নারীত্বের অবমাননা গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে
এম এ কবীর সাংবাদিক-
বিশ্বাস হল মানুষের জীবনের বড় এক শক্তি। তবে ভালো কিছুতে আমরা আর বিশ্বাস রাখতে পারছি না। যদি অপার্থিব কেউ এক বালতি দুধ হাতে নিয়ে এসে বলে, এটা একেবারেই খাঁটি, আমাদের অনেকেরই তার কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। তারপরেও ভেতর বিশ্বাস আছে, তবে ভুলভাবে। যে কারও সম্পর্কে বাজে কিছু শুনলে সহজেই বিশ্বাস করে নিই। ভালোর বেলায় এ বিশ্বাস কাজে লাগাতে পারছি না।
অবিশ্বাস হচ্ছে আরেকটা শক্তি। ভয়ানক বাজে শক্তি। অবিশ্বাসের কারণে সব কিছুই তছনছ হয়ে যেতে পারে। দৈনন্দিন জীবনের যে টানাপোড়েন এর মূলে আছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের অবিশ্বাস ।
‘অদ্ভুত আঁধার এক’ দেখেছিলেন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ। কালপরিক্রমায় সে আঁধার গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছে। আঁধারে ডুবে যাচ্ছে সভ্যতা, অদৃশ্য হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার সোপান। আঁধার পেরিয়ে আলোতে যাওয়ার প্রচেষ্টা সাধারণ মানুষের থাকলেও আছে নানাবিধ বাঁধা।
অপশক্তির সাথে কুলিয়ে উঠতে পারেনা সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়ে সহাবস্থান করতে হয় আঁধারের প্রাণীদের সাথেই। এ আঁধার কতটুকু গাঢ়? কত আলো লাগবে এ আঁধার বিতাড়িত করতে? এখানটায় এসে থমকাতে হয় একটু।
পেশীশক্তির ভয়, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হুমকিতে পড়ার আশঙ্কায় অনেকেই চেপে যান অনেক কিছু। হজম না করেও উপায় নেই। অনেকেই একত্রে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, তার আগ পর্যন্ত সব স্বাভাবিক।
জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি। টপ টু বটম কেউ যেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে না থাকে। আইনের চোখে যদি সবাই সমান হয় তবে ‘বিশেষ ব্যক্তি’ কিংবা ‘ভিআইপি’ বলে কিছু থাকা অনুচিত।
মামলার দীর্ঘসূত্রতা, আসামিদের গায়ে বাতাস লাগিয়ে মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়ানো কিংবা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও তা-ব চালানো,সব মিলিয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । অথচ বিচার ত্বরান্বিত করতে পারলে অপরাধ কমানো যেত।
ধর্ষণের ঘটনায় কবি নির্মলেন্দু গুণ ক্রসফায়ার দাবি করলেও পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই মতামত দিয়েছেন। সুশীল সমাজের বড় অংশ কবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। শেষপর্যন্ত নির্মলেন্দু গুণ নিজ অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। দিয়েছেন পাল্টা পরামর্শ। ক্রসফায়ারকে কেন সাধারণ মানুষ সমর্থন করছে, কেনইবা এর এত ‘জনপ্রিয়তা’? এর পেছনেও দায়ী অবিচারের সংস্কৃতিই। স্বাভাবিক পন্থায় দোষীদের বিচার হয় না, আইনের ফাঁক গলে তারা ঠিকই বেরিয়ে আসে। ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-’ ক্রসফায়ারে কোনো আসামি মারা গেলে সেটাকেই মানুষ ‘বিচার’ মনে করে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ক্রসফায়ারে নিহত হলে আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করে সাধারণ মানুষ। ক্রসফায়ারের ভয়ে অপরাধকর্ম থেকে সরে এসেছে এমন নজির খুব একটা নেই।
অপরাধীর পৃষ্ঠপোষক ও গডফাদারদের যতদিন পর্যন্ত নিরস্ত করা না যাবে, আইনের আওতায় আনা না যাবে, এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এক ‘উত্তেজনা’ আসবে, আরও বড় ঘটনার মাধ্যমে মিলিয়ে দেবে সেই ‘উত্তেজনা’কে!
ব্যক্তিভেদে সংবাদও কীভাবে পাল্টে যায় এমন একটি ফিচার প্রকাশিত হয়েছিল “উন্মাদ” স্যাটায়ার ম্যাগাজিনে।
ব্যক্তি যদি প্রভাবশালী হন সংবাদ হবে ‘পুলিশ জনাব মোসলেমকে লাঞ্ছিত করেছে।’ ব্যক্তির সামাজিক প্রতিপত্তি না থাকলে বলা হবে ‘পুলিশ মুসলিম্যারে পিডাই আড্ডিগুড্ডি ভাঙি দিছে!’
দেশে বিষয়ভিত্তিক অসংখ্য সংবাদপত্র রয়েছে। ধর্ষণের তা-ব থামানো না গেলে অচিরেই হয়তো ‘দৈনিক ধর্ষণ’ নামে কোনো পত্রিকার আত্মপ্রকাশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। যেখানে শুধু ধর্ষণের খবর থাকবে। ওই কষ্টকল্পনার আগ পর্যন্ত অবশ্যই শোধরাতে হবে নিজেদের।
মানুষ কি তবে প্রকৃতির জন্য হুমকি! মানুষকে বাদ দিয়ে প্রকৃতি নয়। মানুষও প্রকৃতির অংশ। মানুষের মনন, দৃষ্টিভঙ্গি, কাজকর্ম সব দিয়েই সে প্রকৃতির অংশ। তবে প্রকৃতির অন্য প্রাণ, উদ্ভিদ এবং জড়বস্তু থেকে মানুষ অনেক ভিন্ন। মানুষের বড় একটি দায়িত্ব আছে, এটা তার নিজের স্বার্থেই। ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের জন্য প্রকৃতির যতœ নেয়া, যা হয়ত মানুষ বাদে প্রকৃতির বাদবাকি অন্যরা অবচেতনভাবেই করে যাচ্ছে। মানুষ আর প্রকৃতির মাঝে ভারসাম্যটা নষ্ট হয়ে গেছে, যেহেতু মানুষ নিজেও প্রকৃতিরই অংশ, মানুষ নিজেই দাঁড়িয়ে গেছে নিজের বিরুদ্ধে।
প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে আমাদের মাঝে দূষণ চলে এসেছে। আমাদের দৃষ্টি পরিচ্ছন্ন নয়, আমাদের চিন্তা,মননও সরল নয়। দৃষ্টি এবং মনন দুটোতেই দূষণ চলে এসেছে। মানুষের জন্য নদীর পানি বিষাক্ত, বাতাস বিষাক্ত, মাটিও বিষাক্ত। যখন নদীর পানি মাটি আর বাতাস বিষাক্ত,তখন স্বাভাবিকভাবেই ফসলে সে বিষ ঢুকে পড়ে। সেই বিষ আমরা নিয়মিত খাচ্ছি। পানি না ফুটিয়ে খেতে পারছি না। রাস্তার উপর জঞ্জাল, ময়লায় নাক বন্ধ করে হাঁটতে হয়। এগুলো কে করছে? আমরা। এগুলো করে আমরা অন্যদের মানুষ ভাবতে পারছি না,যদি মানুষ ভাবতে পারতাম, তাহলে আমার ময়লাতে অন্যদের কি কষ্ট হতে পারে ওটা বোঝার কথা ছিল। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না। এটাই প্রকৃতির খেলা, আমাদের দিয়েই আমাদের বড় একটা শিক্ষা দিতে চায়।
বিশ্বাস -অবিশ্বাস অর্থাৎ চিন্তার দূষণের কারণে খাবারে ভেজাল মেনে নিয়েছি, একশ’ লিচুতে নব্বইটা লিচু থাকতে পারে এটা মেনে নিয়েছি, পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু না থাকার পরেও গরুর দুধ আর মিষ্টিতে সয়লাব, স্কুল-কলেজে নোটপত্রের বাড়াবাড়ি, নকল, প্রশ্নফাঁসসহ সব কিছুই মেনে নিয়েছি!
চাকরি পেতে সহজ উপায় ছেড়ে নানান কিছু করাটা মেনে নিয়েছি, টিকিটে কালোবাজারি মেনে নিয়েছি, মাদক থাকবেই এটা মেনে নিয়েছি। সবচেয়ে বেশি মেনে নিয়েছি মিথ্যাকে।
সাময়িক লোভের কারণে সব ধরনের অন্যায়কে মেনে নিয়েছি। অন্যায়গুলো আমারা ব্যক্তি পর্যায়ে করি, কিন্তু এর জন্য ভুগতে হয় সবাইকে। সমস্ত অহেতুক অন্যায় মেনে নিতে নিতে আমরা সমাজের হতে পারছি না, রাষ্ট্রের হতে পারছি না। তবে কি স্বার্থলোভী ব্যক্তিমানুষে পরিণত হচ্ছি?
নারীত্বের অবমাননার মতো ভয়ানক অপরাধও যেন আমাদের গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে। এটা পুরো সমাজব্যবস্থার জন্য বড় একটি অশনিসংকেত! যারা নারীত্বের অবমাননার সঙ্গে জড়িত,ওরা একদিনে এরকম হয়ে যায়নি। ওদের মাঝে দূষণের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণেই হয়ত ওরা যখন তখন নারীদের দিকে হাত বাড়াতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তখন নারী পুরুষ দুজনেরই সম্মানহানির মতো ঘটনা ঘটে।
নারীত্বের অবমাননার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ চিন্তার দূষণ। মাটি, পানি এবং বাতাস দূষিত হয়েছে বলে চিন্তাও আজ দূষিত। চিন্তার দূষণের কারণে হাত দূষিত, মোবাইল ফোন দূষিত... ল্যাপটপ, ইন্টারনেট... এগুলো সবই দূষিত।
শহরের রাস্তাঘাট, ড্রেন অপরিষ্কার বলে, শহরেও হাজারটা দূষণ, বড় বড় অফিসে একধরণের দূষণ, আবাসিক হোটেলগুলোতে অন্যধরনের দূষণ, স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়ে আরেক ধরনের দূষণ...।
একবার পরিবেশ দূষিত হলে কম-বেশি সবই দূষণের আওতায় চলে আসে। এ দূষণের সবচেয়ে মারাত্মক রূপটি হল চিন্তার দূষণ। আর এর ভয়াবহ প্রকাশ হল নারীর সম্মানে আঘাত করা। দূষণের কারণে চিন্তার দূষণের সঙ্গে মনে পশুত্ব ঢুকে পড়েছে।
শহর দখল করতে গিয়ে ঝোপঝাড়, পুকুর-ডোবা সব খেয়ে ফেলেছি। পশুপাখি তাড়িয়ে দিয়েছি, কাক পর্যন্ত আর দেখা যায় না। ওদের তাড়াতে গিয়ে মনোভাবের মধ্যে পশুত্ব চলে এসেছে। নইলে কি এত সহজে রেগে যাই! মনের পশুত্বেরও বড় প্রমাণ হল আবার সেই নারীর সম্মানে পাশবিক আঘাত। নারী সম্মানে আঘাত করার কলুষতা হঠাৎ করে আসেনি। হাজার হাজার ছোট ছোট কলুষতা থেকেই এর জন্ম। সমাজের দিকে ভালো করে তাকালেই বোঝা যায়, কলুষিত হাতের নাগালে কী নেই। ইন্টারনেট, মিডিয়া? একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যায়। নদী, মাটি, বাতাসের দূষণ চলে এসেছে মানুষের মাঝে, নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝে। দুজনের সম্মানই চূড়ান্তভাবে ব্যহত হচ্ছে।
নারীর সম্মানে আঘাতের পরই আমরা চাই সহজ গতির বিচার। আইনের গতিপথ যে খুব একটা সহজ নেই, এটা বুঝতে তেমন মেধার দরকার পড়ে না। বাইরে তাকালেই দেখতে পাওয়া যায়।
নারীর সম্মানে চূড়ান্ত আঘাত আসার পরেও বিচারের দাবিতে কেন মানুষকে পথে নামতে হবে? তাহলে কি আইনের গতিপথ স্বাভাবিক আছে বলে মনে হয়? যেখানে নদীর পানি দূষিত, সেই দূষণ কি আইনের গতিপথে নেই ? হয়ত দূষণের মাত্রা ছড়িয়ে গেছে সবখানেই। কে জানে এটাই হয়ত প্রকৃতির নিয়ম।
বিচার চাইতে গিয়েও চিন্তার দূষণ বের হয়ে আসে। আমরা বিচার দাবি করতে পারি, কিন্তু বিচারের রায় কী হবে তা কিন্তু দাবি করতে পারি না। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম বা ছবি দিয়ে আমাদের কিছু বলার অধিকার থাকার কথা নয়। আমাদের দরকার আইনের গতিপথ সহজ এবং দূষণমুক্ত রাখা। দিনে দিনে সোস্যাল মিডিয়া অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামে যে কোনো কিছু বলতে পারায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এতে করে সবারই সম্মান আজ হুমকির মুখে।
এটাও প্রাকৃতিক একটি পরিণতি, দূষিত চিন্তার ফসল। কাঙ্খিত বিচার পেয়ে উল্লসিত হওয়ার কথা নয়, আমরা ভুলে যাই, বিচারে দোষী ব্যক্তির অন্তত একটি বিচার হয়েছে। আমাদের দোষের বিচার এখনো হয়নি। কারোর বিচারে উল্লাস করা সেই দূষিত চিন্তারই প্রতিফলন।
অন্যের অন্যায়কে পুঁজি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা একটা কিছু হয়ে উঠতে চাই। অন্যের অপরাধকেই আমরা নানানভাবে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছি। ওরাই আমাদের সোস্যাল মিডিয়ার সহজ শিকার।
এক্ষেত্রে আমরা সত্যকে বানিয়ে ফেলেছি আঘাত করার হাতিয়ার! অথচ সত্য হল সমাজ বা রাষ্ট্রের ভিত্তি। এতে করে সবার সম্মানই আজ হুমকির সম্মুখীন। এই সমাজে আমাদের সম্মান সবচেয়ে অরক্ষিত বিষয়। অথচ অন্যের সম্মান রক্ষা করাও সামাজিক দায় হওয়ার কথা। সব মানুষেরই সম্মান আছে। এই সম্মানটা সবারই প্রাপ্য, যদি সে অপরাধীও হয়। তবে সামাজিক ভারসাম্যের জন্য অবশ্যই অপরাধীর সাজা হতে হবে।
ভারসাম্যপূর্ণ প্রকৃতির জন্য পুরুষ এবং নারীর দরকার শিক্ষার সঙ্গে সামাজিক যতœ। একই সঙ্গে দরকার তাদের মননের যত্ন। পুরুষকে শিক্ষা না দিয়েই রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সে রাস্তায় নারীও আছে। যার ফলে শিক্ষাবিহীন পুরুষ যেমন নিজের সম্মান বুঝতে পারে না, তেমনি নারীর সম্মানও বুঝতে পারে না। অথচ শিক্ষা না দিয়েই আমরা ওদের কাছে আশা করি, নারীর সম্মান যেন যথাযথভাবে রক্ষা হয়।
শিক্ষা হল একটি বোধের নাম, যা থাকলে একজন মানুষ তার হাত, চিন্তা, এবং দৃষ্টিকে দূষণমুক্ত রাখতে পারে। নিজেকে সমাজ এবং রাষ্ট্রের, সর্বোপরি প্রকৃতির অংশ হিসেবে ভাবতে পারে। এ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাইলে সন্তানের অনেক যত্ন নিতে হয়, ওদের অনেক সময় দিতে হয়।
বাবা-মা, বা একটি পরিবারের একার পক্ষে একজন সন্তানকে এরকম শিক্ষায় শিক্ষিত করা সম্ভব নয়। এর জন্য পুরো সমাজ বা রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হয়। কিন্তু এখানেই আমরা মুখোমুখি দাঁড়িয়েগেছি, প্রকৃতি আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিজের সন্তানের জন্যই খুব বেশি সময় দিতে চাই না, সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য বিনা টাকায় সময় দেয়া তো অনেক দূরের কথা। যার ফলে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় অধিকারের অনেক সুফলই ভোগ করতে পারছি না। এ সুযোগেই ভেতরে দিনে দিনে দূষণ ঢুকে পড়ছে। আমরা যেন অন্ধের মতো ছুটছি অর্থ বিত্ত ক্ষমতার পেছনে। অর্থ বিত্ত ক্ষমতা কোনোমতেই খারাপ হতে পারে না। এগুলো সবই জীবনের জন্য দরকার, অন্যের অধিকার এবং নিজের অধিকার রক্ষায় অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতা খুবই সুন্দর ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এগুলোর পেছনে ছুটছি শুধু ব্যক্তিজীবনের জন্য, যেখানে সমষ্টি ভাবনা একেবারেই নেই।
নারীত্বের অবমাননা বন্ধ করতে চাই? তাহলে চিন্তার শুদ্ধতার দিকে নজর দিতে হবে। তারও আগে চিন্তার দূষণ দূর করতে হবে। চিন্তার দূষণ বন্ধ করতে চাইলে নদী, মাটি, এবং বাতাসের দূষণ বন্ধ করতে হবে। এর জন্য সবাইকে সময় দিতে হবে। পরিবারের জন্য,সমাজের জন্য,রাষ্ট্রের জন্য। চিন্তায় একবার সরলতা ঢুকে পড়লে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ সবকিছুরই দূষণ দূর করা যাবে। এমনকি আইনের পথ সহজ এবং দূষণমুক্ত হয়ে উঠবে। এর জন্য প্রকৃতির কাছে আবার ফিরে যেতে হবে। প্রকৃতির যতœ নিতে হবে। ভালো থাকতে হলে টুনটুনি-চড়–ইয়ের য নিতে হবে। গাছ, পানি, পোকামাকড় সবারই যতœ নিতে হবে।
এমনকি নিজেদের যতেœর দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে তাকাতে হবে। ঘরের ভেতরে সূর্যের আলো ঢুকতে হবে, বাতাস ঢুকতে হবে। খাদ্যের ভেজাল দূর করতে হবে, কলমের বিশুদ্ধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই যদি হাত পরিষ্কার করতে পারি, চিন্তা এবং দৃষ্টি পরিষ্কার করতে পারি।
পরিবেশের দূষণ রোধ না করে, চিন্তায় দূষণ রেখে শুধু আইনের মাধ্যমেই নারীত্বের অবমাননা বন্ধ করা খুবই কঠিন কাজ। তখন হয়ত আইনের অপ-প্রয়োগের কারণে সমাজে অনেক দানবের জন্ম হবে, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য যা নিজেই একটি বড় দূষণ।
সুতরাং নারীত্বের অবমাননা বন্ধ করতে হলে সমাজের সব দূষণের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। এক দূষণের সঙ্গে অন্য দূষণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর কারণেই প্রকৃতি বা আমরাই নিজেদের ঠেলে দিয়েছি বড় ধরনের হুমকির মাঝে।
বিশ্বাস -অবিশ্বাস , ন্যায়-অন্যায় সব কিছুকেই তথা প্রকৃতিকে দূষিত করতে গিয়ে আমরাই দূষিত হয়ে গেছি।
তাই প্রতিনিয়তই মানুষ হয়ে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছি। সংসারে ভাই-বোন থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। আমরা কেড়ে নিতে চাই, কোনোভাবে পার পেয়ে যেতে চাই। ভাবটা যেন চলছে চলুক না। এভাবে চালিয়ে নিতে গিয়েই ভেতরে ভেতরে অনেক কিছুই অচল হয়ে পড়ে,আর আমরা সরে যাই সম্মিলিত অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে অনেক দূরে।
যে সমাজে দূষিত দৃষ্টি ও চিন্তার মানুষ থাকে, সেখানে চাইলেই নারীত্বের অবমাননা বন্ধ করা যায় না! নারীত্বের অবমাননা বন্ধ করতে না পারাটা পুরো সমাজের জন্যই বড় একটি ব্যর্থতা।
এম এ কবীর
সাংবাদিক
কলামিস্ট,গবেষক,সমাজচিন্তক
trynew70@gmail.com
No comments