“সুখের সন্ধানে” (৩য় পর্ব)
আলহাজ্ব এম. এ. কাদের
(সাংবাদিক ও কলামিষ্ট)
মনঃসমীক্ষকদের মতে এমন দাম্পত্য জীবন যেন দুটি মানুষ নামক যন্ত্রের সহাবস্থান। সমীক্ষায় দেখা গেছে এমন নিস্পৃহ, অশান্তির সংসারে বেড়ে ওঠা বাচ্চা হতাশাগ্রস্ত, পরনির্ভরশীল, নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়াশুনায় অমনোযোগী হয়, অসৎ সঙ্গপ্রিয় হয়ে উঠে এবং পরবর্তী জীবনে তারা খুব কমই সফলকাম হয়। মনে রাখতে হবে সুদর্শন, সুশ্রী অনেক সম্পদশালী থেকে জ্ঞানী, ধার্মিক পাত্র-পাত্রীর ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে অল্পতে সন্তুষ্ট হওয়ায় তাদের দাম্পত্য জীবন অনেক সুখের হয়। ভালবাসার বিয়ে থেকে বাবা-মায়ের পছন্দের বিয়ে অনেক ভালো। কারণ ভালবাসার বিয়েতে অনেক মিথ্যা অভিনয় থাকে যা পরবর্তীতে সাংসারিক জীবনে অনেক অশান্তি বয়ে আনে। দাম্পত্য জীবনে একের অধিক সন্তান নিলে ভাল হয়। এতে সন্তান মানুষ করতে সুবিধা হয়। একটি সন্তানের অযৌক্তিক চাওয়া-পাওয়ার কাছে বাবা-মা অনেক সময় জিম্মি হয়ে পড়ে। তাছাড়া কোন কারণে ১টি সন্তান হারালে সারা জীবন শোকের অতলে সুখ হারাবে, বাবা-মার আয়ু কমবে। মনে রাখতে হবে অসুস্থ বার্ধক্যে একাকীত্ব জীবন কবরে সমান। সন্তানদেরকে ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে মানুষ করে একজনকে অন্তত কাছে রাখতে পারলে শেষ বয়সের একাকীত্ব জীবনের কষ্টের কিছুটা লাঘব হবে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একাকীত্ব জীবনের ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারে এ জীবন কত কষ্টের। পিতৃ প্রধান পরিবারতন্ত্রের শুরু থেকেই বাবা পরিবারের প্রধান। বাবা হেড অফ দ্য ফ্যামিলি বলতে যা বোঝায়, মডার্ণ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডানকান তাঁর “বাবার গুরুত্ব” শীর্ষক এক গবেষণা নিবন্ধে উল্লেখ করেন, “পরিবারে বাবার সম্পৃক্ততা সন্তানের মনঃবিকাশে অনবদ্য ভূমিকা রাখে”। বিশেষত সন্তানের বুদ্ধির বিকাশ, নারী-পুরুষ ধারনা তৈরি, মানসিকতার পরিবর্তনে বাবার বিশেষ প্রভাব থাকে। যে সব সন্তানের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক ভালো তারা মানুষ হিসাবে সফল হয়। সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মানুষ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবনের সমস্ত সুখ এই সন্তানের মধ্যেই। সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর আগে ভালো মানুষ বানানো দরকার। বর্তমান সমাজে অনেক ডাক্তার, বিচারক, ইঞ্জিনিয়ার, নেশাগ্রস্ত হয়ে তার পরিবারের সকলের সুখ নষ্ট করেছে। এরা বাবা-মা, প্রতিবেশী, মুরুব্বীদের পর্যন্ত সম্মান করতে চায় না। আধুনিকতার নামে অসভ্য আচরণই তাদের কাছে শ্রেয়। গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে অবাধ্য সন্তান বাবা-মার সারা জীবনের কান্না। পরিবারে একজনের জন্য সকলের সুখ নষ্ট হতে পারে। এসব কারণে সন্তানদের ভালো স্বপ্ন দেখাতে হবে। সন্তান কোথায় যাচ্ছে কার সাথে মিশছে এ সম্পর্কে পিতা-মাতার সম্যক ধারনা থাকতে হবে। সন্তানের যে কোন খারাপ অভ্যাস বাবা-মার জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে। সন্তানের চিন্তার জগত তৈরিতে, তার কগনিটিভ ডেভেলপমেন্টে, নৈতিকতার বিকাশে বাবার প্রভাব অনেক বেশি। যে শিশু ¯েœহ, ভালবাসার মধ্যে বড় হয়, সে ভালবাসতে শেখে। যে শিশু উৎসহ পেয়ে বড় হয় সে আত্ম বিশ^সী হয়। যে শিশু সত্যের মধ্যে বড় হয় সে সুবিচার করতে শেখে। যে শিশু ভাগ করে খাওয়া অভ্যাস পায়, সে সুবিবেচক হয়। যে শিশু ধৈর্য দেখে অব্যস্থ হয়, সে সহনশীল হয়। যে শিশুকে সমালোচনার মধ্যে বড় হয়, সে নিন্দা করতে শেখে। যে শিশু সন্দেহ, দ্বিন্বের মধ্যো বড় হয়, সে শত্রুতা, প্রতারনা করতে শেখে। আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত শিশু সন্তানের মনোবিকাশে বাবার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ. জে হকিংস ২০০০ সালে এক গবেষণায় দেখিয়েছেন সন্তানের আত্মিক বিকাশে বাবার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাই বাবার প্রধান দায়িত্ব।
একজন ভালো বাবা একজন ভালো সন্তান তৈরির ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী। প্রতিটি মানুষের জীবনের একটি বড় সময়ের সুখ নির্ভর করে সন্তানের ওপর। সুখী হতে হলে অবশ্যই সন্তানের ভেতর দিয়েই হতে হবে- সন্তানকে বাদ দিয়ে নয়। মানুষের কম বেশি টেনশন থাকবেই। কাজেই টেনশন মুক্ত থাকতে এবং কাজের পারফরমেন্স যথার্থ রাখতে হলে আপনাকে পরিবেশের সাথে সঙ্গতি বিধান করে চলতে হবে। আপনি কতটুকু টেনশন করছেন সেটা নির্ভর করে আপনার সহ্য ক্ষমতা ওঠা নামার ওপর। মানুষের জীবনে টেনশন আসবেই। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক কর্মক্ষেত্রে ব্যবসায়িক অস্থিরতা বা টেনশনের চাপ থাকবেই। যতদিন বেঁচে থাকবেন তত দিন কিছু মানসিক চাপ থাকে। কিন্তু আপনি যদি সহ্য ক্ষমতা বাড়াতে পারেন তবে আপনি টেনশন অনুভব করবেন না। কালো মেঘে ঝড় হবে নাকি বৃষ্টি হবে তা আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। কিন্তু তা থেকে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। নিজের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, সহ্য ক্ষমতা বাড়ালেই দেখবেন সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে।
শ্রেষ্ঠ ও সফল মানুষেরা কখনো হতাশ হতেন না, টেনশনে ভেঙে পড়তেন না। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সফল ও বিজয়ী হওয়ার জন্য শৃঙ্খলাবেষ্টিত পরিপূর্ণ নার্ভাস্ সিস্টেম, ব্রেন ও মস্তিষ্ক, শারীরিক দক্ষতা, মন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দিয়ে তৈরি করেছেন। আমাদের দায়িত্ব এই শৃঙ্খলাবেষ্টিত ইঞ্জিন বা যন্ত্রপাতি সচল ও যথাযথ রাখা। আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতি হওয়া উচিত সুশৃংখল। এর জন্য দরকার সঠিক লাইফস্টাইল মেনে চলা। শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল বা অসুস্থ মানুষের সহ্য ক্ষমতা অনেক কম। তাই আমাদের ছোটবেলা থেকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, ব্যালেন্স ডায়েট অভ্যাস করতে হবে। বিষয়টি দুঃখের হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের শতকরা ৯৫ জন মানুষ তার খাবার কী হওয়া দরকার তা জানেন না। আর ২/১ জন যারা জানেন, তারা পালন করেন না। খাবার নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাবারের সাথেই আপনার স্বাস্থ্য, মন-মানসিকতা নির্ভর করে। খাদ্যতালিকায় কতটুকু কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল থাকবে এবং কোন বয়সে কতটুকু তা খেতে বা পান করতে হবে সে বিষয়ে অবশ্যই সম্যক ধারণা থাকতে হবে। মানুষের শরীরে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ আছে। প্রতিটি কোষ সবসময় ক্রিয়াশীল রয়েছে। এক একটি কোষ এক একটি কারখানার মতো, সুতরাং সব ট্রিলিয়ন কারখানা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চালু রাখতে হলে সঠিকভাবে পুষ্টিকর খাদ্য জ্বালানি হিসাবে সরবরাহ ও নিয়ম মেনে চলতে হবে। অন্যথায় কারখানা অচল হয়ে পড়বে। আপনি যা খাচ্ছেন তা প্রতিটি কোষের কাঁচামাল হিসেবে কাজ করছে। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদদের সাথে পরামর্শ করে খাদ্য তালিকা ঠিক আছে কিনা দেখে নেয়া উচিত। প্রতিটি মানুষের ফিজিক্যাল ফিটনেস ও সুস্থ থাকার জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করা উচিত। হাঁটা, সাঁতার, ও সাইক্লিং ভাল ব্যায়াম। বয়স অনুযায়ী ব্যায়ামের ধরন ঠিক করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল ভিত্তি। নিয়মিত ব্যায়ামে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও রোগ নিরাময় হয় যা সুস্থ আর আনন্দময় জীবনের জন্য ইয়োগা, প্রাণায়াম, মেডিটেশন, ভিজ্যুয়ালাইজেশন, থেরাপি সমন্বিত পদ্ধতি আপনার শারীরিক-মানসিক শক্তিকে দৃঢ় রাখে।
Email: makader958@gmail.com
Phone: 01711-338182, 01916-604161
Facebook page: facebook.com/makader1958
No comments