ভেড়াই মোস্তাকের সম্বল

 

মিজানুর রহমান,ঝিনাইদহ:

‘এই গাড়ল-ভেড়াগুলো-ই আমার সম্পদ। এদের লালন পালন করেই সংসার চলে। এরা ভালো থাকলে আমি ভালো থাকি। এরা অসুস্থ্য হলেই আমি অসহায় হয়ে পড়ি। ওরা অসুস্থ্য হলেই ছুটে যাই প্রাণি সম্পদ অফিসে। সরকারী ঔষধ না পেলেও উনারা প্রেসক্রিপশন করে দেন। তাও বা কম কিসে। অসুখ হলে ঔষধ বাবদ অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এতেও কষ্ট নেই। কারণ ওরা বেঁচে থাকার উপরই নির্ভর করে আমি ও আমার পরিবারের বেঁচে থাকা।’ কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামের গাড়ল-ভেড়া খামারী মোঃ মোস্তাক। শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য থাকায় অন্য কোনো কাজ করতে অক্ষম হওয়ায় বেছে নেন পশুপালন। বিশ বছর ধরে গাড়ল-ভেড়া পালন করছেন তিনি। বর্তমানে বছরে কমপক্ষে ২লাখ টাকা আয় করেন। যা দিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখা পড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ মেটান তিনি।

খামারী মোস্তাকের নিজের বলতে ৫শতাংশ জমি আছে। যেখানে বসতবাড়ি ও খামার রয়েছে। ২ ছেলে ১ মেয়ের জনক তিনি। বড় ছেলে রজব আলী(১৮) মাদরাসা থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে গ্যারেজে কাজ করে। বড় মেয়ে নাছরিন (১৪) এইটে পড়ে এবং ছোট ছেলে তাজমীন (৮) ২য় শেণিতে পড়ে। মেয়ে দু’টিকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান তিনি।  

মোস্তাক জানান, তিনি বাতব্যাথা, এ্যাজমা, এলার্জি ও হার্টের রোগী। ভারী কোন কাজ করতে পারেন না। তাই ভেড়া পালন বেছে নেন। ২০ বছর আগে ১০/১২ টি সংকর জাতের গাড়ল ও ভেড়া নিয়ে খামার  শুরু করেন। কিন্তু বুঝে উঠার আগেই এক বছরেই ১৯টি ভেড়া মারা যায়। শুধুমাত্র একটি গর্ভবতী ভেড়া বেঁচে ছিল। সেই ভেড়া থেকে আজ খামারে ৪০টি গাড়ল- ভেড়া (সংকর) হয়েছে। 

মোস্তাক বলেন, আমাদের দেশি ভেড়া ১৪ মাসে ৩ বার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার ২/৩টি করে বাচ্চা দেয়। অন্যদিকে কিছু জাতের গাড়ল আছে যারা বছরে ১বার একটি করে বাচ্চা দেয়। কিছু জাতের গাড়ল ১৪ মাসে ২বার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার ১/২টি বাচ্চা দেয়। গাড়লের ক্ষেত্রে অসুবিধা হলো জাত চেনা । কারণ বিভিন্ন জাতের গাড়ল পাওয়া যায়। ভালো জাতের না হলে বেশি বাচ্চা পাওয়া যায় না। যারা নতুন খামার করার চিন্তা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি গাড়লের পরিবর্তে ভেড়া পালনের পরামর্শ দেন। 

খামার ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, ছাগল, ভেড়া কিংবা গাড়লের থাকার ঘর দ্বিতল বিশিষ্ট হতে হবে। উপর তলায় ওদের থাকার ব্যবস্থা করতে হয়। যারা খামারে আবদ্ধ রেখে ভেড়া পালন করতে চান তাদের একটি ভেড়ার জন্য দিনে খড়, ভূষি মিলিয়ে ৩০ টাকা খরচ করতে হবে। আর যারা আমার মতো মাঠের ঘাস খাইয়ে পালন করতে চান তাদের ভেড়াগুলোকে দিনে দুই বেলা মাঠে খাওয়াতে হবে। রোগ বালাই নিয়ন্ত্রনে বছরে ২বার পিপিআর ভ্যাকসিন, কৃমির ঔষধ, পক্সের টিকা প্রয়োগ করতে হয় বলে তিনি জানান।   

ভেড়ার বাজারজাতকরণ নিয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশ সময়ে ক্রেতারা খামার থেকেই ভেড়ার বাচ্চাগুলো ক্রয় করে নিয়ে যান। বড় ভেড়াগুলো স্থানীয় বারোবাজার হাটে বিক্রি করা হয়। 

মোস্তাক বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে  সরকারী প্রনোদনা আসার কথা শুনি কিন্তু আজও পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি। সরকারীভাবে আর্থিক সুবিধা পেলে খামারটি বড় ও আধুনিকায়ন করার ইচ্ছা আছে।’ 

উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার এ এস এম আতিকুজ্জামান জানান, অফিস থেকে আমরা পিপিআর ভ্যাকসিন, কৃমি নাশক ঔষধসহ ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। সব ধরনের ঔষধ আমাদের থাকে না। এই জন্য প্রেসক্রিপশন করে দেয়া হয় যাতে বাইরে থেকে ঔষধ কিনে নিতে পারেন। তিনি জানান, উপজেলায় প্রায় ৯৫ হাজার গরু, ১লাখ ছাগল পালন করা হয়, এছাড়া হাঁস-মুরগীতো আছেই। অথচ উপজেলায় কোন ভেটেরিনারি সার্জন নাই। এই কারণে আমরা যথাযথ সেবা দিতে পারছিনা। 

No comments

Powered by Blogger.