ছোঁয়ায় বিশ^-পরিমন্ডলে সম্মানজনক আসনে অধিষ্ঠিত করবে।
প্রতিপক্ষের শত ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচক-অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে-সামগ্রিকতায় আজ ইতিবাচক অগ্রগতির দিকে ধাবমান। আমাদের আশা ঘোষিত ‘রূপকল্প’ অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম-আয়ের ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত হবে।
বিশ^ব্যাংককে অগ্রাহ্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের যে অনন্য-সাধারণ সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা সারা বিশে^্ প্রশংসিত হয়েছে এবং পদ্মাবক্ষে সেই সেতুর অবয়ব এখন দৃশ্যমান। যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে জাতির জনক পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেন, দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় তারই সুযোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আজ স্বাধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সর্বসূচকে এগিয়ে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান এই পাঁচটি সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার আজ মানুষের দোরগোড়ায়। একসময়ের অন্ধকার গ্রামবাংলা আজ আলোকিত। পিচঢালা পথ, সেই পথে সশব্দে ছুটে চলছে যাত্রীবাহী বা মালবাহী গাড়ি। ঘরে ঘরে টিভি, ফ্রিজ। পাকা দালান-কোঠা। খালি পায়ে লোকজন চোখে পড়ে না। বাজারগুলো সরগরম। গ্রামীণ জনপদের মানুষের হাতে ধূমায়িত চায়ের পেয়ালা। গ্রামগুলো এখন শহরে রূপান্তরিত। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিশে^ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করেছে। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
আমাদের প্রত্যাশা, মুজিববর্ষে দেশ থেকে সব অনাচার দূর হবে, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে, গ্রাম আর শহরের বৈষম্য হ্রাস পাবে, গুটিকয়েক লোকের হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হবে না, নদীগুলোর কান্না বন্ধ হবে, পাহাড়গুলোর গায়ে কেউ কোপ মারবে না, কেউ জলাশয় আর খাল-নালা দখল করবে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কোনো প্রতিষ্ঠানে-কর্মস্থলে লাম্পট্য থাকবে না, শহরগুলো সব ধরনের দূষণমুক্ত হবে, সড়কে মানুষ পিষ্ট হবে না, ইতিহাস বিকৃতির রাস্তা বন্ধ হবে এবং সমাজে সুন্দরভাবে বসবাসের একটি কল্যাণকর আবহ তৈরি হবে।
তথ্য সূত্রঃ ১. বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’
২. কারাগরের রোজ নামচা
৩. দৈনিক সমকাল
৪. দৈনিক কালের কণ্ঠ
৫. বাংলাদেশ জার্নাল
এম এ কবীর
সাংবাদিক,কলামিস্ট,গবেষক,সমাজচিন্তক।
makabir.jhenidah@ gmail.com
No comments