এশিয়ার শীর্ষ ২০ ধনী পরিবারের তালিকা প্রকাশ
এশিয়ার শীর্ষ ২০ ধনী পরিবারের হাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। সম্প্রতি বুমবার্গ ওয়েলথ প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ায় ২০টি পরিবারের হাতে ৩৯ লাখ ৮১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা (৪৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার) রয়েছে।
ব্লুমবার্গ ওয়েলথ প্রতিবছর এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারের প্রতিবেদনেও ২০টি ধনী পরিবারের সম্পদের পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে।
১। ভারতের আম্বানি পরিবার: আম্বানি পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পদের পরিমাণ ৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। ১৯৫৭ সালে ধীরুভাই আম্বানি পারিবারিক ব্যবসা শুরু করেন। ২০০২ সালে মুকেশ আম্বানি সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ২০১৪ সালে তার মেয়ে ইশা ও ছেলে আকাশ আম্বানি পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেন।
২। হংকংয়ের ওয়াল্টার কোওক: ওয়াল্টার কোওক পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুন হুং কাই প্রোপার্টিজের সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। ১৯৭২ সালে হংকং শেয়ারবাজারে সুন হুং কাই প্রোপার্টিজকে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন কিয়ক তাক সেং।
৩। থাইল্যান্ডের চিয়া এক চর: চিয়া এক চর পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চ্যারোয়েন পোকফান্ড গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ১৭০ কোটি ডলার। ১৯২১ সালে চিয়া এক চর পারিবারিক ব্যবসা শুরু করেন। ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রুপটি বর্জ্য ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
৪। ইন্দোনেশিয়ার ওয়ে উয়ে গোয়ান: ওয়ে উয়ে গোয়ান পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান জারুম, ব্যাংক সেন্ট্রাল এশিয়ার সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। ১৯৫০ সালে ওয়ে উয়ে গোয়ান একটি সিগারেট ব্র্যান্ড কিনে নেন। এটি পরবর্তী সময়ে জারুম নামে প্রতিষ্ঠা পায়। পরে পরিবারটি ব্যাংক ব্যবসায় জড়িত হয়।
৫। দক্ষিণ কোরিয়ার লি জে ইয়ং: লি জে ইয়ং পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার। ১৯৩৮ সালে লি বাইং-চুলের হাতে কৃষিপণ্য রফতানিকারক হিসেবে যাত্রা করে। বর্তমানে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস খাতে এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি।
৬। থাইল্যান্ডের চ্যালিও ইয়ুভিদ্যা: চ্যালিও ইয়ুভিদ্যা পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান টিসিপি গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৪২০ কোটি ডলার। ১৯৫৬ সালে চ্যালিও ইয়ুভিদ্যা টিসি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সম্প্রতি টিসিপি গ্রুপ ভিয়েতনামে ১২ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
৭। হংকংয়ের চেং ইয়ু তুং: চেং ইয়ু তুং পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চাও তাই ফুকের সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ২৬০ কোটি ডলার। ১৯২৯ সালে চাও তাই ফুক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন চাও তাই ইয়েন। ২০১৭ সালে পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের সদস্য অ্যাড্রিয়ান চেংকে এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়।
৮। ভারতের পালোনজি মিস্ত্রি: পালোনজি মিস্ত্রি পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার। মিস্ত্রিদের পারিবারিক ব্যবসা ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৬ সালে এ পরিবারের সদস্য সাইরাস মিস্ত্রি টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিষ্কার হন। পাঁচ প্রজন্ম ধরে পারিবারিক ব্যবসায় চলছে।
৯। হংকংয়ের পাও ইউয়ে কুং: পাও ইউয়ে কুং পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিডব্লিউ গ্রুপ ও হুইলকের সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ২০ কোটি ডলার। ১৯৫৫ সালে পাও ইউয়ে কুং তার প্রথম জাহাজ কিনেছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি অবসর নেন। ২০১৪ সালে পাওয়ের নাতি ডগলাস উ হুইলকের চেয়ারম্যান হন।
১০। ফিলিপাইনের হেনরি সাই: হেনরি সাই পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এসএম ইনভেস্টমেন্টসের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৯৭০ কোটি ডলার। ১৯৫৮ সালে হেনরি সাই ম্যানিলায় শুমার্ট নামে জুতার দোকান দেন। ছেলে হারলে সাই এসএম ইনভেস্টমেন্টের সিইও পদে প্রথম বাইরের লোক নিয়োগ দেন।
১১। তাইওয়ানের তসাই ওয়ান লিও: তসাই ওয়ান লিও পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ক্যাথে ফিন্যান্সিয়ালের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। ১৯৬২ সালে তসাই ভাইয়েরা ক্যাথে লাইফ ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০১ সালে তসাই হং-তু ক্যাথে ফিন্যান্সিয়াল হোল্ডিংয়ের বোর্ড চেয়ারম্যান হন।
১২। হংকংয়ের চার্লি লি ওয়াই চুং: চার্লি লি ওয়াই চুং পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লি কুম কি-এর সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৭৩০ কোটি ডলার। ১৮৮৮ সালে লি কুম শিউং ঝিনুকের সস উদ্ভাবন করেন এবং লি কুম কি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে লি কুম কি পরিবার পর্ষদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাঁচ প্রজন্ম ধরে পারিবারিক ব্যবসায় চলছে।
১৩। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কোয়েক লেং বেং: কোয়েক লেং বেং পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হং লিওং গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার। ১৯৪১ সালে কোয়েক হংক পিএনজি সিঙ্গাপুরে হংকং লিওং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০১৮ সালে শেরম্যান কোয়েক সিডিএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হন।
১৪। জাপানের নোবুতাদা সাজি: নোবুতাদা সাজি পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সানতোরির সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার। ১৮৯৯ সালে সানতোরির পূর্বসূরি তোরি শোতেন শিনজিরো তোরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০১৬ সালে নবুহিরো তোরি সানতোরি বেভারেজ অ্যান্ড ফুডের পরিচালক হন।
১৫। হংকংয়ের মাইকেল কাদুরি: মাইকেল কাদুরি পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সিএলপি হোল্ডিংসের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৬১০ কোটি ডলার। ১৮৮০ সালে কাদুরি পরিবার প্রথম হংকংয়ে পৌঁছে। ২০১৮ সালে মাইকেল কাদুরির ছেলে ফিলিপ লরেন্স কাদুরিকে সিএলপির পরিচালক নিযুক্ত করা হয়।
১৬। ভারতের হিন্দুজা: হিন্দুজা পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিন্দুজা গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫১০ কোটি ডলার। ১৯১৪ সালে শ্রীচাঁদ হিন্দুজার বাবা পরমানন্দ হিন্দুজা পারিবারিক ব্যবসায় শুরু করেন। ২০১২ সালে গাল্ফ ওয়েল কর্প হাফটন ইন্টারন্যাশনালকে কিনে নেয়।
১৭। হংকংয়ের স্ট্যানলে হো: স্ট্যানলে হো পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এসজেএমের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৪৬০ কোটি ডলার। স্ট্যানলে হো ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার ১৯৬২ সালে সোসাইদাদে দে তুরিজমো এ ডাইভারসেস দে ম্যাকাউ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২০ সালে স্ট্যানলে মারা যান।
১৮। দক্ষিণ কোরিয়ার চুং জু ইয়ুং: চুং জু ইয়ুং পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হুন্দাইয়ের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৪১০ কোটি ডলার। ১৯৪৬ সালে জুয়ুং চুং হুন্দাই নামে একটি ব্যবসায় শুরু করেন। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠাতার নাতি ইউইসুন চুং হুন্দাই মোটর গ্রুপের চেয়ারম্যান হন।
১৯। সিঙ্গাপুরের এনজি তেং ফং: এনজি তেং ফং পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ফার ইস্ট অর্গানাইজেশনের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। ১৯৩৪ সালে এনজি তেং ফং পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুরে চলে যান। ২০১৭ সালে সিনো ল্যান্ডের ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন ড্যারিল এনজি।
২০। থাইল্যান্ডের তিয়াং চিরথিবত: তিয়াং চিরথিবত পরিবারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ২৯০ কোটি ডলার। ১৯৪৭ সালে একটি ছোট পারিবারিক দোকান হিসেবে ব্যাংককে যাত্রা করেছিল সেন্ট্রাল গ্রুপ। ২০২০ সালে সেন্ট্রাল রিটেইল করপোরেশন দেশটির বৃহত্তম আইপিও’র তালিকায় জায়গা করে নেয়।
সূত্র-বিডি২৪লাইভ ডট কম
No comments