ভৈরব নদী খনন, প্রভাবশালীর পুকুর বাঁচাতে নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে ১০ কৃষকের জমির মধ্যে ঠেলে দিল খননকারীরা

স্টাফ রিপোর্টার-
নদী পাড়ের এক প্রভাবশালীর পুকুর বাঁচাতে নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দিয়েছে খননকারীরা। আর এই গতিপথ ঘোরাতে গিয়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে ১০ কৃষকের জমির সীমানায়। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মাসলিয়া ও হাসিলবাগ গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়ি ভৈরব নদীর। বর্তমানে এই নদীটি খনন কাজ চলছে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ১০ জন কৃষক ছাড়াও এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অবিলম্বে তদন্তের মাধ্যমে সমাধানের দাবি করেছেন। এ নিয়ে ওই কৃষকরা নদী খনন কাজের সঙ্গে যুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত ভাবেও জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকার দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে বয়ে গেছে বুড়ি ভৈরব নদীটি। দীর্ঘ সময় দখল আর নানা স্থাপনা নদীটি প্রায় ভরাট হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীটি খননের কাজ শুরু করেছেন। “ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরন ও টেকশই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প” নামের একটি প্রকল্পের মাধ্য নদী খনন কাজ শুরু করেছেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে শুরু হয়ে ৩ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার ২৮২ টাকা বরাদ্ধে তিন কিলোমিটার খনন এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে বারোবাজার এলাকার হাসিলবাগ ও মাসলিয়া এলাকায় এই খনন কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বারোবাজার থেকে দক্ষিণে মাসলিয়া আর হাসিলবাগ গ্রামের মাঝ দিয়ে একটি নদী বয়ে গেছে। এটি বুড়ি ভৈরব বলে স্থানিয় ভাবে পরিচিত। বারোবাজার থেকে মাসলিয়া যাবার পথে এই বুড়ি ভৈরব নদীর উপর একটি সেতু রয়েছে। এই সেতুর দুই পাশে খনন কাজ চলছে। ৪/৫ টি খনন যন্ত্র দিয়ে এই খনন কাজ করা হচ্ছে। স্থানিয়রা জানান, সেতুটির পশ্চিমপাশে নদী কাটার সময় পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। সাদিকপুর গ্রামের প্রভাবশালী সিদ্দিকুর রহমানের হাসিলবাগ মৌজায় নদীর মধ্যে থাকা একটি পুকুর বাঁচাতে নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজিজুর রহমান নামের একজন জানান, অত্যান্ত পরিকল্পনা করে এটা করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসৎ কর্মকর্তা আর পুকুর মালিক। অর্থের বিনিময়ে তারা এই কাজটি করেছেন। আর এতে এলাকার ১১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
মাসলিয়া গ্রামের লাভলুর রহমান জানান, ইতিপূর্বে সাদিকপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান এই নদীর জায়গা দখল করে নদীর মধ্যেই হাসিলবাগ মৌজায় একটি পুকুর কাটেন। এ জাতীয় পুকুর অনেকের ছিল। নদী খননের সময় বেশিরভাগ পুকুর নদীর মধ্যে চলে গেছে। অনেক পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। কিন্তু সাদিকপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের পুকুরটি বাঁচানোর জন্য একটি মহল প্রথম থেকেই চক্রান্ত শুরু করে। তারা কৌশলে নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেন। যা খনন কাজের সময় তারা বাঁধা দিয়েছিলেন। কিন্তু সিদ্দিকুর রহমান প্রভাবশালী হওয়ায় এবং খনন কাজের সঙ্গে যুক্তরা নানা ভাবে ভয় দেখানোয় জোরালো প্রতিবাদ করতে পারেননি। এই অবস্থায় খনন কাজের সঙ্গে যুক্তরা নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে অন্যদিকে ঠেলে দিয়েছে। এতে তিনি ছাড়াও আব্দুল জান্নান, মিজানুর রহমান, মোঃ শহিদুজ্জামান, আব্দুর রাজ্জাক, জিয়াউর রহমান, বোরাক আলী, আতর আলী, দাউদ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক-২ নামের ১০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাদের মালিকানার জমি চলে গেছে নদীতে।
আরেক কৃষক আব্দুল জান্নান জানান, নদী খননের সময় গতিপথ ঘোরানোর হলেও খনন কাজের কিছু মাটি সিদ্দিকুর রহমানের দখলে থাকা পুকুরের মধ্যে পড়ে। নদী খনন কাজ শেষ হলে তিনি সেগুলো সরিয়ে ফেলেছেন। নদীর মধ্য থেকে উঠানো মাটি পাড়ে রাখলেও সিদ্দিকুর রহমান পরবর্তীতে সেগুলো অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছেন। এমনকি কিছু মাটি পুনঃরায় নদীর মধ্যেই ফেলেছেন। জান্নান আরো জানান, তারা এই বিষয়গুলি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু আজো কোনো ফল পাননি। উল্টো এই অভিযোগ করায় সিদ্দিকুর রহমান নানা ভাবে তাদের দেখে নেওয়ার হুমকী দিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ইনজামামুল লোহান জানান, তারা অভিযোগ পেয়েছেন। তাছাড়া নদী খননের সময় বহমান সীমানা ধরে করা হচ্ছে। এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় থেকেই নকশা করা। তবে তিনি শিকার করেন সিদ্দিকুর রহমানের পুকুরটির এক তৃতীয়াংশ নদীর মধ্যে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, নদী খননের সময় তলদেশ থেকে উঠানো মাটি তার পুকুরে পড়েছিল। তিনি সেই মাটি সরিয়ে ফেলতে গিয়ে অনেকটা নদীর মধ্যে ফেলেছেন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে তাকে নদীর জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন বলে জানান।
পুকুর মালিক সিদ্দিকুর রহমান জানান, তিনি নদীর জায়গা দখল করেননি। বরং নদী কাটার সময় তার পুকুরের মধ্যে মাটি ফেলা হয়েছিল। সেই মাটি তিনি প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্রয় করে সরিয়েছেন। সরানোর সময় নদীর মধ্যে কোনো মাটি পড়েনি বলে জানান। তিনি অপর পাড়ের জমির মালিকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, তাদের একজন ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন, তিনি দেননি। এই কারনে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা াভিযোগ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.