জগতে কেউ মদ বেচে কেনেদুধ কেউ দুধ বেচে মদ
জীবন থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহন করি না। জগতে কেউ মদ বেচে কেনে দুধ । আবার কেউ দুধ বেচে কেনে মদ।
দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি। সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি ?
জীবনের সকল দ্বার রুদ্ধ করে দিলে হয়তো ভ্রান্তিকে ঠেকানো যায়, কিন্তু সত্যকে পাওয়া যায় না।
আকরিক ধাতু যেমন মটির সাথে মিশে থাকে, মাটি পরিস্কার করে তাকে পেতে হয়, জীবনের পথেও তেমনি সত্য ও মিথ্যা মিলে আছে। জীবন-অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এজন্য কাঙ্খিত হিরন্ময় সত্য উদ্ঘাটনে বাস্তবের কঠিন ও দুর্গম পথে প্রয়োজন নিঃশঙ্ক দীপ্ত পদচারণা।
ভেবে ছিলাম ফিরে আসবে মানবতা । দেখাবো নতুন পথ। দূর হবে হিংসা-বিদ্বেষ। কমবে ক্ষমতার অহংকার আর দম্ভ। কথা বলবে মানবতার । জড়াবে না কেউ অপরাধে । হবে না খুনোখুনি। দেখব না চুরি-ডাকাতি । পরিবর্তন আসবে চিন্তা-চেতনায় । আলো দেখব নতুন এক সূর্যের । কেটে গেলে অন্ধকার আসবে সুস্থতা । বিবেক বুদ্ধি ও চেতনা প্রমান করে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। একবার হাসান বসরী (রা:) কে জিজ্ঞেস করা হলো, আবু সায়ীদ! বলুন, আমাদের কী করা উচিত ? আমরা কি এমন লোকদের সাথে বসবো, যারা এত ভয়ের কথা বলে যে, আমাদের প্রাণ উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় ? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহর কসম! যারা তোমাকে ভয় দেখিয়ে সাবধান করে, যার কারণে তুমি (ঐ ভীতিকর বিপদ থেকে মুক্তির উপায় অন্বেষণ করবে এবং) মুক্তি পেয়ে যাবে-তাদের সাথে থাকাই তোমার জন্য কল্যাণকর ঐ সকল লোকদের সাথে থাকার চেয়ে, যারা তোমাকে আশ্বস্ত করতে থাকে (ফলে তুমি বিপদ সম্পর্কে উদাসীন হবে এবং) পরিশেষে ঐ ভীতিকর বিপদের শিকার হয়ে যাবে।
এলেনর রুজভেল্ট এবং মানবাধিকার সনদ (১৯৪৯) এর ১৯ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী - " প্রত্যেকের অধিকার আছে নিজের মতামত এবং অভিব্যক্তি প্রকাশ করার। এই অধিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে নিজের স্বাধীনচেতায় কোনো বাধা ব্যতীত অটল থাকা; পুরো বিশ্বের যে কোনো মাধ্যম থেকে যে কোনো তথ্য অর্জন করা বা অন্য কোথাও সে তথ্য বা চিন্তা জ্ঞাপন করার অধিকার "।
এক বন্ধু বললেন, আমরা পারছি না স্বভাব খারাপের জন্য। কিতাবে আছে গোয়ালে নেই নীতির কারণে।
অনেকে রাতের অন্ধকারে মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। গরিবের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। মানুষ এটুকুই চায়। বেশি কিছু নয়। এই মহামারী শেষ হতে সময় লাগবে। এত দ্রুত কোনো সমাধানই আসছে না। প্রকোপ কমছে। কিন্তু শেষ হচ্ছে না কোনো কিছু।
আগামী দুই বছর থাকবে কঠিন এক অবস্থা। কে বাঁচব, কে মরব কিছুই জানি না। জন্ম হলে মৃত্যু হবেই। কিন্তু এ কেমন মৃত্যু ? কত মানুষের লাশ পথেঘাটে পড়ে থাকছে। দুনিয়ার ক্ষমতাবান মানুষটি অসহায়। লন্ডভন্ড দুনিয়াকে কে স্বাভাবিক করবে ? আতঙ্ক ছাড়া কবে মানুষ পেরে উঠবে ? বলতে পারেন কেউ ? পারবেন না। মাঝেমধ্যে মনে হয় সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন। একটু পর ঘুম থেকে উঠে দেখব সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো কিছুর বদল হয় না। বরং খারাপ খবরগুলো আরও বেশি করে আসতে থাকে।
বাকস্বাধীনতা হচ্ছে স্বাতন্ত্র ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের ; নির্ভয়ে, বিনা প্রহরায় বা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা, অনুমোদন গ্রহণের বাধ্যতা ব্যতিরেকে নিজেদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার সমর্থিত মুলনীতি। [২][৩][৪][৫] " মত প্রকাশের স্বাধীনতা" (freedom of expression) শব্দপুঞ্জকেও কখনও কখনও বাকস্বাধীনতার স্থলে ব্যবহার করা হয়, তবে এক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতার সাথে মাধ্যম নির্বিশেষে তথ্য বা ধারণার অন্বেষণ, গ্রহণ এবং প্রদান সম্পর্কিত যেকোন কার্যের অধিকারকেও বুঝিয়ে থাকে।
ছবি করতে গিয়ে স্ত্রীর গয়নাও বিক্রি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘পথের পাঁচালি’ বিভূতিভূষণের বইয়ের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে কষ্ট করেছেন রাতদিন। সেই ছবির সব অভিনয়শিল্পীই বিখ্যাত হয়েছিলেন। উপন্যাসের ইন্দিরা চরিত্রের ‘বৃদ্ধাকে’ খুঁজতে গিয়ে ঝামেলা হয় সবচেয়ে বেশি । পঁচাত্তর বছরের গাল তোবড়ানো, মাজা ভেঙে শরীর সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া ‘বৃদ্ধা’ কোথায় পাবেন ? তারপর আবার অভিনয় জেনে কাজ করতে হবে সত্যজিতের মতো পরিশ্রমী মানুষের সঙ্গে। কত লোক আসে যায় কিন্তু মেলে না সেই চরিত্র।
হতাশার চূড়ান্ত মুহূর্তে ছবির এক অভিনেত্রী খবর দিলেন। কলকাতার অন্ধকার গলিতে এক কক্ষে অভাব-অনটনে নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধার বাস। নাম চুনিবালা দেবী। বয়সকালে টুকটাক অভিনয় করেছেন। শেষ বয়সে সহায়হীন অবস্থায় এক কক্ষে থাকেন। জগৎ-সংসারে কেউ নেই। সত্যজিৎ এই বৃদ্ধাকে দেখেই পছন্দ করলেন। ছবি করতে গিয়ে বৃদ্ধার সাবলীল অভিনয় এতটাই মুগ্ধ করত সত্যজিৎকে, অনেক সময় ‘কাট’ বলতে ভুলে যেতেন।
পথের পাঁচালি নির্মাণ শেষ হলো। বৃদ্ধারও জীবনের সময় ফুরিয়ে এলো। ছবির মুক্তি আর দেখে যেতে পারলেন না। বিদায়ের আগে জেনে যেতে পারলেন না সত্যজিতের ছবিতে অভিনয় করে বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে নাম লেখানোর কথা।
কি আশ্চর্য! গতিময় জীবনে একি ছন্দপতন! হঠাৎ করে কে যেন মাথায় সজোরে আঘাত করে আমার স্মৃতিশক্তি সব কেড়ে নিল। ঠিক যেনো বাংলা সিনেমার কাহিনীর মতো...... এখন সব আবছা আ...ব....ছা মনে পড়ছে। Once upon a time আমার একটা অফিস ছিল; পোশাক-আশাকের চমক ছিল; রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে কোথায় যেনো যেতাম...! পুরোটা ঠিক মনে পড়ছে না...কি যেন গাড়ি... ড্রাইভার..টং ঘর.. কাশবন..জ্যাম....ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থেকে ঘুমিয়ে যাওয়া...ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখা.... ।
স্বপ্ন ভেঙে গেলে দেখতাম জায়গারটা - জায়গায়ই ব্রেক করে বসে আছি। যেন ছিটানো ঔষধে ইদুর আটকে যাবার মতো। বিরক্ত হয়ে আবার ঘুমিয়েপড়ি।
হায়রে জীবন। এখন কে কারে ছুটি দেয় ? এত ছুটি পেয়েও আজ আমি বড্ড একা। তাইতো মনে বাজে মিনারের গানের সেই কথাগুলো-
"সাদা রঙের স্বপ্নগুলো দিলো নাকো ছুটি ;
তাইতো আমি বসে একা,
ঘাসফুলেদের সাথে আমি একাই কথা বলি
ঘাসফুলগুলো সব ছন্নছাড়া।।"
বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, দূরদর্শন আর গোটা বিশেক দেশী টিভি চ্যানেলসহ সোসাল মিডিয়ায় মৃত্যুর মিছিল দেখতে দেখতে পুরোপুরি খেই হারিয়ে ফেলেছি। লাশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, সাদা কাপড়ে মোড়ানো মহাশূন্যের নভোচারীরাই (পিপিই পরিহত স্বাস্থ্য ও সমাজ কর্মী) যেন এখন বিচরণ করছে সর্বত্র। যত্রতত্রই চোখে পড়ছে খাদ্যের জন্য খেটে খাওয়া মানুষের হাহাকার!
প্রতিদিন আক্রান্তের খবর আর লাশের সংখ্যা শুনে ভয়ে জড়সড় হয়ে আবার ঘুমুতে যাই। জেগে উঠেও দেখি সেই একই অবস্থা। আশা নেই, ভরসা নেই। চোখে অমানিশার অন্ধকার। এ এক অন্য রকম নেশার ঘোরে সকাল থেকে রাত অবধি কেটে যাচ্ছে সময়। স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতে রোজই টিভি টকশোতে চমৎকার সব দাওয়াই দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা পেশার বাইরের হেকিম সাহেবরা! তাদের কথায় তথাকথিত 'পরিশ্রমের' বদলে 'হাড়ভাঙা বিশ্রামে ' আজ আমি ভীষণ ক্লান্ত-অবসন্ন । কোনো দাওয়াইয়ে কাজ হচ্ছে না। সম্ভিৎ ফিরে পেতে উপায় একটাই। পুনরায় মাথায় আঘাত পাওয়া। কেন ? ফিল্মের শেষ ভাগে তো তা- ই থাকে। দেখেননি ? কিন্তু কে করবে সেই মধুর আঘাত ? কে ফিরিয়ে দেবে আমার সেই অফিস... ব্যস্ততা....টং ঘর... গৌরবময় অতীত ? জানি না। শুধু জানি স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতে দরকার মাথায় আবার একটি আঘাত। আমার বড্ড প্রয়োজন।
আমি এই বিভীষিকাময় করোনা মাৎসয়নাকে ভুলে থাকতে চাই। আমি বিশ্বাস করতে চাই একসাথে এতগুলো লাশের মিছিল কোনো সত্যি ঘটনা ছিল না।
আমার গ্রহে অদৃশ্য কোনো অনুজীব এভাবে ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারে না। ঈশ্বরকে বলবো-পুরো জীবনচক্র থেকে এই দুঃসময়টাকে ‘ শূন্য-মান ধরে বাড়িয়ে দিন এ গ্রহের মানুষের গড় আয়ূ। আমি বিশ্বাস করতে চাই PvB 'The Corona Era' ' বলতে কোনো কালেই কিছু ছিল না। পুরো সময়টা ছিল ওই জ্যামে থাকাকালীন কাচাঘুমের এক টুকরো বাজে দু:স্বপ্ন। কিন্তু হায়!! সেই মধুর আঘাতটি পেতেও আমাকে অপেক্ষা করতে হবে ১২ থেকে ১৮ মাস। মুখাপেক্ষী হতে হবে ধনী রাষ্ট্রসমূহের। ততদিনে মৃতের সংখ্যা কততে গিয়ে ঠেকবে কে জানে ?
দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি। সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি ?
জীবনের সকল দ্বার রুদ্ধ করে দিলে হয়তো ভ্রান্তিকে ঠেকানো যায়, কিন্তু সত্যকে পাওয়া যায় না।
আকরিক ধাতু যেমন মটির সাথে মিশে থাকে, মাটি পরিস্কার করে তাকে পেতে হয়, জীবনের পথেও তেমনি সত্য ও মিথ্যা মিলে আছে। জীবন-অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এজন্য কাঙ্খিত হিরন্ময় সত্য উদ্ঘাটনে বাস্তবের কঠিন ও দুর্গম পথে প্রয়োজন নিঃশঙ্ক দীপ্ত পদচারণা।
ভেবে ছিলাম ফিরে আসবে মানবতা । দেখাবো নতুন পথ। দূর হবে হিংসা-বিদ্বেষ। কমবে ক্ষমতার অহংকার আর দম্ভ। কথা বলবে মানবতার । জড়াবে না কেউ অপরাধে । হবে না খুনোখুনি। দেখব না চুরি-ডাকাতি । পরিবর্তন আসবে চিন্তা-চেতনায় । আলো দেখব নতুন এক সূর্যের । কেটে গেলে অন্ধকার আসবে সুস্থতা । বিবেক বুদ্ধি ও চেতনা প্রমান করে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। একবার হাসান বসরী (রা:) কে জিজ্ঞেস করা হলো, আবু সায়ীদ! বলুন, আমাদের কী করা উচিত ? আমরা কি এমন লোকদের সাথে বসবো, যারা এত ভয়ের কথা বলে যে, আমাদের প্রাণ উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় ? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহর কসম! যারা তোমাকে ভয় দেখিয়ে সাবধান করে, যার কারণে তুমি (ঐ ভীতিকর বিপদ থেকে মুক্তির উপায় অন্বেষণ করবে এবং) মুক্তি পেয়ে যাবে-তাদের সাথে থাকাই তোমার জন্য কল্যাণকর ঐ সকল লোকদের সাথে থাকার চেয়ে, যারা তোমাকে আশ্বস্ত করতে থাকে (ফলে তুমি বিপদ সম্পর্কে উদাসীন হবে এবং) পরিশেষে ঐ ভীতিকর বিপদের শিকার হয়ে যাবে।
এলেনর রুজভেল্ট এবং মানবাধিকার সনদ (১৯৪৯) এর ১৯ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী - " প্রত্যেকের অধিকার আছে নিজের মতামত এবং অভিব্যক্তি প্রকাশ করার। এই অধিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে নিজের স্বাধীনচেতায় কোনো বাধা ব্যতীত অটল থাকা; পুরো বিশ্বের যে কোনো মাধ্যম থেকে যে কোনো তথ্য অর্জন করা বা অন্য কোথাও সে তথ্য বা চিন্তা জ্ঞাপন করার অধিকার "।
এক বন্ধু বললেন, আমরা পারছি না স্বভাব খারাপের জন্য। কিতাবে আছে গোয়ালে নেই নীতির কারণে।
অনেকে রাতের অন্ধকারে মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। গরিবের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। মানুষ এটুকুই চায়। বেশি কিছু নয়। এই মহামারী শেষ হতে সময় লাগবে। এত দ্রুত কোনো সমাধানই আসছে না। প্রকোপ কমছে। কিন্তু শেষ হচ্ছে না কোনো কিছু।
আগামী দুই বছর থাকবে কঠিন এক অবস্থা। কে বাঁচব, কে মরব কিছুই জানি না। জন্ম হলে মৃত্যু হবেই। কিন্তু এ কেমন মৃত্যু ? কত মানুষের লাশ পথেঘাটে পড়ে থাকছে। দুনিয়ার ক্ষমতাবান মানুষটি অসহায়। লন্ডভন্ড দুনিয়াকে কে স্বাভাবিক করবে ? আতঙ্ক ছাড়া কবে মানুষ পেরে উঠবে ? বলতে পারেন কেউ ? পারবেন না। মাঝেমধ্যে মনে হয় সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন। একটু পর ঘুম থেকে উঠে দেখব সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো কিছুর বদল হয় না। বরং খারাপ খবরগুলো আরও বেশি করে আসতে থাকে।
বাকস্বাধীনতা হচ্ছে স্বাতন্ত্র ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের ; নির্ভয়ে, বিনা প্রহরায় বা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা, অনুমোদন গ্রহণের বাধ্যতা ব্যতিরেকে নিজেদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার সমর্থিত মুলনীতি। [২][৩][৪][৫] " মত প্রকাশের স্বাধীনতা" (freedom of expression) শব্দপুঞ্জকেও কখনও কখনও বাকস্বাধীনতার স্থলে ব্যবহার করা হয়, তবে এক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতার সাথে মাধ্যম নির্বিশেষে তথ্য বা ধারণার অন্বেষণ, গ্রহণ এবং প্রদান সম্পর্কিত যেকোন কার্যের অধিকারকেও বুঝিয়ে থাকে।
ছবি করতে গিয়ে স্ত্রীর গয়নাও বিক্রি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘পথের পাঁচালি’ বিভূতিভূষণের বইয়ের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে কষ্ট করেছেন রাতদিন। সেই ছবির সব অভিনয়শিল্পীই বিখ্যাত হয়েছিলেন। উপন্যাসের ইন্দিরা চরিত্রের ‘বৃদ্ধাকে’ খুঁজতে গিয়ে ঝামেলা হয় সবচেয়ে বেশি । পঁচাত্তর বছরের গাল তোবড়ানো, মাজা ভেঙে শরীর সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া ‘বৃদ্ধা’ কোথায় পাবেন ? তারপর আবার অভিনয় জেনে কাজ করতে হবে সত্যজিতের মতো পরিশ্রমী মানুষের সঙ্গে। কত লোক আসে যায় কিন্তু মেলে না সেই চরিত্র।
হতাশার চূড়ান্ত মুহূর্তে ছবির এক অভিনেত্রী খবর দিলেন। কলকাতার অন্ধকার গলিতে এক কক্ষে অভাব-অনটনে নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধার বাস। নাম চুনিবালা দেবী। বয়সকালে টুকটাক অভিনয় করেছেন। শেষ বয়সে সহায়হীন অবস্থায় এক কক্ষে থাকেন। জগৎ-সংসারে কেউ নেই। সত্যজিৎ এই বৃদ্ধাকে দেখেই পছন্দ করলেন। ছবি করতে গিয়ে বৃদ্ধার সাবলীল অভিনয় এতটাই মুগ্ধ করত সত্যজিৎকে, অনেক সময় ‘কাট’ বলতে ভুলে যেতেন।
পথের পাঁচালি নির্মাণ শেষ হলো। বৃদ্ধারও জীবনের সময় ফুরিয়ে এলো। ছবির মুক্তি আর দেখে যেতে পারলেন না। বিদায়ের আগে জেনে যেতে পারলেন না সত্যজিতের ছবিতে অভিনয় করে বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে নাম লেখানোর কথা।
কি আশ্চর্য! গতিময় জীবনে একি ছন্দপতন! হঠাৎ করে কে যেন মাথায় সজোরে আঘাত করে আমার স্মৃতিশক্তি সব কেড়ে নিল। ঠিক যেনো বাংলা সিনেমার কাহিনীর মতো...... এখন সব আবছা আ...ব....ছা মনে পড়ছে। Once upon a time আমার একটা অফিস ছিল; পোশাক-আশাকের চমক ছিল; রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে কোথায় যেনো যেতাম...! পুরোটা ঠিক মনে পড়ছে না...কি যেন গাড়ি... ড্রাইভার..টং ঘর.. কাশবন..জ্যাম....ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থেকে ঘুমিয়ে যাওয়া...ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখা.... ।
স্বপ্ন ভেঙে গেলে দেখতাম জায়গারটা - জায়গায়ই ব্রেক করে বসে আছি। যেন ছিটানো ঔষধে ইদুর আটকে যাবার মতো। বিরক্ত হয়ে আবার ঘুমিয়েপড়ি।
হায়রে জীবন। এখন কে কারে ছুটি দেয় ? এত ছুটি পেয়েও আজ আমি বড্ড একা। তাইতো মনে বাজে মিনারের গানের সেই কথাগুলো-
"সাদা রঙের স্বপ্নগুলো দিলো নাকো ছুটি ;
তাইতো আমি বসে একা,
ঘাসফুলেদের সাথে আমি একাই কথা বলি
ঘাসফুলগুলো সব ছন্নছাড়া।।"
বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, দূরদর্শন আর গোটা বিশেক দেশী টিভি চ্যানেলসহ সোসাল মিডিয়ায় মৃত্যুর মিছিল দেখতে দেখতে পুরোপুরি খেই হারিয়ে ফেলেছি। লাশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, সাদা কাপড়ে মোড়ানো মহাশূন্যের নভোচারীরাই (পিপিই পরিহত স্বাস্থ্য ও সমাজ কর্মী) যেন এখন বিচরণ করছে সর্বত্র। যত্রতত্রই চোখে পড়ছে খাদ্যের জন্য খেটে খাওয়া মানুষের হাহাকার!
প্রতিদিন আক্রান্তের খবর আর লাশের সংখ্যা শুনে ভয়ে জড়সড় হয়ে আবার ঘুমুতে যাই। জেগে উঠেও দেখি সেই একই অবস্থা। আশা নেই, ভরসা নেই। চোখে অমানিশার অন্ধকার। এ এক অন্য রকম নেশার ঘোরে সকাল থেকে রাত অবধি কেটে যাচ্ছে সময়। স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতে রোজই টিভি টকশোতে চমৎকার সব দাওয়াই দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা পেশার বাইরের হেকিম সাহেবরা! তাদের কথায় তথাকথিত 'পরিশ্রমের' বদলে 'হাড়ভাঙা বিশ্রামে ' আজ আমি ভীষণ ক্লান্ত-অবসন্ন । কোনো দাওয়াইয়ে কাজ হচ্ছে না। সম্ভিৎ ফিরে পেতে উপায় একটাই। পুনরায় মাথায় আঘাত পাওয়া। কেন ? ফিল্মের শেষ ভাগে তো তা- ই থাকে। দেখেননি ? কিন্তু কে করবে সেই মধুর আঘাত ? কে ফিরিয়ে দেবে আমার সেই অফিস... ব্যস্ততা....টং ঘর... গৌরবময় অতীত ? জানি না। শুধু জানি স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতে দরকার মাথায় আবার একটি আঘাত। আমার বড্ড প্রয়োজন।
আমি এই বিভীষিকাময় করোনা মাৎসয়নাকে ভুলে থাকতে চাই। আমি বিশ্বাস করতে চাই একসাথে এতগুলো লাশের মিছিল কোনো সত্যি ঘটনা ছিল না।
আমার গ্রহে অদৃশ্য কোনো অনুজীব এভাবে ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারে না। ঈশ্বরকে বলবো-পুরো জীবনচক্র থেকে এই দুঃসময়টাকে ‘ শূন্য-মান ধরে বাড়িয়ে দিন এ গ্রহের মানুষের গড় আয়ূ। আমি বিশ্বাস করতে চাই PvB 'The Corona Era' ' বলতে কোনো কালেই কিছু ছিল না। পুরো সময়টা ছিল ওই জ্যামে থাকাকালীন কাচাঘুমের এক টুকরো বাজে দু:স্বপ্ন। কিন্তু হায়!! সেই মধুর আঘাতটি পেতেও আমাকে অপেক্ষা করতে হবে ১২ থেকে ১৮ মাস। মুখাপেক্ষী হতে হবে ধনী রাষ্ট্রসমূহের। ততদিনে মৃতের সংখ্যা কততে গিয়ে ঠেকবে কে জানে ?
এম এ কবীর
সাংবাদিক
trynew70@gmail.com
সাংবাদিক
trynew70@gmail.com
No comments