দৌড়াবো কোন দিকে ?
প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান-
রাতের দীর্ঘ ঘুম শেষে জেগে উঠেই সকালে আমাদের তীব্র ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়।যার যার কাজের ধরণ অনুযাযী তার প্রস্তুতি চলতে থাকে। আল্লাহর নির্ধারিত ‘ইবাদাত শেষে কেউবা রান্নার কাজে, কেউবা অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতিতে,কেউবা মাঠে কাজের জন্য আবার কেউবা অন্যকোন পন্থায় রিযিক অন্বেষনে ছুটে চলে । আর এটাই আল্লাহর নির্দেশণা। কারণ আল্লাহ দিনকে দিয়েছেন জীবিকা অর্জনের জন্য। মহান আল্লাহ বলেন,
وَّ جَعَلۡنَا النَّہَارَ مَعَاشًا
“আর আমরা দিনকে করেছি জীবিকা আহরণের সময়” ( সূরা আন-নাবা-১৩)
আবার অন্যত্র মহান আল্লাহ বান্দাহকে জীবিকা অন্বেষনে বেরহয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করে বলেন,
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
“অতঃপর সালাত শেষ হলে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে খুব বেশী স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” ( সূরা আল-জুম‘আ-১০)
উপরের আয়াতদ্বয় থেকে বুঝা গেল জীবিকার চাহিদায় ছুটে চলা, ব্যস্ত থাকা দোষনীয় নয় বরং এটাই আল্লাহর নির্দেশ এবং এর মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিরন্তর চেষ্টা চালাতে হবে। তবে অবশ্যই সেটা হতে হবে মহান রবের নির্দেশনার আলোকে। দুনিয়াকে বাদ দিয়ে যেমন আখেরাতে সফলতা সম্ভব নয়, তেমনি আবার আখেরাতকে বাদ দিয়ে, শুধুমাত্র দুনিয়া কেন্দ্রীক ব্যস্ততা উভয় জগতকেই ব্যর্থতায় পরিণত করার জন্য যথেষ্ট। তাইতো মহান আল্লাহ বান্দাহকে এ দু‘আটি শিখিয়ে দিয়েছেন।
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থঃ হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।
[সূরা আল-বাক্বারাঃ ২০১]
বান্দাহর এতসব ব্যস্ততার মাঝে যেমন তার রিযিকের পানে নিরন্তর ছুটতে হবে তেমনি তার সকল ব্যস্ততার মূল লক্ষ্য হতে হবে নিজকে মহান আল্লাহর ক্ষমার যোগ্য করে তোলা এবং এর মাধ্যমে জান্নাত লাভের চুড়ান্ত বাসনা। এটিই মুমিনের প্রকৃত চাওয়া এবং পাওয়া। আর এর মাধ্যমেই সে হতে পারে প্রকৃত সফল! আর তাইতো মহান আল্লাহ বলেন,
وَ سَارِعُوۡۤا اِلٰی مَغۡفِرَۃٍ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ جَنَّۃٍ عَرۡضُہَا السَّمٰوٰتُ وَ الۡاَرۡضُ ۙ اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِیۡنَ۱۳۳﴾ۙ
“ আর তোমরা তীব্র গতিতে ছুটে চল (দৌড়াও) নিজেদের রবের ক্ষমার দিকে এবং সে জান্নাতের দিকে, যার বিস্তৃতি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য” ( সূরা আলে ইমরান-১৩৩)
আয়াতে মহান আল্লাহ দুটি বিষয়ের দিকে প্রতিযোগিতামুলকভাবে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। একটি হলো ক্ষমা ও অপরটি জান্নাত। সুতরাং মুমিন দৌড়াবে শুধুমাত্র আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত অর্জনের দিকে। অর্থাৎ একজনের মুমিনের সকল কর্মকান্ডই আবর্তিত হবে এ দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই।
আয়াতে ক্ষমার অর্থ আল্লাহর কাছে সরাসরি ক্ষমা চাওয়া হতে পারে। তবে অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এখানে এমন সব সৎকর্ম এর উদ্দেশ্য, যা আল্লাহ্ তা'আলার ক্ষমা লাভ করার কারণ হয়। এটাই মত। সাহাবী ও তাবেয়ীগণ বিভিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা করেছেন; কিন্তু সারবক্তব্য সবগুলোরই এক। এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘কর্তব্য পালন’ ইবনে-আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, ‘ইসলাম’। আবুল আলিয়া বলেছেন ‘হিজরত’। সায়ীদ ইবনে-জুবায়ের বলেছেন ইবাদাত পালন। আর ইকরিমা বলেছেন ‘তওবা’। এসব উক্তির সারকথা এই যে, ক্ষমা বলে এমন সৎকর্ম বুঝানো হয়েছে, যা আল্লাহর ক্ষমার কারণ হয়ে থাকে।
আল্লাহ্ তা'আলা এ আয়াতে ক্ষমাকে জান্নাতের পূর্বে উল্লেখ করে সম্ভবতঃ এদিকেই ইঙ্গিত করেছেন যে, জান্নাত লাভ করা আল্লাহর ক্ষমা ছাড়া সম্ভব নয়। কেননা, মানুষ যদি জীবনভর পুণ্য অর্জন করে এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে, তবুও তার সমগ্র পুণ্যকর্ম জান্নাতের মুল্য হতে পারে না। জান্নাত লাভের পস্থা মাত্র একটি। তা হচ্ছে আল্লাহ্ তা'আলার ক্ষমা ও অনুগ্রহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “সততা ও সত্য অবলম্বন কর, মধ্যবর্তী পথ অনুসরণ কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের সুসংবাদ লাভ কর। কারও কর্ম তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে না। শ্রোতারা বললোঃ আপনাকেও নয়কি- ইয়া রাসূলাল্লাহ। উত্তর হলোঃ আমার কর্ম আমাকেও জান্নাতে নেবে না। তবে আল্লাহ যদি স্বীয় রহমত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন।” [বুখারীঃ ৫৩৪৯, মুসলিমঃ ২৮১৬] মোটকথা এই যে, আমাদের কর্ম জান্নাতের মূল্য নয়। তবে আল্লাহ্ তাআয়ালার রীতি এই যে, তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ঐবান্দাকেই দান করেন, যে সৎকর্ম করে। বরং সৎকর্মের সামর্থ্য লাভ হওয়াই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির লক্ষণ। অতএব সৎকর্ম সম্পাদনে ক্রটি করা উচিৎ নয়।
উল্লেখ্য আয়াতে জান্নাত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এর বিস্তৃতি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সমান। আর জান্নাত শুধুমাত্র মুত্তাকীগণের জন্যে নির্মিত হয়েছে।
জান্নাতের প্রস্থতাকে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের প্রস্থতার সাথে তুলনা করে বুঝানো হয়েছে যে, জান্নাত খুবই বিস্তৃত। কারণ এর চাইতে বিস্তৃত কোন বস্তু মানুষ কল্পনা করতে পারে না। প্রশস্ততায় তা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে নিজের মধ্যে ধরে নিতে পারে। এর প্রশস্ততাই যখন এমন, তখন দৈর্ঘ্য কতটুকু হবে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। অবশ্য কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ জান্নাত দৈর্ঘ ও প্রস্থে সমান। কেননা তা আরশের নীচে গম্বুজের মত। গম্বুজের মত গোলাকার বস্তুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সমান হয়ে থাকে। এ বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, তিনি বলেছেনঃ “তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইবে তখন ফেরদাউস চাইবে; কেননা তা সর্বোচ্চ জান্নাত, সবচেয়ে উত্তম ও মধ্যম স্থানে অবস্থিত জান্নাত, সেখান থেকেই জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত। আর তার ছাদ হলো দয়াময় আল্লাহর আরশ। [বুখারীঃ ২৭৯০, ৭৪২৩]
জান্নাত মুত্তাকীগণের জন্যে নির্মিত হয়েছে। কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য সুস্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা বুঝা যায় যে, জান্নাত শুধুমাত্র মুত্তাকীগণের জন্যে নির্মিত হয়েছে। মি‘রাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়েছে । জান্নাতের বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতের এক ইট রৌপ্যের ও এক ইট স্বর্ণের, তার নীচের আস্তর সুগন্ধি মিশকের, তার পাথরকুচিগুলো হীরে-মুতি-পান্নার সমষ্টি, মিশ্রণ হচ্ছে, ওয়ারস ও যা’ফরান। যে তাতে প্রবেশ করবে সে তাতে স্থায়ী হবে, মরবে না, নিয়ামত প্রাপ্ত হবে, হতভাগা হবে না, যৌবন কখনও ফুরিয়ে যাবে না, কাপড়ও কখনও ছিড়ে যাবে না।” [মুসনাদে আহমাদ ২/৩০৪, ৩০৫, সহীহ ইবন হিব্বান: ১৬/৩৯৬]
লেখক পরিচিতি
প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান
আল- হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
রাতের দীর্ঘ ঘুম শেষে জেগে উঠেই সকালে আমাদের তীব্র ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়।যার যার কাজের ধরণ অনুযাযী তার প্রস্তুতি চলতে থাকে। আল্লাহর নির্ধারিত ‘ইবাদাত শেষে কেউবা রান্নার কাজে, কেউবা অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতিতে,কেউবা মাঠে কাজের জন্য আবার কেউবা অন্যকোন পন্থায় রিযিক অন্বেষনে ছুটে চলে । আর এটাই আল্লাহর নির্দেশণা। কারণ আল্লাহ দিনকে দিয়েছেন জীবিকা অর্জনের জন্য। মহান আল্লাহ বলেন,
وَّ جَعَلۡنَا النَّہَارَ مَعَاشًا
“আর আমরা দিনকে করেছি জীবিকা আহরণের সময়” ( সূরা আন-নাবা-১৩)
আবার অন্যত্র মহান আল্লাহ বান্দাহকে জীবিকা অন্বেষনে বেরহয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করে বলেন,
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
“অতঃপর সালাত শেষ হলে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে খুব বেশী স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” ( সূরা আল-জুম‘আ-১০)
উপরের আয়াতদ্বয় থেকে বুঝা গেল জীবিকার চাহিদায় ছুটে চলা, ব্যস্ত থাকা দোষনীয় নয় বরং এটাই আল্লাহর নির্দেশ এবং এর মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিরন্তর চেষ্টা চালাতে হবে। তবে অবশ্যই সেটা হতে হবে মহান রবের নির্দেশনার আলোকে। দুনিয়াকে বাদ দিয়ে যেমন আখেরাতে সফলতা সম্ভব নয়, তেমনি আবার আখেরাতকে বাদ দিয়ে, শুধুমাত্র দুনিয়া কেন্দ্রীক ব্যস্ততা উভয় জগতকেই ব্যর্থতায় পরিণত করার জন্য যথেষ্ট। তাইতো মহান আল্লাহ বান্দাহকে এ দু‘আটি শিখিয়ে দিয়েছেন।
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থঃ হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।
[সূরা আল-বাক্বারাঃ ২০১]
বান্দাহর এতসব ব্যস্ততার মাঝে যেমন তার রিযিকের পানে নিরন্তর ছুটতে হবে তেমনি তার সকল ব্যস্ততার মূল লক্ষ্য হতে হবে নিজকে মহান আল্লাহর ক্ষমার যোগ্য করে তোলা এবং এর মাধ্যমে জান্নাত লাভের চুড়ান্ত বাসনা। এটিই মুমিনের প্রকৃত চাওয়া এবং পাওয়া। আর এর মাধ্যমেই সে হতে পারে প্রকৃত সফল! আর তাইতো মহান আল্লাহ বলেন,
وَ سَارِعُوۡۤا اِلٰی مَغۡفِرَۃٍ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ جَنَّۃٍ عَرۡضُہَا السَّمٰوٰتُ وَ الۡاَرۡضُ ۙ اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِیۡنَ۱۳۳﴾ۙ
“ আর তোমরা তীব্র গতিতে ছুটে চল (দৌড়াও) নিজেদের রবের ক্ষমার দিকে এবং সে জান্নাতের দিকে, যার বিস্তৃতি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য” ( সূরা আলে ইমরান-১৩৩)
আয়াতে মহান আল্লাহ দুটি বিষয়ের দিকে প্রতিযোগিতামুলকভাবে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। একটি হলো ক্ষমা ও অপরটি জান্নাত। সুতরাং মুমিন দৌড়াবে শুধুমাত্র আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত অর্জনের দিকে। অর্থাৎ একজনের মুমিনের সকল কর্মকান্ডই আবর্তিত হবে এ দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই।
আয়াতে ক্ষমার অর্থ আল্লাহর কাছে সরাসরি ক্ষমা চাওয়া হতে পারে। তবে অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এখানে এমন সব সৎকর্ম এর উদ্দেশ্য, যা আল্লাহ্ তা'আলার ক্ষমা লাভ করার কারণ হয়। এটাই মত। সাহাবী ও তাবেয়ীগণ বিভিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা করেছেন; কিন্তু সারবক্তব্য সবগুলোরই এক। এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘কর্তব্য পালন’ ইবনে-আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, ‘ইসলাম’। আবুল আলিয়া বলেছেন ‘হিজরত’। সায়ীদ ইবনে-জুবায়ের বলেছেন ইবাদাত পালন। আর ইকরিমা বলেছেন ‘তওবা’। এসব উক্তির সারকথা এই যে, ক্ষমা বলে এমন সৎকর্ম বুঝানো হয়েছে, যা আল্লাহর ক্ষমার কারণ হয়ে থাকে।
আল্লাহ্ তা'আলা এ আয়াতে ক্ষমাকে জান্নাতের পূর্বে উল্লেখ করে সম্ভবতঃ এদিকেই ইঙ্গিত করেছেন যে, জান্নাত লাভ করা আল্লাহর ক্ষমা ছাড়া সম্ভব নয়। কেননা, মানুষ যদি জীবনভর পুণ্য অর্জন করে এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে, তবুও তার সমগ্র পুণ্যকর্ম জান্নাতের মুল্য হতে পারে না। জান্নাত লাভের পস্থা মাত্র একটি। তা হচ্ছে আল্লাহ্ তা'আলার ক্ষমা ও অনুগ্রহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “সততা ও সত্য অবলম্বন কর, মধ্যবর্তী পথ অনুসরণ কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের সুসংবাদ লাভ কর। কারও কর্ম তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে না। শ্রোতারা বললোঃ আপনাকেও নয়কি- ইয়া রাসূলাল্লাহ। উত্তর হলোঃ আমার কর্ম আমাকেও জান্নাতে নেবে না। তবে আল্লাহ যদি স্বীয় রহমত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন।” [বুখারীঃ ৫৩৪৯, মুসলিমঃ ২৮১৬] মোটকথা এই যে, আমাদের কর্ম জান্নাতের মূল্য নয়। তবে আল্লাহ্ তাআয়ালার রীতি এই যে, তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ঐবান্দাকেই দান করেন, যে সৎকর্ম করে। বরং সৎকর্মের সামর্থ্য লাভ হওয়াই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির লক্ষণ। অতএব সৎকর্ম সম্পাদনে ক্রটি করা উচিৎ নয়।
উল্লেখ্য আয়াতে জান্নাত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এর বিস্তৃতি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সমান। আর জান্নাত শুধুমাত্র মুত্তাকীগণের জন্যে নির্মিত হয়েছে।
জান্নাতের প্রস্থতাকে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের প্রস্থতার সাথে তুলনা করে বুঝানো হয়েছে যে, জান্নাত খুবই বিস্তৃত। কারণ এর চাইতে বিস্তৃত কোন বস্তু মানুষ কল্পনা করতে পারে না। প্রশস্ততায় তা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে নিজের মধ্যে ধরে নিতে পারে। এর প্রশস্ততাই যখন এমন, তখন দৈর্ঘ্য কতটুকু হবে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। অবশ্য কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ জান্নাত দৈর্ঘ ও প্রস্থে সমান। কেননা তা আরশের নীচে গম্বুজের মত। গম্বুজের মত গোলাকার বস্তুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সমান হয়ে থাকে। এ বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, তিনি বলেছেনঃ “তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইবে তখন ফেরদাউস চাইবে; কেননা তা সর্বোচ্চ জান্নাত, সবচেয়ে উত্তম ও মধ্যম স্থানে অবস্থিত জান্নাত, সেখান থেকেই জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত। আর তার ছাদ হলো দয়াময় আল্লাহর আরশ। [বুখারীঃ ২৭৯০, ৭৪২৩]
জান্নাত মুত্তাকীগণের জন্যে নির্মিত হয়েছে। কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য সুস্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা বুঝা যায় যে, জান্নাত শুধুমাত্র মুত্তাকীগণের জন্যে নির্মিত হয়েছে। মি‘রাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়েছে । জান্নাতের বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতের এক ইট রৌপ্যের ও এক ইট স্বর্ণের, তার নীচের আস্তর সুগন্ধি মিশকের, তার পাথরকুচিগুলো হীরে-মুতি-পান্নার সমষ্টি, মিশ্রণ হচ্ছে, ওয়ারস ও যা’ফরান। যে তাতে প্রবেশ করবে সে তাতে স্থায়ী হবে, মরবে না, নিয়ামত প্রাপ্ত হবে, হতভাগা হবে না, যৌবন কখনও ফুরিয়ে যাবে না, কাপড়ও কখনও ছিড়ে যাবে না।” [মুসনাদে আহমাদ ২/৩০৪, ৩০৫, সহীহ ইবন হিব্বান: ১৬/৩৯৬]
লেখক পরিচিতি
প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান
আল- হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
No comments