স্বর্গীয় শহর বান্দরবানে (প্রথম পর্বঃ মেঘলা ও নীলগিরি)
তরিকুল ইসলাম ইবিঃ ১৩ মার্চ, ২০১৯ ইং, বুধবার ৷ সকালে চট্টগ্রামের হোটেল রয়েল টাইম থেকে গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ি আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় ৷ এখানে দুটি সার কারখানা পরিদর্শন ও দুপুরের খাবারের পর আমরা রওয়ানা দিলাম বান্দরবানের উদ্দ্যেশ্যে ৷ আমাদের গাড়ি চললো প্রায় এক ঘন্টা, পটিয়া এবং চন্দনাঈশ উপজেলা পেরিয়ে একটু বিরতির পর আবার চলতে লাগলো ৷ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া উপজেলাধীন ধর্মপুর রোড থেকে বান্দরবান রোডের পথে, একটু পর দেখা গেলো রাস্তার দুপাশে পাহাড় আর বনজঙ্গল ৷ মাঝে একটি সেনানিবাস পড়ল, সাথে বাহারী স্কুল-কলেজ ৷ আগের রাতে আমাদের সবার প্রিয় প্রফেসর ড. মামুন আল রশীদ স্যার আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন ৷ তিনি ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রাম এসে ট্যুরের হাল ধরেছেন, ফলে আমরা বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা পেলাম ৷
তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম বান্দরবান ৷ এখানে রয়েছে বেড়ানোর মতো সুন্দর সব জায়গা৷ বান্দরবান শহরের এক পাশেই আছে বোমাং রাজার বাড়ি ৷ বোমাং রাজার উত্তরসূরীরা এখন বসবাস করেন এ বাড়িতে৷ আর বান্দরবান শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী ৷ সাঙ্গু নদীর তীরে ছোটখাটো একটা ঝকঝকে শহর, পথে হাটলে মনে হবে এ পথ যেন শেষ না হয় ৷
এক. মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে পড়ন্ত বিকালে শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স ৷ প্রকৃতির কোলে এখানে আছে ঝুলন্ত সেতু, চিড়িয়াখানা আর হ্রদ ৷ কেউ বান্দরবান গেলে মেঘলায় তো নিশ্চিত যাবেই ৷ পাহাড় আর লেকের মধ্যে ঝুলন্ত সেতু দিয়ে সংযোগ করে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্র সত্যিই অনিন্দ্য সুন্দর ৷
রাঙ্গাদিয়া থেকে যাত্রা করার ঘন্টা দুইয়ের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে ৷ বাস পার্কিং নিয়ে একটু সমস্যা দেখা দিল, মূলত একটি সিন্ডিকেট বেশি অর্থের জন্য পরিবহণ আটকে টাকা আদায় করার চেষ্টা করে ৷ এটি মীমাংসা করে আমরা টিকিট নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম ৷
মেঘলায় পাহাড়ের একদম উপরে গেলে দেখা মিলবে অনেক গুপ্তধন। নানারকম বাহারি ফল আপনার নজর কেড়ে নেবে।ফরমালিনের যুগে এই ফ্রেশ ফলগুলোকে গুপ্তধনই বলা চলে। খেয়ে আসতে ভুল করা যাবে না ৷ পাহাড়ের ঢালে উৎপাদিত গাছ থেকেই পাহাড়িরা আপনাকে পেঁপে, কলা এগুলো পেড়ে এনে দিবে। অনেক ফলের চেহারাই হয়তো অচেনা মনে হতে পারে ৷
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রটি বান্দরবন শহরের প্রবেশদ্বার বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের পাশে অবস্থিত। বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশের প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বেই মেঘলা পর্যটন এলাকাটি অবস্থিত। মেঘলায় চিত্ত বিনোদনের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে রয়েছে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, সাফারি পার্ক, প্যাডেল বোট, ক্যাবল কার, উন্মুক্ত মঞ্চ ও চা বাগান।
এখানে সবুজ প্রকৃতি, লেকের স্বচ্ছ পানি আর পাহাড়ের চূঁড়ায় চড়ে দেখতে পাবেন ঢেউ খেলানো বান্দরবানের নয়নাভিরাম দৃশ্য। বেশ কিছু উঁচু নিচু পাহাড় দ্বারা ঘেরা একটি লেককে ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। ঘন সবুজ গাছ আর লেকের স্বচ্ছ পানি পর্যটকদের প্রকৃতির কাছাকাছি টেনে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
নীলগিরিঃ সকালের দার্জিলিং ১৪ মার্চ, ২০১৯ ইং ৷ এদিন একটু সকালেই হোটেল প্যারাডাইস থেকে নাস্তা করে চারটি চান্দের গাড়ি ভাড়া করে রওয়ানা দিলাম আমরা ৷ বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি ৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার দুইশত ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এ পর্যটন কেন্দ্র থেকে চারপাশের দৃশ্য দেখতে ছবির মতো ৷
আঁকা বাঁকা পথ আর উচু নিচু পাহাড়ের সর্পিল রূপ এক ভিন্ন মাত্রা এনে দিবে, অনেকেই গাড়িতে বসে স্থির থাকতে পারবে না ৷ হার্ট দুর্বল হলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে ৷ অবশ্য এই পথেই প্রতিদিন রুমা এবং থানচি উপজেলার আদিবাসীরা যাতায়াত করেন প্রতিদিন ৷ যাওয়ার সময় প্যান্টের পকেট থেকে কিছু টাকা গাড়িতে উঠার সিড়িতে পড়ে গিয়েছিলো ৷ এর মধ্যে একশত টাকার একটি নোট উড়ে যায়, বাকীটা হাত দিয়ে ধরে ফেলেছিলাম ৷ অবশ্য অনেকের ক্যাপ, চশমা এসবও পড়েছে বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ী ঐ আঁকা বাঁকা রাস্তায় ৷
রুমা এবং থানচির সংযোগ সড়কের পাশেই আর্মি ক্যাম্প ৷ এখানে সবাইকে আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রসহ গাড়ির নম্বর ড্রাইভার এর যাবতীয় তথ্য জমা দিতে হয় ৷ জমা নেওয়ার আসল কারণ পর্যটকদের নিরাপত্তা ৷ একটি নির্ধারিত সময় পর কোন গাড়ি ফিরে না আসলে আর্মিরা ধরে নেয় হয়তো কোন বিপদ ঘটেছে, তাই তারা উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়েন ৷ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিভাবে জনসেবায় নিয়োজিত তা এখান থেকে কিছুটা অনুমান করা যায় ৷ পথে আমরা দুই কাধি কলা কিনে নিয়েছিলাম ৷ নীলগিরি পৌঁছাবার পর কলা বন্টনের দায়িত্ব আমাকেই দেওয়া হয়েছিল ৷ পাহাড়ে ভ্রমণ করতে গেলে ক্লান্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক ৷ আর সেই ক্লান্তি দূর করতে চাইলে কলা খাওয়ার কোন বিকল্প নাই ৷
সবাই পৌঁছানোর টিকিট কাটা হলো, এখানকার যাবতীয় কর্মকান্ড সেনাবাহিনীর নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে করা হয়ে থাকে নীলগিরিতে রয়েছে হোটেল, রেস্ট হাউজ, হেডিপ্যাড আর চারিদিকে মেঘের খেলা ৷ আমরা বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরলাম আর স্যারদের সাথে ছবি তুললাম ৷ এখানে রাত্রি যাপনের কোন সুযোগ নাই, তাই চান্দের গাড়ির সময় দেওয়া থাকে ৷ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিরতে হয়, অন্যথায় জরিমানা গুণতে হয় ৷
No comments