মহাশক্তি, মহাজ্ঞানী, মহাকারিগর আল্লাহ্ তা-আলা আছেন, পরকাল আছে, মানব সৃষ্টির রহস্য গবেষণায়, পবিত্র কোরআনের বাণীই তার প্রমাণ।

আলহাজ্ব এম.এ. কাদের-
আমি প্রথমে লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করি, সেই মহান রাব্বুল আল-আমিনের কাছে যিনি আমাকে আপনাকে সারা পৃথিবীর সব কিছুসহ আসমান, জমিন সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর মানুষ এখন অনেক এগিয়ে। মানুষ চন্দ্র জয় করে মঙ্গল গ্রহে বসবাসের চিন্তা করছে। মানুষ এখন অনেক সচেতন, এই সচেতনতার কারণে শিক্ষার হার বেড়েছে, মৃত্যুর হার কমেছে, আয়ু বেড়েছে। প্রতিটি মানুষই সুখী হতে চায়, সুখ পেতে চায়। সুস্থ জীবন নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চায়। এই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য একজন সচেতন মানুষ জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সব চেষ্টার মাধ্যমে দীর্ঘ আয়ু লাভ করতে চায়। এর পরেও মৃত্যু তাঁর কাছে আসবেই, যা থেকে পরিত্রাণ পাবার কোন সুযোগ নেই। অবধারিত এই মৃত্যুর জন্যই ধর্ম নিয়ে এত কথা। পৃথিবীতে প্রায় ৪৩০০ টি ধর্ম আছে, এর মধ্যে ১০টি ধর্ম উল্লেখযোগ্য। আবার যারা কোন ধর্মই বিশ্বাস করে না এর সংখ্যাও কম নয়। আমাদের আজকের আলোচনা যারা ধর্মকে বিশ্বাস করে না, তাদের উদ্দেশ্যে দুটি কথা। বর্তমানে পৃথিবীতে যত মানুষ আছে তার মধ্যে অনেকেই ধর্মকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস না করলেও প্রতিটি মানুষই মৃত্যুকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। আমরা যারা মুসলমান হিসাবে দাবী করি, আমাদের ধর্ম গ্রন্থে পবিত্র কোরআন পাকে উল্লেখ আছে, আল্লাহর সৃষ্টি জ্বীন এবং ইন্সান (মানুষ) মৃত্যুর পর পরকালে তার কৃতকর্মের জন্য হিসাব দিতে হবে। হিসাবের ফলাফল ভাল হলে তাঁকে জান্নাত প্রদান করা হবে অথবা হিসাবের ফলাফল খারাপ হলে তাকে অনন্তকাল, যে কালের শুরু আছে শেষ নাই, কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ করা হবে। এখন কথা হল, আমরা যারা নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করি তারা পবিত্র কোরআনের বাণী অনুযায়ী মৃত্যুর পর হিসাব্ নিকাশের মাধ্যমে সুখ-শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করলে অবশ্যই আমাদের ঈমানের দুর্বলতার কারণে নাস্তিকের শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর যদি পবিত্র কোরআনের বাণী অনুযায়ী পরকালকে বিশ্বাস করি, তাহলে অবশ্যই দুনিয়ায় ভাল কাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাকে খুশী করে বেহেস্তে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। পৃথিবীতে মুসলিম বাদে যত ধর্মাবলম্বী মানুষ ও নাস্তিক আছে আমি তাদের কথা বলব না, শুধুমাত্র আমরা যারা মুসলমান বলে নিজেকে দাবী করি তার মধ্যেও অনেকের মনে সন্দেহ আছে আল্লাহ আছে, কি নেই, পরকাল আদৌ আছে কিনা! একজন মুসলমান যদি মনে প্রাণে পবিত্র কোরআনের বাণী অনুযায়ী পরকালকে মৃত্যুর মত বিশ্বাস করতো, তাহলে ঐ মুসলমান দুনিয়ার সর্বোচ্চ ৭০/৮০ বৎসরের জীবনে কোন অপকর্ম করতে পারতো না। কারন পরকালের শাস্তি লক্ষ কোটি বৎসর নয়, অনন্তকাল যার শুরু আছে শেষ নেই। কাজেই সৃষ্টিকর্তা ও পরকাল সম্পর্কে আমাদের একটা পরিষ্কার ধারনা থাকা দরকার। যদি সত্য সত্যই সৃষ্টিকর্তা এবং পরকাল না থাকে, নাস্তিকের ধারনাই যদি সত্য হয় তাহলে আমরা কেনইবা শৃংখলার মধ্যে থেকে কষ্ট করে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করব? আসুন আমরা আলোচনান্তে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা মন থেকে মুছে ফেলি। পৃথিবীতে যত ধর্মের মানুষ আছে, তাঁরা তাঁর ধর্ম নিয়ে বিশ্বাস অবিশ্বাসের কারণ থাকলেও চলমান পৃথিবীর পিছনে কোন এক মহাশক্তি আছে, এটা তারা সকলেই বিশ্বাস করে। তাছাড়া প্রতিটি সৃষ্টির পিছনেই কেউ না কেউ আছে এটাও বিশ্বাস করে। কোন সৃষ্টি এমনিতেই হয় না, কাজেই পৃথিবী আসমান জমিন সাগর, মহাসাগর, চন্দ্র, সূর্য্য নক্ষত্র পাহাড় পর্বত প্রত্যেকটি সৃষ্টির উদ্দেশ্য, কার্যাবলী কেউ না কেউ পরিচালনা করছে, এটি সহজেই অনুমেয়। নাস্তিকের ধারণা প্রকৃতির নিয়মেই এসব সৃষ্টি হয়েছে এ কথাটি আদৌ সত্য নয়। কারণ প্রত্যেকটির সৃষ্টির কার্যাবলী প্রমান করে তার পিছনে কোন মহাশক্তির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং পরিচালনায় কেউ না কেউ আছেন এতে কোন সন্দেহ নাই। “পৃথিবীর সুক্ষ্ম কণা অনু পরমানু থেকে শুরু করে আরশ পর্যন্ত (সিদরাতুন মুনতাহা) সকল সৃষ্টিই আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণবাহী”। যাঁরা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করেন, আল্লাহ তাঁদের বুদ্ধিমান বলে প্রশংসা করেছেন। আর যারা চিন্তা থেকে বিমুখ থাকে তিনি তাদের নিন্দা করে বলেন, “আকাশ মন্ডল ও ভূ-মন্ডলের অনেক নিদর্শনের পাশ দিয়ে তারা অতিক্রম করে, অথচ তারা সে বিষয়ে উদাসীন” (সুরা ইউসুফ-১০৫)। অর্থাৎ আমরা যদি আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে চাই, তাহলে আমাদের শারীরিক গঠনের রহস্য নিয়ে গবেষণা করলেই আল্লাহর অস্তিত্ব ও উপস্থিতি সহজেই খুঁজে পাবো।
এরই আলোকে মায়ের গর্ভে জন্মের রহস্য মানুষের মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত যে নিখুঁত ভাবে সৃষ্ট, বিষয়টা বিশ্লেষণ করে আলোচনায় আনলে দেখা যাবে প্রতিটি মানুষেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংগ মাথা। যার মধ্যে সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম শিরা উপশিরা সহ অসংখ্য বস্তু রয়েছে। এই মাথা দিয়েই গবেষণা করেই মানুষ উন্নত চিকিৎসা, মহাশুন্যে পাড়ি দিয়ে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে, অসম্ভবকে জয়ের সম্ভাবনা দেখছে। এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মাথা-কে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অত্যন্ত কঠিন বস্তু শক্ত করোটিকা দিয়ে মোড়ক করা হয়েছে। এই মাথা ছোটখাটো যেনতেন আঘাতে সহজে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। যদি মানুষের শরীরের অন্য হাড়ের মত কম শক্ত হাড় দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মাথা মোড়ক করা হতো, তাহলে ছোট খাটো আঘাতে মানুষের মাথা ফেটে মারা যেত। অথবা বিকলাঙ্গ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতো। এই সৃষ্টি প্রকৃতির নিয়মে হয়নি। প্রকৃতি গবেষণা করে স্পর্শকাতর এই বিষয়ে সমাধান দিতে পারে না। এই ব্যাপারে যিনি গবেষণা করেছেন তিনি নিশ্চয়ই মহাপন্ডিত, মহাশক্তি, মহাজ্ঞানের অধিকারী। একই নিয়মে মানুষের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শ কাতর চোখ দুটিকে বসানো হয়েছে নিখুঁত ভাবে দুটি গর্তের মধ্যে। চোখ দুটিতে অতিদ্রুততার সাথে স্পর্শ করতে গেলেও স্পর্শ করার অনেক আগে চোখ দুটি আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। চোখ দুটি যদি নিখুঁতভাবে গর্তের মধ্যে না বসিয়ে মানুষের কপালে বসানো হতো তাহলে দেখতেও যেমন অসুন্দর হতো, অন্য দিকে অধিকাংশ মানুষের চোখ দুটি অল্প আঘাতে নষ্ট হয়ে অন্ধত্ব বরণ করত। এই নিখুঁত চিন্তা ভাবনা প্রকৃতি করে নাই।
একইভাবে মহাশক্তি ও মহাজ্ঞানীর নিখুঁত চিন্তা ভাবনা মানুষের স্পর্শকাতর অধিক গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী অঙ্গগুলো, হৃদপিন্ড, ফুসফুস, যকৃত, অগ্ন্যাশয়কে সুরক্ষার জন্য মানুষের বুকের উপরে শৃংখলা বেষ্টিত সেফগার্ড (পাজর) লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে যেনতেন আঘাতে গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মৃত্যু না ঘটে। গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গগুলি বিশ্রামহীনভাবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এটা নিশ্চয় নাস্তিকদের অনুমানের প্রকৃতির নিয়মের সমাধান নয়। মহাজ্ঞানীর গবেষণার সুচিন্তা ভাবনারই কার্যক্রম। মানবসৃষ্টির মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত প্রতিটি অংগ ২০৬ টি হাড়ের নিখুঁত বন্ধনে মানুষের প্রয়োজনীয় কর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মহাজ্ঞানী দক্ষ হাতে নিপুনভাবে সৃষ্টি করেছেন।
মানব সৃষ্টি মেরুদন্ডের প্রতিটি সংযোগ, ২ পায়ের হাঁটুর সংযোগ, দুই হাতের মাঝখানে কনুই সংযোগ, হাতের কবজির সংযোগ, দুই হাতে-পায়ের অসম আঙ্গুল এই সব সৃষ্টি প্রকৃতির নিয়মে নয়। কারণ প্রকৃতির নিয়ম হলে পায়ের মাঝখানে জয়েন্ট (হাঁটুর কব্জি) হাতের মাঝে কনুইতে কব্জি সৃষ্টি হতো না। প্রকৃতির নিয়মেই কব্জার সৃষ্টি না হয়ে সমানে হাড় বেড়ে যেত। কাজেই এ সমস্ত নিখুঁত চিন্তা ভাবনা মহাজ্ঞানীরই সৃষ্টি। আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য নিয়ে এমনি ভাবে আমরা যদি আলোচনায় আসি, তাহলে প্রতিটি অংগ সৃষ্টি, গুণাবলীর রহস্য দীর্ঘ সময়ের আলোচনায় শেষ হবে না। পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটার আশংকায় স্বল্প আলোচনায় শেষ করতে চাচ্ছি। মানুষের শরীরে কোটি কোটি কোষ দ্বারা সৃষ্ট ফুসফুসে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে দূষিত রক্ত শোধন করে হৃদপিন্ডে সরবরাহ করা হয়, হৃদপিন্ডের যাদুকারী গঠনে প্রতি মিনিটে ৭২ বার করে স্পন্দনে সমস্ত শোধিত রক্ত সরবরাহ করে কোটি কোটি কোষের খাদ্য যোগান দেয়। অতি জটিল সৃষ্টি কর্ণের ক্ষমতা, রহস্যজনক ছোট দুটি কিডনীর মাধ্যমে দূষিত রক্ত শোধন করে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে দূষিত পানীয় পদার্থ প্রসাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া, অদ্ভুত পাকস্থলীর গঠনে অগ্ন্যাশয়, পিত্তথলী, যকৃেতর রসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে খাদ্যদ্রব্য পরিপাকে ছাঁকন প্রক্রিয়ায় শক্তি কাজে লাগিয়ে বর্জ্য পদার্থ পায়ু পথে বের করে দেওয়া, শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করা, সুগন্ধ, দুর্গন্ধ অনুভব করা, জিহ্বা গঠনে বিভিন্ন স্বাদ নিরুপন করা এক অদ্ভুত রহস্য ঘেরা মানুষের মস্তিস্কে সঠিক চিন্তা ভাবনায় সারা পৃথিবীর, আসমান, জমিন, চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ নক্ষত্র সব কিছু আজ মানুষের হাতের মুঠোয়। এ সমস্ত অসাধ্য নাস্তিকের চিন্তায় প্রকৃতির নিয়মে ঘটার কথা নয়। এর পিছনে নির্ভুল, মহাশক্তি, মহাজ্ঞানী মহান রাব্বুল আল আমিন আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতির কথা শুধু কল্পনা, বাস্তব নয়। যাই হোক, প্রতিটি জীবেরই সৃষ্টি এবং তার কার্যাবলীর বিষয়ে গবেষণায় আনলে প্রকৃতির কোন কারনে নিখুঁত ভাবে এই সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। প্রতিটি জীবের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে মানুষ সৃষ্টির রহস্য পর্যালোচনায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, এ সৃষ্টি এক মহাকারিগর, মহাশক্তি, মহাজ্ঞানী মহা পরিকল্পনাকারীর নিখুঁত সৃষ্টি। কাজেই আমাদের ভ্রান্ত ধারনা আল্লাহ আছে কি নাই, পরকাল নিয়ে দ্বিমত পোষণ, নাস্তিকের অবাস্তব চিন্তা থেকে সরে এসে মানব সৃষ্টি গবেষণা করে সেই মহাশক্তি, মহাকারিগর, মহাজ্ঞানীই হলেন প্রমানিত পবিত্র কোরআনের বাণী, মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার। আল্লাহর তায়ালা পবিত্র কোরআনের সত্য বাণী হিসাবে আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আছেন, পরকাল আছে এবং প্রতিটি জ্বীন এবং ইনসানের (মানুষের) ন্যায়-অন্যায়ের বিচার, কবরে হাশরে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।


 

No comments

Powered by Blogger.