কালীগঞ্জে গৃহবধুকে গণধর্ষণ: ৫ আসামি আটক, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী
স্টাফ রিপোর্টারঃ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সংঘবদ্ধ গৃহবধু ধর্ষণ মামলার এজাহারভুক্ত ৫ আসামির মধ্যে ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া ঝিনাইদহ আদালতে ২ জন আত্মসমর্পণ করেছে।
জানা গেছে, গত ১৩ জুলাই যশোর জেলার চৌগাছা থেকে আল আমিনকে এবং ১৪ জুলাই কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম থেকে ইউনুচ আলীকে ও সর্বশেষ ১৫ জুলাই রাতে জুয়েল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরদিকে বুধবার (১৫ জুলাই) আবু সাঈদ (২৫) ও আলী হোসেন (২৪) নামের দুই আসামি আদালতে আত্মসমর্পন করেছে।
এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া আসামি আল আমিন ও ইউনুচ আলী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতলেবুর রহমান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো জানান, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পূর্ববালিয়াডাঙ্গা গ্রামের লিবিয়া প্রবাসীর স্ত্রী তিন সন্তানের জননীকে গত ৩০ জুন উপরোক্ত ৫ আসামি সংবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই নারী নিজেই বাদি হয়ে শুক্রবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ৯ (৩) এবং পর্ণোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন ৮ (১)/৮(২) ধারায় কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
মামলার পর পুলিশ গত ১৩ জুলাই যশোর জেলার চৌগাছায় পালিয়ে থাকা আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে। আল আমিন কালীগঞ্জ উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। এর একদিন পর ১৪ জুলাই কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে ইউনুচ আলীকে এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। উপরোক্ত দুই আসামি ঝিনাইদহ দ্বিতীয় আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম কুমার ঘোষের উপস্থিতিতে ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। অপর আসামি জুয়েলকে গ্রেপ্তারে পুলিশ জোরালো অভিযান চালাচ্ছে।
গত ৯ জুলাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে কালীগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ, ব্লাকমেইল করে টাকা দাবি” শিরোনামে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ১০ জুলাই রাতে ভিকটিম ও নারী থানায় ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে গত ৯ জুলাই ভিকটিম ওই নারী জানান, বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শাহাজান আলীর পুত্র সাঈদ হোসেন, আব্দুল লতিফের পুত্র আলী হোসেন, আব্দুর রহিমের পুত্র জুয়েল, আল আমিন সহ ৫/৭ জন তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। দীর্ঘদিন ধরে আমাকে বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল এবং বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিতো।
ভিকটিম জানায়, স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর তিন মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। গত ৫/৬ মাস সাঈদ হোসেন নামে একজন আমাকে মোবাইলে ফোন দিতো। বিভিন্ন সময় ফোনে উত্ত্যক্ত করতো এবং ফোন দেওয়ার বিষয়ে কারও কাছে বললে আমাকে ও আমার সন্তানদের মেরে ফেলার হুমকি দিতো। আমি ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি। বিভিন্ন সময় ফোন দিয়ে কুপ্রস্তাব দিতো। এরপর ৩০ জুন মঙ্গলবার ঘটনার দিন রাতে সাঈদ ফোন দিয়ে আমাকে ঘরের বাইরে আসতে বলে। না খুললে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকবে। মানসম্মানের ভয়ে তিনি ঘরের দরজা খুলতেই তারা ৩/৪ জন আমকে বাড়ির পিছনের একটি আমাবাগানে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে তারা জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে সেই দৃশ্য ধারণ করে। এরপর তিনি বেহুশ হয়ে মাঠের মধ্যে পড়ে থাকেন। ২/৩ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে আছেন দেখতে পান। এরপর তিনি আস্তে আস্তে উঠে বাড়ির দিকে চলে আসেন।
তিনি আরো জানান, ঘটনার পরদিন সকালে আমি কাউকে কোন কিছু জানানোর আগেই তারা আমাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিতে শুরু। যেন আমি কাউকে কিছু না বলি। কাউকে কিছু বললে তারা আমার সন্তানের অনেক ক্ষতি করবে ও ধর্ষণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেব। আমি এই ভয়ে চুপ থাকি। এরপর তারা আমাকে ফোন দিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। নাহলে ধর্ষণের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। আমি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের কাছে থাকা ওই ভিডিও কয়েকজন কে দেখালে পরে বিষয়টি লোক জানাজানি হয়।
ভিকটিম ওই গৃহবধু এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন আর যারা আমাকে এই কাজ করেছে তাদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি। আমার মতো কোন মা যেন এমন ঘটনার স্বীকার না হয়।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান জানান, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় থানায় ৫ জনকে আসামি করে ওই গৃহবধু মামলা করেছেন। মামলার ৫ আসামির মধ্যে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। দুই জন আদালতে আত্মসমর্পন করেছে। তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুই আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে।
No comments