চেয়েছিলেন চাষের জমিতে পানি, ক্ষিপ্ত স্যালো মালিক দিলেন কৃষকের মাথায় চা দোকানে থাকা কেটলির গরম পানি
স্টাফ রিপোর্টার-
হতদরিদ্র নিখিল দাস (৩৫) চাষের জমিতে পানি চেয়েছিলেন, আর স্যালো মেশিন মালিক তার মাথায় গরম পানি ঢেলে দিল। লিখিলের চায়ের দোকানোর কেটলি দিয়ে তারই মাথায় আঘাত করে স্যালো মালিকের পুত্র বাপ্পি দাস। এতে তার মুখমন্ডল পুড়ে যায়। বাম চোখ দিয়ে ঠিকমতো দেখতে পারছেন না। ডান চোখের অবস্থাও খারাপ বলে অভিযোগ করেন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার হরদেবপুর গ্রামে শনিবার রাতে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। নিখিল দাস জানান, পুড়ে যাওয়ার থানায় মামলা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু উপস্থিত পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় দ্রুত চিকিৎসা করান, পরে মামলা নেওয়া হবে। কিন্তু তিনি হাসপাতাল থেকে আর থানায় যেতে না পারায় মামলা করতে পারেননি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন নিখিল দাস জানান, তার বাড়ি কালীগঞ্জের হরদেবপুর গ্রামে। ওই গ্রামের অধির কুমার দাসের পুত্র তিনি। তিনি স্ত্রী মুক্তি দাস, দুই কন্যা জ্যোতি দাস (১০) ও নন্দিনী দাস (৪) কে নিয়ে তার অভাবের সংসার। নিজের মাঠে কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। মাদ্র ২ শতক জমির উপর একটি বেড়ার ঘরে বসবাস করেন। গ্রামের একটি পুজা মন্ডপের পাশে একটি চাল দিয়ে তার নিচে চা-বিস্কুট বিক্রি করেন। এই চা বিক্রির টাকায় তার অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। তাই এবার ১৬ শতক জমি বাঁধা নিয়ে ধান চাষ করেছেন।
নিখিল দাস আরো জানান, জমি চাষ করার জন্য তিনি একই গ্রামের সুকুমার দাসের মাঠে থাকা একটি স্যালো মেশিনে পানির জন্য চুক্তি করেন। কথা থাকে বছরে ৪ হাজার টাকা তিনি স্যালো মালিককে দেবেন, বিনিময়ে গোটা মৌসুমে জমিতে পানি দিয়ে দেবেন। কিন্তু স্যালো মেশিনের মালিক ঠিকমতো জমিতে পানি সরবরাহ করেন না।
নিখিল দাস জানান, শনিবার রাতে গ্রামের ওই চায়ের দোকানে আসেন স্যালো মালিক শুকুমার দাস। তিনি জমিতে পানি দেওয়ার দাবি করেন। এ নিয়ে দুই জনের মধ্যে তর্ক হচ্ছিল। এমন সময় পাশে থাকা স্যালো মালিকের ছেলে বাপ্পি দাস তার দোকানের গরম কেটলি নিয়ে তার মাথায় সজোরে আঘাত করেন। এতে পানি লেগে মুখমন্ডল পুড়ে যায়। মাথাও কেটে গেছে। বর্তমানে তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার চোখেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানান।
স্ত্রী মুক্তি দাস জানান, ঘরে তাদের একটি টাকাও নেই। এই অবস্থায় নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। ইতিমধ্যে ৬ হাজার টাকার ঔষধ হাসপাতাল গেটের দোকান থেকে বাকিতে নিয়েছেন। মানুষের কাছে হাত পেতে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। তারপর স্বামীকে রিলিজ নিতে পারবেন। এখনও আরো টাকার ঔষধ লাগতে পারে বলে জানান মুক্তি দাস।
নিখিল দাস আরো জানিযেছেন, ঘটনার রাতেই তিনি প্রথম চলে যান থানায়। সেখানে যাবার পর উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাকে প্রথমে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। এরপর হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। তার শরীরের বর্তমানে যে অবস্থা কোনো ভাবেই থানায় যেতে পারছেন না। তাই তার মামলাটিও করা হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন।
অবশ্য এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে দ্রুতই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান।
No comments