ঘাতকব্যাধি এইডস কি , চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
তরিকুল ইসলামঃ
আজ বিশ্ব এইডস দিবস ৷ এইডস একটি ভয়ানক ব্যাধি। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার অফ ডিসেস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন বা সি ডি সি ১৯৮১ সালে প্রথম এই রোগ প্রথম সনাক্ত করে। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এই মহামারী রোগের ভাইরাস (HIV) শনাক্ত করেন। ঘাতক ব্যাধি এইডস কি, কেন হয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সকলেরই জানা প্রয়োজন৷
এইডস (AIDS) হচ্ছে এইচ.আই.ভি. (HIV) নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এমন এক রোগ, যা মানুষের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। এইডস (AIDS) এর পূর্ণরূপ হল Acquired Immune Deficiency Syndrome. যেহেতু এইডস শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্রমান্বায়ে ধ্বংস করে, তাই এইডসে আক্রান্ত রোগী খুব সহজেই যে কোন সংক্রামক রোগে (নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া ইত্যাদি) আক্রান্ত হতে পারেন, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে। এইডস এর কোন প্রতিষেধক বা কার্যকর ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয় নি।
মানবদেহে এইচ.আই.ভি প্রবেশ করার সাথে সাথেই শরীরে এইডস এর লক্ষণ দেখা যায় না। এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেকশের কতদিন পর একজন ব্যক্তির মধ্যে এইডস এর লক্ষণ দেখা যাবে তা নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপর। এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস হওয়া পর্যন্ত সময়ের ব্যাপ্তি সাধারণত ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বৎসর এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে ৷ এই সময়কালে এইচআইভি সংক্রমিত একজন ব্যক্তি নিজের অজান্তেই অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে দিতে পারেন এইচ.আই.ভি ভাইরাস ৷
এইডস এর লক্ষণসমূহঃ
এইডস রোগের সম্ভাব্য ১৬ টি লক্ষণ দেয়া হলো যাতে বোঝা যাবে কেউ হয়তো HIV তে আক্রান্তঃ-
এক. জ্বর
ARS আক্রান্তের একেবারে প্রথম দিকের লক্ষণ হতে পারে মৃদু জ্বর, যা প্রায় ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে এবং এর সাথে থাকতে পারে কিছু সাধারণ মৃদু উপসর্গ যথা, ক্লান্তি, লিম্ফ গ্লান্ডের স্ফীতি, এবং গলা ব্যাথা।
দুই. ক্লান্তি
শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা লোপ পেয়ে ব্যাথা বোধ হয় এবং এটির কারণে ক্লান্তি এবং তন্দ্রা ভাব হতে পারে। HIV এর প্রথম এবং পরবর্তী লক্ষণ উভয়ই হতে পারে ক্লান্তি বোধ।
তিন. ব্যাথা যুক্ত পেশী, জোড়াতে ব্যাথা ও লিম্ফ স্ফীতি
ফ্লু, Mononucleosis, বা অন্য কোনও রকমের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, এমনকি সিফিলিস বা হেপাটাইটিস এর সাথে ARS লক্ষণ ভুল করা হতে পারে।
চার. ত্বকে ফুস্কুড়ি
AIDS এর প্রথম দিকে এবং পরবর্তীতে চামড়ায় ফুস্কুড়ি দেখা দিতে পারে।
পাঁচ. গলা এবং মাথা ব্যাথা
অন্যান্য লক্ষণের সাথে গলা এবং মাথা ব্যাথা অনেক সময় ARS এর প্রাসঙ্গিক লক্ষণ হতে পারে, প্রাথমিক অবস্থায় HIV ব্যপক সংক্রমনের কারণ হতে পারে।
ছয়. বমি ভাব, বমি করা, ডায়রিয়া
HIV এর প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০% থেকে ৬০% লোক স্বল্প মেয়াদী বমি ভাব, বমি করা বা ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ সকল লক্ষণ গুলি Antiretroviral থেরাপির কারণে দেখা দিতে পারে এবং পরবর্তীতে সংক্রমণের কারণেও তা হতে পারে।
সাত. ওজন কমে যাওয়া
রোগের ব্যাপক আক্রান্তের সময়ে মারাত্মক ডায়রিয়াতে সংক্রমণের ফল স্বরূপ ওজন কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কোন আক্রান্ত ব্যাক্তি যদি ডায়রিয়া বা দুর্বলতা এবং জ্বরে ৩০ দিনের বেশী একাধারে ভোগে এবং ঐ সময়ে তার ১০% শরীরের ওজন হারায় তবে সে Wasting Syndrome এ আক্রান্ত বলে ধরে নেয়া হয়।
আট. শুকনা কাশি
কয়েক সপ্তাহ ধরে যদি শুস্ক কাশি থাকে এবং সহজে সারবে না এমন মনে হয়, তবে তা HIV এর একটি লক্ষণ হতে পারে।
নয়. নিউমোনিয়া
জীবাণুর দ্বারা একটি মারাত্মক সংক্রমণ হল নিউমোনিয়া যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি সঠিক ভাবে কাজ না করে তবে হতে পারে।
অন্যান্য Opportunistic সংক্রমণের মধ্যে আছে Toxoplasmosis, একটি পরজীবী জনিত সংক্রমণ যা মস্তিস্ক কে আক্রান্ত করে; Cytomegalovirus নামক হারপেস ভাইরাস; এবং Thrush নামক ছত্রাক জনিত সংক্রমণ।
দশ. রাত্রি কালীন ঘাম
সংক্রমণের পরবর্তী একটি সাধারণ অবস্থা হল রাত্রিকালীন ঘাম এবং এটি কোনরূপ পরিশ্রম বা রুমের তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কিত নয়।
এগার. নখের পরিবর্তন
নখের পরিবর্তন যেমন Clubbing (নখ পুরু হয়ে বেঁকে যাওয়া), নখ ভেঙ্গে যাওয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে নখের রঙের পরিবর্তন (সমান্তরাল ভাবে বা আড়াআড়ি ভাবে কাল এবং বাদামী দাগ)।
বার. ছত্রাকের সংক্রমণ
Candida এর কারণে এক ধরণের ছত্রাক জনিত মুখের সংক্রমণ হল Thrush।
তের. বিভ্রান্তি বা মনোযোগে সমস্যা
বিভ্রান্তি এবং মনোযোগের অসুবিধা ছাড়াও, AIDS সম্পর্কিত dementia স্মৃতি শক্তির সমস্যার সাথে এবং আচরণ জনিত সমস্যা যেমন ক্রোধ বা খিটখিটে মেজাজ জনিত সমস্যার সাথে জড়িত।
চৌদ্দ. ঠাণ্ডা জনিত প্রদাহ অথবা যৌনাঙ্গের হারপেস
হারপেস ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াও HIV তে আক্রান্তের ঝুঁকির একটি অন্যতম কারণ। এটা এ কারণে যে যৌনাঙ্গের হারপেস এর কারণে ক্ষত হতে পারে যা যৌন ক্রিয়ার সময় খুব সহজে HIV সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
পনের. Tingling এবং দুর্বলতা
এটিকে peripheral neuropathy বলা হয়, যাতে সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যুক্ত ব্যাক্তিরা বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকে।
ষোল. অনিয়মিত ঋতুচক্র
ব্যাপক ভাবে HIV আক্রান্ত হলে অনিয়মিত ঋতুচক্রের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন তুলনামূলক কম এবং হালকা ঋতুস্রাব হতে পারে৷
তবে এইডস এর সূনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই। আবার এইডস আক্রান্ত ব্যাক্তি অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হলে সে রোগের লক্ষণ দেখা যাবে। কারো মধ্যে উপরের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে তার এইডস হয়েছে। তবে, কোন ব্যক্তির এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বিলম্ব না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এইডস কিভাবে ছড়ায়ঃ
বাতাস, পানি, খাবার কিংবা স্পর্শের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায় না। সাধারনত এইচআইভি মানবদেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থের (রক্ত, বীর্য ও বুকের দুধ) মাধ্যমেই ছড়ায়। সুনির্দিষ্টভাবে নিম্নলিখিত কিছু উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারেঃ-
এক. এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে অথবা তার ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা সূঁচ ব্যবহার করলে।
দুই. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ্য ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে।
তিন. আক্রান্ত ব্যাক্তি কতৃক ব্যবহৃত সুচ অথবা সিরিঞ্জ অন্য কোন ব্যাক্তি ব্যবহার করলে।
চার. আক্রান্ত ব্যক্তির কোন অঙ্গ অন্য কোন সুস্থ্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে।
এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের শিশুরও এইডস এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা গর্ভধারণের শেষদিকে অথবা প্রসবের সময় হতে পারে। তবে জিডোভুডিন নামক ওষুধ ব্যবহার করে এই সম্ভাবনা কিছুটা কমানো যেতে পারে।
পাঁচ. অনিরাপদ দৈহিক মিলনের ফলে অর্থাৎ এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত কারো সাথে কনডম ব্যবহার না করে যৌন সম্পর্ক করলে।
যৌনরোগ ও এইচ.আই.ভি'র সম্পর্কঃ
যৌনরোগ এবং এইচ.আই.ভি এর মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। যৌনরোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির এইচ.আই.ভি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একজন সুস্থ্য মানুষের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।এসটিডি (Sexually Transmitted Disease) এবং এসটিআই (Sexually Transmitted Infection) হচ্ছে এমন কিছু রোগ বা সংক্রমণ যা সাধারণত অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আবার কিছু কিছু যৌনরোগ যৌনমিলন ছাড়া অন্য উপায়েও সংক্রমিত হতে পারে। যৌনরোগসমূহ ভাইরাস অথবা ব্যকটেরিয়া ঘটিত হতে পারে, যেমন গনোরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, জননেন্দ্রিয়ের চর্মরোগ, ফোঁড়া ইত্যাদি। যৌনাঙ্গা বা এর আশেপাশে ঘা বা চুলকানি হলে, প্রসাবের সময় ব্যথা ও জ্বালা করলে, যৌনাঙ্গ থেকে পুঁজ পড়লে ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এইডস প্রতিরোধে করণীয়ঃ
এইচআইভি সংক্রমণ কিভাবে হয়, সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ করতে হবে। এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
এক. কোন কারণে রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হলে রক্তদাতার রক্তে এইচআইভি আছে কি না সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে।
দুই. যৌনসঙ্গী নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে এবং মিলনের আগে খোলাখুলি কথা বলে নিরাপত্তার ব্যপারে নিশ্চিত হতে হবে।
তিন. অনিরাপদ যৌনমিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে।
চার. যেকোনো যৌনরোগে আক্রান্ত হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পাঁচ. প্রতিবারই ইনজেকশনের নতুন সূঁচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
ছয়. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের ক্ষেত্রে, সন্তান গ্রহণ, গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
(তথ্য সূত্রঃ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, বাংলাদেশ ও উইকিপিডিয়া)
লেখকঃ তরিকুল ইসলাম মাসুম
শিক্ষার্থীঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ৷
মোবাইলঃ ০১৭৭৩২৪৫৪৯৬
আজ বিশ্ব এইডস দিবস ৷ এইডস একটি ভয়ানক ব্যাধি। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার অফ ডিসেস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন বা সি ডি সি ১৯৮১ সালে প্রথম এই রোগ প্রথম সনাক্ত করে। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এই মহামারী রোগের ভাইরাস (HIV) শনাক্ত করেন। ঘাতক ব্যাধি এইডস কি, কেন হয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সকলেরই জানা প্রয়োজন৷
এইডস (AIDS) হচ্ছে এইচ.আই.ভি. (HIV) নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এমন এক রোগ, যা মানুষের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। এইডস (AIDS) এর পূর্ণরূপ হল Acquired Immune Deficiency Syndrome. যেহেতু এইডস শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্রমান্বায়ে ধ্বংস করে, তাই এইডসে আক্রান্ত রোগী খুব সহজেই যে কোন সংক্রামক রোগে (নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া ইত্যাদি) আক্রান্ত হতে পারেন, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে। এইডস এর কোন প্রতিষেধক বা কার্যকর ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয় নি।
মানবদেহে এইচ.আই.ভি প্রবেশ করার সাথে সাথেই শরীরে এইডস এর লক্ষণ দেখা যায় না। এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেকশের কতদিন পর একজন ব্যক্তির মধ্যে এইডস এর লক্ষণ দেখা যাবে তা নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপর। এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস হওয়া পর্যন্ত সময়ের ব্যাপ্তি সাধারণত ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বৎসর এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে ৷ এই সময়কালে এইচআইভি সংক্রমিত একজন ব্যক্তি নিজের অজান্তেই অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে দিতে পারেন এইচ.আই.ভি ভাইরাস ৷
এইডস এর লক্ষণসমূহঃ
এইডস রোগের সম্ভাব্য ১৬ টি লক্ষণ দেয়া হলো যাতে বোঝা যাবে কেউ হয়তো HIV তে আক্রান্তঃ-
এক. জ্বর
ARS আক্রান্তের একেবারে প্রথম দিকের লক্ষণ হতে পারে মৃদু জ্বর, যা প্রায় ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে এবং এর সাথে থাকতে পারে কিছু সাধারণ মৃদু উপসর্গ যথা, ক্লান্তি, লিম্ফ গ্লান্ডের স্ফীতি, এবং গলা ব্যাথা।
দুই. ক্লান্তি
শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা লোপ পেয়ে ব্যাথা বোধ হয় এবং এটির কারণে ক্লান্তি এবং তন্দ্রা ভাব হতে পারে। HIV এর প্রথম এবং পরবর্তী লক্ষণ উভয়ই হতে পারে ক্লান্তি বোধ।
তিন. ব্যাথা যুক্ত পেশী, জোড়াতে ব্যাথা ও লিম্ফ স্ফীতি
ফ্লু, Mononucleosis, বা অন্য কোনও রকমের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, এমনকি সিফিলিস বা হেপাটাইটিস এর সাথে ARS লক্ষণ ভুল করা হতে পারে।
চার. ত্বকে ফুস্কুড়ি
AIDS এর প্রথম দিকে এবং পরবর্তীতে চামড়ায় ফুস্কুড়ি দেখা দিতে পারে।
পাঁচ. গলা এবং মাথা ব্যাথা
অন্যান্য লক্ষণের সাথে গলা এবং মাথা ব্যাথা অনেক সময় ARS এর প্রাসঙ্গিক লক্ষণ হতে পারে, প্রাথমিক অবস্থায় HIV ব্যপক সংক্রমনের কারণ হতে পারে।
ছয়. বমি ভাব, বমি করা, ডায়রিয়া
HIV এর প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০% থেকে ৬০% লোক স্বল্প মেয়াদী বমি ভাব, বমি করা বা ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ সকল লক্ষণ গুলি Antiretroviral থেরাপির কারণে দেখা দিতে পারে এবং পরবর্তীতে সংক্রমণের কারণেও তা হতে পারে।
সাত. ওজন কমে যাওয়া
রোগের ব্যাপক আক্রান্তের সময়ে মারাত্মক ডায়রিয়াতে সংক্রমণের ফল স্বরূপ ওজন কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কোন আক্রান্ত ব্যাক্তি যদি ডায়রিয়া বা দুর্বলতা এবং জ্বরে ৩০ দিনের বেশী একাধারে ভোগে এবং ঐ সময়ে তার ১০% শরীরের ওজন হারায় তবে সে Wasting Syndrome এ আক্রান্ত বলে ধরে নেয়া হয়।
আট. শুকনা কাশি
কয়েক সপ্তাহ ধরে যদি শুস্ক কাশি থাকে এবং সহজে সারবে না এমন মনে হয়, তবে তা HIV এর একটি লক্ষণ হতে পারে।
নয়. নিউমোনিয়া
জীবাণুর দ্বারা একটি মারাত্মক সংক্রমণ হল নিউমোনিয়া যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি সঠিক ভাবে কাজ না করে তবে হতে পারে।
অন্যান্য Opportunistic সংক্রমণের মধ্যে আছে Toxoplasmosis, একটি পরজীবী জনিত সংক্রমণ যা মস্তিস্ক কে আক্রান্ত করে; Cytomegalovirus নামক হারপেস ভাইরাস; এবং Thrush নামক ছত্রাক জনিত সংক্রমণ।
দশ. রাত্রি কালীন ঘাম
সংক্রমণের পরবর্তী একটি সাধারণ অবস্থা হল রাত্রিকালীন ঘাম এবং এটি কোনরূপ পরিশ্রম বা রুমের তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কিত নয়।
এগার. নখের পরিবর্তন
নখের পরিবর্তন যেমন Clubbing (নখ পুরু হয়ে বেঁকে যাওয়া), নখ ভেঙ্গে যাওয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে নখের রঙের পরিবর্তন (সমান্তরাল ভাবে বা আড়াআড়ি ভাবে কাল এবং বাদামী দাগ)।
বার. ছত্রাকের সংক্রমণ
Candida এর কারণে এক ধরণের ছত্রাক জনিত মুখের সংক্রমণ হল Thrush।
তের. বিভ্রান্তি বা মনোযোগে সমস্যা
বিভ্রান্তি এবং মনোযোগের অসুবিধা ছাড়াও, AIDS সম্পর্কিত dementia স্মৃতি শক্তির সমস্যার সাথে এবং আচরণ জনিত সমস্যা যেমন ক্রোধ বা খিটখিটে মেজাজ জনিত সমস্যার সাথে জড়িত।
চৌদ্দ. ঠাণ্ডা জনিত প্রদাহ অথবা যৌনাঙ্গের হারপেস
হারপেস ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াও HIV তে আক্রান্তের ঝুঁকির একটি অন্যতম কারণ। এটা এ কারণে যে যৌনাঙ্গের হারপেস এর কারণে ক্ষত হতে পারে যা যৌন ক্রিয়ার সময় খুব সহজে HIV সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
পনের. Tingling এবং দুর্বলতা
এটিকে peripheral neuropathy বলা হয়, যাতে সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যুক্ত ব্যাক্তিরা বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকে।
ষোল. অনিয়মিত ঋতুচক্র
ব্যাপক ভাবে HIV আক্রান্ত হলে অনিয়মিত ঋতুচক্রের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন তুলনামূলক কম এবং হালকা ঋতুস্রাব হতে পারে৷
তবে এইডস এর সূনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই। আবার এইডস আক্রান্ত ব্যাক্তি অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হলে সে রোগের লক্ষণ দেখা যাবে। কারো মধ্যে উপরের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে তার এইডস হয়েছে। তবে, কোন ব্যক্তির এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বিলম্ব না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এইডস কিভাবে ছড়ায়ঃ
বাতাস, পানি, খাবার কিংবা স্পর্শের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায় না। সাধারনত এইচআইভি মানবদেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থের (রক্ত, বীর্য ও বুকের দুধ) মাধ্যমেই ছড়ায়। সুনির্দিষ্টভাবে নিম্নলিখিত কিছু উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারেঃ-
এক. এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে অথবা তার ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা সূঁচ ব্যবহার করলে।
দুই. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ্য ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে।
তিন. আক্রান্ত ব্যাক্তি কতৃক ব্যবহৃত সুচ অথবা সিরিঞ্জ অন্য কোন ব্যাক্তি ব্যবহার করলে।
চার. আক্রান্ত ব্যক্তির কোন অঙ্গ অন্য কোন সুস্থ্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে।
এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের শিশুরও এইডস এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা গর্ভধারণের শেষদিকে অথবা প্রসবের সময় হতে পারে। তবে জিডোভুডিন নামক ওষুধ ব্যবহার করে এই সম্ভাবনা কিছুটা কমানো যেতে পারে।
পাঁচ. অনিরাপদ দৈহিক মিলনের ফলে অর্থাৎ এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত কারো সাথে কনডম ব্যবহার না করে যৌন সম্পর্ক করলে।
যৌনরোগ ও এইচ.আই.ভি'র সম্পর্কঃ
যৌনরোগ এবং এইচ.আই.ভি এর মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। যৌনরোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির এইচ.আই.ভি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একজন সুস্থ্য মানুষের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।এসটিডি (Sexually Transmitted Disease) এবং এসটিআই (Sexually Transmitted Infection) হচ্ছে এমন কিছু রোগ বা সংক্রমণ যা সাধারণত অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আবার কিছু কিছু যৌনরোগ যৌনমিলন ছাড়া অন্য উপায়েও সংক্রমিত হতে পারে। যৌনরোগসমূহ ভাইরাস অথবা ব্যকটেরিয়া ঘটিত হতে পারে, যেমন গনোরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, জননেন্দ্রিয়ের চর্মরোগ, ফোঁড়া ইত্যাদি। যৌনাঙ্গা বা এর আশেপাশে ঘা বা চুলকানি হলে, প্রসাবের সময় ব্যথা ও জ্বালা করলে, যৌনাঙ্গ থেকে পুঁজ পড়লে ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এইডস প্রতিরোধে করণীয়ঃ
এইচআইভি সংক্রমণ কিভাবে হয়, সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ করতে হবে। এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
এক. কোন কারণে রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হলে রক্তদাতার রক্তে এইচআইভি আছে কি না সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে।
দুই. যৌনসঙ্গী নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে এবং মিলনের আগে খোলাখুলি কথা বলে নিরাপত্তার ব্যপারে নিশ্চিত হতে হবে।
তিন. অনিরাপদ যৌনমিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে।
চার. যেকোনো যৌনরোগে আক্রান্ত হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পাঁচ. প্রতিবারই ইনজেকশনের নতুন সূঁচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
ছয়. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের ক্ষেত্রে, সন্তান গ্রহণ, গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
(তথ্য সূত্রঃ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, বাংলাদেশ ও উইকিপিডিয়া)
লেখকঃ তরিকুল ইসলাম মাসুম
শিক্ষার্থীঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ৷
মোবাইলঃ ০১৭৭৩২৪৫৪৯৬
No comments