ভূঁতেরা বানায় বিল, জনগণ খায় কিল: বিদ্যুৎ বিল

তরিকুল ইসলামঃ
ঘরে ঘরে ভূঁতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কারণে সারাদেশে লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের নাভিশ্বাস উঠেছে। একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাসের থাবায় যেমন বিপর্যস্ত মানুষের জীবন-জীবিকা, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তার উপর সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ভূঁতুরে বিদ্যুৎ বিল, যাকে বলে 'মরার উপর খাঁড়ার ঘা'। কার্যত সরকার করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লাইন ধরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধকে নিরুৎসাহিত করলেও বিদ্যুৎ বিভাগ ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিলে বিলম্ব মাসুল মওকুফ করলেও ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়াসহ সব বিল পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে । অন্যথায়, সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ জরিমানা আদায়ের কথা প্রচার করে বিদ্যুৎ বিভাগ ৷ ফলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে আশঙ্কায় বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।
আমাদের বাড়ির দুই মাসের (মার্চ, এপ্রিল) বিল ৫৫০ টাকা, অথচ এক মাসের (মে) বিল ৬৩২ টাকা ! প্রতিবেশী একজনের নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল আসে ৪০০-৭০০ টাকা, অথচ মে মাসের বিল এসেছে ৫০০০ টাকা ! আরও আশ্চর্যের বিষয়, ঝিনাইদহ শহরে আমাদের মেসের এক মাসের বিল (মার্চ) ৯১২ টাকা ৷ দূই মাস (এপ্রিল, মে) মেসে না থেকেই (২জন ছিল) আসছে নাকি ৩৩০০ টাকা ! অভিযোগের পর সেই বিল আসে ৭৮৬ টাকা ৷ তাহলে, এখন ভূতের বিলের ২৫০০ টাকা গেল কই ?
বিশ্বজুড়ে সংক্রমিত করোনার কারণে দেশের এমন দুর্দিনে বিদ্যুৎ বিভাগের এমন‌ অমানবিক, নিষ্ঠুর আচরণ কোনো ভাবেই কাম্য নয়। অনেক বাসা-বাড়িতে অকল্পনীয়, অস্বাভাবিক বাড়তি বিদ্যুৎ বিল এসেছে। চলতি মাসে আমার নিজের বাসারও বিল এসেছে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার ফেব্রূয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসের আবাসিক গ্রাহকের বিদ্যুতের বিল নেওয়া বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। অথচ গত তিন মাসের যে বকেয়া বিল গ্রাহকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে তা দেখে অগণিত গ্রাহক আজ ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

জাগোনিউজে গত ৬ জুন বগুড়ায় এক গ্রাহকের অভিযোগ, 'বিগত মাসগুলোতে আমার বিদ্যুৎ বিল ৭০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে আসতো। কিন্তু গত এপ্রিল ও মে মাসে হঠাৎ বিল আসে তিন হাজার ৮০০ টাকা করে। আমি যেসব বৈদ্যুতিক জিনিস আগে ব্যবহার করতাম এখনও সেসব জিনিসই ব্যবহার করছি। তাহলে হঠাৎ কেন এক লাফে ৭০০ টাকার বিদ্যুৎ বিল ৩৮০০ টাকা আসবে ?' বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে গদবাধা অস্বীকার করে জানান, দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে গ্রাহকদের বাড়ি, দোকানসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে রিডিং লিখতে না পারায় অফিসে বসে গত বছরের আনুমানিক হারে বিল করা হয়েছে। তিন মাস পর লকডাউন শিথিল হওয়ায় মাঠকর্মীরা গ্রাহকদের রিডিং মিলিয়ে দেখতে পাচ্ছে অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। তবে গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে রিডিং দেখে সমন্বয় করে দেয়া হচ্ছে।
তোহেল চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রত্যাশা.কম এ মতামত লিখেছেন, "মিটার ভাড়া মওকুফ করুন নয়তো আমাদের জমির ভাড়া দিন" — 'নগদ টাকায় মিটার কিনে নিজের ঘরের ওয়ালে লাগিয়ে যদি ভাড়া দিতে হয়, তাহলে আমার জমিতে বিদ্যুতের খুঁটি ফ্রি থাকবে কেন?গ্রাহক নিজের টাকায় বিদ্যুতের মিটার ক্রয় করার পরও যদি প্রতি মাসে মাসে মিটার ভাড়া দিতে হয় ৷ তাহলে বিদ্যুৎ সংস্থা আমাদের জমিতে বিদ্যুতের খুঁটি পুতে লাইন টানিয়ে ফসলি জমি গুলো নষ্ট করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করার পরও আমাদের জমির ভাড়া দিবে না কেনো?'
অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বিদ্যুৎ বিভাগ ও এর আওতাধীন দফতর ও কোম্পানির বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'আগামী সাত দিনের মধ্যে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল প্রদানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিভাগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। কোনো অবস্থায় অতিরিক্ত বিল গ্রহণ করা যাবে না' ৷
জাতির এই ক্রান্তিকালে দেশের জনগণের সাথে এমন ঘটনা খুবই মর্মান্তিক ৷ বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের উচিত বিষয়টি অতি দ্রুত সমাধান করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা ৷ — ভূতের বিল দূর হোক, জনগণ মুক্তি পাক...
আহবানে,

তরিকুল ইসলাম মাসুম

শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ৷

No comments

Powered by Blogger.