ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হলেন ঝিনাইদহের কৃতি সন্তান নিপা
ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হয়েছেন হরিণাকুণ্ডুর কৃতি সন্তান ঢাকার সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা। শামীম আরা নীপা ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বাকচুয়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা জযনূদ্দীন আহমেদ একজন শিক্ষক হিসেবে তার আদরের এই দুলালীকে বড় মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন ছোট বেলা থেকেই। হরিণাকুণ্ডু সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয হতে এসএসসি, ঝিনাইদহ সরকারি নূরুন নাহার কলেজ হতে এইচএসসি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জণ করেন। শিক্ষা জীবনে প্রতি স্তরেই আশৈশব মেধাবী এই কৃতি শিক্ষার্থী তার মেধার সাক্ষর রাখতে সক্ষম হন।২৯ তম বিসিএস-এ এডমিন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে শামীম আরা নীপা পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারি কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। সেই শামীম আরা নীপার হাতে বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মাননা ও স্বীকৃতির স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
ইতিপূর্বে ২০১৬ সালে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে সফলতা এবং দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে তিনি দেশব্যাপি আলোচিত হন। পরবর্তীতে তিনি টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও বিশেষ সুনাম ও দক্ষতার পরিচয় দান করেন।
২০২০ সালের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা বিবেচনায় জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তাদের এ সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসনসচিব শেখ ইউসুফ হারুন, অতিরিক্ত সচিব মোজাম্মেল হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিভাগীর কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান। ওই অনুষ্ঠানেই ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে শামীম আরা নিপার হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
পেশায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হলেও প্রশাসনিক গণ্ডির বাইরেও শামীম আরা নিপার জনমুখী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এর মধ্যে সরকারের উচ্চমহলে সাড়া ফেলেছ। জনবান্ধব একজন কর্মকর্তা হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে স্বীকৃতি এর মধ্যেই মিলেছে তাঁর ঝুলিতে। বর্তমানে কর্মরত আছেন সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। এর আগে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকাকালীন গরিবের চাল নিয়ে চালবাজি বন্ধে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। চাল বিতরণের পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে এসেছিলেন একটিমাত্র মোবাইল অ্যাপসে। যে প্রক্রিয়ায় উপকারভোগীরা তাদের হাতে পাওয়া কিউআর কোড সম্বলিত কার্ড দিয়ে নিয়মমতো কিনতে পেরেছেন সরকারের ১০ টাকা কেজির চাল। তাঁর সে উদ্যোগ সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টিতে এলে সরকারিভাবেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় সারা দেশে। এ ছাড়া করোনার সময় শামীম আরা নিপার উদ্ভাবনী উদ্যোগে বদলে গিয়েছিল কালিহাতি হাসপাতালের চিত্র। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সুরক্ষার পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা অক্ষুণ্ন রাখতে হাসপাতালটিতে চালু করা হয়েছিল ডক্টরস সেফটি চেম্বার ও সেফটি কার্ট। যে উদ্যোগটি পরবর্তীতে দেশের অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গ্রহণ করা হয়েছে।
২০১৬ সালে শামীম আরা নিপার কর্মস্থল ছিল ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায়। তৎকালীন সময়ে তিনি দোহার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় তাঁর হাত ধরেই প্রথমবারের মতো দোহারে বদলে গিয়েছিল ভূমিসংক্রান্ত কার্যক্রমের দৃশ্যপট। আলোচনায় উঠে এসেছিলেন বাড়ির আঙিনায় গিয়ে ভূমিসংক্রান্ত কাজের সেবা দিয়ে। তাঁর হাত ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহার উপজেলার মাহমুদপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের হতদরিদ্র বাসিন্দারা বাড়ির আঙিনায় বসে করতে পেরেছিল জমির দলিল। দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ ভূমি কার্যালয়টির পাশে হয়েছিল নতুন ভবন। ভবনের চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয়েছিল সবুজের সমারোহ, হয়েছিল সেবাগ্রহীতাদের জন্য আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা। সামনে সাঁটানো হয়েছিল ডিজিটাল সাইনবোর্ড, নিরাপত্তা বেষ্টনি আর নতুন রঙের প্রলেপে ভবনটিও পেয়েছিল আভিজাত্যের শোভা। তখন শুধু অফিসের চেহারায় জৌলুস আসেনি, সেবার মানেও এসেছিল পরিবর্তন। ভূমি অফিস হয়েছিল দালালমুক্ত একইসাথে সেবার মানেও এসেছিল নতুনত্ব। শামীম আরা নিপার হাত ধরে বদলে যাওয়া সে দৃশ্যপটের ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত আছে। সবশেষ ২০২০ সালে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে সেখানেও পরিবর্তনের ছোঁয়া দিয়েছেন তিনি। সেবাগ্রহীতাদের জন্য বসার স্থানসহ ইউএনওর সরকারি কার্যালয়টিতে এনেছেন ব্যাপক পরিবর্তন। সেখানেও তাঁর হাত ধরে হচ্ছে ব্যতিক্রমী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। সরকারি বাসা থেকে অফিস প্রাঙ্গণ সবখানেই আসতে শুরু করেছে পরিবর্তন। পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে কার্যক্রমেও।
শামীম আরা নিপা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের বিশেষ তাগিদ হচ্ছে মাঠপ্রশাসনকে জনবান্ধব হিসেবে তৈরি করা। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যদি সে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে তাহলেই প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষ সুফল পাবে একইসাথে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে। তিনি বলেন, চেষ্টা করি প্রশাসনিক গণ্ডির বাইরেও নিজের অনুধাবন থেকে জনবান্ধব কাজ করার, সাধারণ মানুষের পাশে থাকার। আমি মনে করি, আমাদের কর্মকাণ্ডগুলো যদি আগামী প্রজন্মের জন্য হয় তাহলে দেশের অগ্রযাত্রায় তারাও অগ্রপথিক হিসেবে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। (তথ্যসূত্র-কালেরকণ্ঠ)
No comments