ভাতা’র টাকা জমিয়ে ময়লা ফেলা জায়গা কিনে পৌরসভাকে দান করলেন মেয়র

স্টাফ রিপোর্টার-

পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর প্রায় প্রতিবছরই বার্ষিক বাজেটে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভাগাড় (জমি) কিনতে বরাদ্ধ থাকতো। বছর শেষে সেই বরাদ্ধ খরচ হয়ে যেতো অন্য খাতে। অর্থ সংকটে ভাগাড় কেনা সম্ভব হয়নি ২৯ বছরেরও। এবার বর্তমান মেয়র মোঃ আশরাফুল আলম ব্যক্তি উদ্যোগে পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত ভাতার টাকা জমিয়ে ৮৬ শতক ভাগাড় ক্রয় করে পৌরসভার নামে রেজিষ্ট্রি করলেন। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার। 

অনেকের ভাষায়, ভাতার টাকা জমিয়ে জমি কিনে পৌরসভাকে দান করা সম্ভবত এটাই প্রথম। আর তার এই দানের কারনে পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব জায়গা হলো। এখন আর পৌর এলাকার বর্জ্য ফেলতে জায়গা খুজতে হবে না, নিদৃষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলায় দূর্গন্ধ ছড়াবে না। কালীগঞ্জ পৌরসভার ঈশ^রবা মৌজায় বসতী এলাকার বাইরে মাঠের মধ্যে ক্রয়কৃত ওই জমিতে ইতিমধ্যে ময়লা ফেলা শুরু করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। 

পৌরসভার মেয়র মোঃ আশরাফুল আলম জানান, বর্তমান পৌরসভার মেয়র মোঃ মকছেদ আলী ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর মেয়র পদে ভোট হলে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ পূর্ণাঙ্গ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি বলেন, স্থানীয় একজন নাগরিক ও পৌরসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি দেখেছেন পৌরসভার একটা বড় সমস্যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। পৌরসভার নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। প্রায় প্রতিবছরই বাজেটে এই জায়গা ক্রয়ের জন্য বরাদ্ধ রাখা হচ্ছে। কিন্তু পৌরসভার আর্থিক সংকট থাকায় সেই টাকা অন্য খাতে খরচ হয়, জায়গা ক্রয় হয় না। 

তিনি বলেন, এই অবস্থায় শহরের নানা স্থানে অন্যের জমিতে পৌরসভা কর্র্তৃপক্ষ ময়লা ফেলে আসছিল। এ নিয়ে অনেক সময় বাঁধাও এসেছে। তাছাড়া দূর্গন্ধ থাকতো এলাকাটিতে। এই অবস্থা দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন পৌরসবার মেয়র হিসেবে যে টাকা পাবেন তা জমিয়ে তিনি ময়লা ফেলা জায়গা ক্রয় করবেন। সেই চিন্তা থেকে তিনি ভাতার টাকা জমিয়েছেন।   

মেয়র আরো জানান, ইতিমধ্যে পৌরসভা এলাকার ঈশ্বরবা গ্রামের মাঠের মধ্যে গর্ত থাকা একটি জায়গা বিক্রির খবর পান। খবর পেয়ে তিনি খোজখবর নেন। ইটের ভাটার জন্য মাটি উঠানোয় এই গর্ত তৈরী হয়েছে। মেয়র জানান, গর্ত ক্রয় করলে ময়লা ফেলতে সুবিধা হবে আবার গর্তটিও ভরাট হবে। তাছাড়া স্থানটি জনবসতীর বাইরে। এই সব দেখে জমির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ৮ হাজার ৫ শত টাকা শতক মুল্যে ৮৬ শতক জমির বাইনা করেন। এই বায়নার পর তারা পৌরসভার পক্ষ থেকে ময়লা ফেলতে শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার চাঁচড়া গ্রামের আলমগীর হোসেন, তার স্ত্রী পাপিয়া বেগমের নামে থাকা ৫৭ শতক জমি ৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা দিয়ে রেজিষ্ট্রি করেছেন। বাকিটুকু দ্রুতই রেজিষ্ট্রি হবে বলে তিনি জানান। আশরাফুল আলম জানান, এখানে তিনি প্রাচীর তুলবেন, পাশাপাশি এই বর্জ্য দিয়ে সার তৈরীর প্লান্ট স্থাপন করবেন বলে আশা করছেন। 

কালীগঞ্জ পৌরসভার সচিব মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, মেয়র মোঃ আশরাফুল আলম নিজের টাকা দিয়ে জমির মুল্য পরিশোধ করেছেন। জমিটি সরাসরি পৌরসভার নামে রেজিষ্ট্রি হয়েছে। তবে পৌরসভার খাতায় রেজুলেশন করা হয়েছে মেয়র জমিটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দান করলেন। এটা একটি মহতি উদ্যোগ বলে তিনি দাবি করেন। 



No comments

Powered by Blogger.