ঝিনাইদহের ৪৮ কিলোমিটারসড়কউন্নয়নকাজ মেয়াদের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেওআজোশেষ হয়নি, ৫ ইউনিয়নেরমানুষের ভোগান্তির শেষ নেই

চিত্রা নিউজ ডেস্ক-
২০১৭-১৮ অর্থ বছরে একনেক সভায় ঝিনাইদহের মহেশপুরে ৪৮.৫ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়নে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছিল ৭৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে কাজটি শুরু করে ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা, কিন্তু আজো সেই কাজটি শেষ হয়নি। ৪৮.৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৯.৭ কিলোমিটার বাকি রেখেই ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
সড়ক বিভাগ পূর্বের ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করাতে ব্যর্থ হয়ে ফেলে রাখা স্থানের জন্য আবারো দরপত্র আহ্বান করিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত জানুয়ারিতে দরপত্র গ্রহন শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনও কিছূ পক্রিয়া বাকি আছে। যে কারনে কাজটি শুরু করা যায়নি, তবে অল্প দিনেই কাজটি শুরু করার আশা করছেন তারা।
এদিকে খালিশপুর-যাদবপুর ভায়া জিন্নানগর সড়কের ফেলে রাখা ওই ২০ কিলোমিটারের কারনে গোটা এলাকার ৫ টি ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। সড়কটির অবস্থা এতোটাই খারাপ যে মানুষ পাঁয়ে হেটেও চলতে পারছেন না। ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা ভয়ে আর ওই সড়কে যাচ্ছেন না। সামান্য বৃষ্ঠি হলেই সড়কটিতে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগে খোজ নিয়ে জানাগেছে, মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর বাজার থেকে মহেশপুর-দত্তনগর-জিন্নানগর হয়ে যাদবপুর সড়কটি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সংষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরই প্রাক্কলন তৈরী করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ওই সড়কটি মেরামতের জন্য একনেকে ৭৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এরপর তিনটি প্যাকেজে বিভক্ত করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে তিনটি প্যাকেজের কাজ পান খুলনার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টার প্রাইজ। যার মধ্যে রয়েছে খালিশপুর থেকে সেজিয়া, সেজিয়া থেকে ভোলাডাঙ্গা ও ভোলাডাঙ্গা থেকে যাদবপর পর্যন্ত। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ কাজটি শুরু হয়ে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর শেষ করার কথা। ঠিকাদার সেভাবেই কাজ শুরু করেন, কিন্তু শেষ করতে পারেন নি। প্রথম দফায় কিছুটা কাজ করে বন্ধ রাখা হয়। এরপর আবারো শুরু করলেও দত্তনগর থেকে জিন্নানগর আনুমানিক ১২ কিলোমিটার ও সামন্তা থেকে মমিনতলা ৫ কিলোমিটার কাজ না করে ফেলে রাখেন।
ওই কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা আমির হোসেন সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, যে দুইটি স্থান তারা কাজ বন্ধ রেখেছেন সেখানে শুধুমাত্র ভেঙ্গেচুরে যাওয়া জায়গা মেরামত করে কার্পেটিং করার কথা। কিন্তু সড়কটির বর্তমান যে অবস্থা তাতে ওই স্থানে কোনো ভাবেই গর্ত ভরাট করে কার্পেটিং করলে থাকবে না। স্থানটি সম্পূর্ণ খুড়ে নতুন করে করতে হবে। যে কারনে তারা ওই দুইটি স্থানে কাজ করবেন না বলে সওজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি সওজ কর্মকর্তারা সরেজমিনে দেখে তারাও নতুন করে করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এদিকে সরেজমিনে দেখা যায় দত্তনগর থেকে জিন্নানগর ও সামন্তা থেকে মমিনতলা পর্যন্ত সড়কে বর্তমানে চলাচলের কোনো উপায় নেই। সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়ে ২/১ টি যানবাহন গেলেও প্রায়ই গর্তে আটকে থাকছে। স্থানিয় সামন্তা বাজারের বাসিন্দা বাদশা মিয়া জানান, একটু বর্ষা হলেই তারা এলাকা থেকে বের হতে পারছেন না। বিশেষ করে সামন্তা থেকে মমিনতলা পর্যন্ত এতোটাই খারাপ যে ওই ৫ কিলোমিটার কোনো ভাবেই চলাচল করা যাচ্ছে না। জিন্নানগর এলাকার বাসিন্দা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল আযীয জানান, মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর, বাশবাড়িয়া, নেপা, শ্যামকুড় ও স্বরুপপুর নামের ৫ টি ইউনিয়নের প্রায়৩ লাখ মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। দুইপাশে উন্নয়ন কাজ শেষ হলেও মাঝের ফেলে রাখা স্থানের কারনে সকলকেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তারাও ঢাকা থেকে বাড়িতে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের এলাকার কৃষকরা মাঠে উৎপাদিত কৃষিপন্যও বাজারে নিতে পারছেন না। ফলে অর্থ বরাদ্ধ থাকার পরও সঠিক ভাবে কাজ না করায় সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দার জানান, সড়কটির সার্ভে সময় যে অবস্থা ছিল পরবর্তীতে কাজ করার সময় আরো খারাপ হয়ে যায়। যে কারনে তারা নকশার পরিবর্তন করে আবারো টেন্ডার করিয়েছেন। কুষ্টিয়া সার্কেল অফিস জানুয়ারি মাসের দিকে দরপত্র আহবান করেন। আবিদ মনছুর নামের এক ঠিকাদার কাজটি পেয়েছেন। তবে ঠিকাদারের সঙ্গে এখনও কাগজপত্রের কিছু কাজ বাকি থাকায় কাজটি শুরু করা যায়নি, তবে অল্পদিনের মধ্যে শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন ওই কর্মকর্তা।






No comments

Powered by Blogger.