বর্ষা মৌসুমেও জমিতে সেচ দিয়ে ধান চাষ, কোথাও কোথাও মাটি ফেটে চৌচির
স্টাফ রিপোর্টার-
অন্য বছরগুলোতে এই জমিতে একই সময় হাঁটু সমান পানি থাকতো, এবার সেচ দিয়েও জমিতে পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। তিন থেকে চার দিন পর পর সেচ দিলেও মাটি ফেটে যাচ্ছে। আর ফাঁটা জমিতে বেশি পানির প্রয়োজন হচ্ছে। দুঃখ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মুন্দিয়া গ্রামের কৃষক সাজু আহম্মেদ। তিনি দুই বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন। আরেক কৃষক তোতা মিয়া জানান, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমবে এই ভরসায় তুলনামূলক উচু জমিতে ধান চাষ করেন। কিন্তু এ বছর ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। পানির অভাবে মাঠের ধান গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেকে অধিক পয়সা ব্যয় করে সেচ দিচ্ছেন, আবার অনেকে গত বোরো মৌমুমে ধানের মুল্য ঠিকমতো না পেয়ে রোপা আমন মৌসুমে অধিক পয়সা ব্যয় করতে চাচ্ছেন না।
কৃষি বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৬৪৬ হেক্টর জমিতে ধান চাষ লক্ষ্যমাত্রা নিদ্ধারন করা হয়। কিন্তু চাষ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ১২৫ হেক্টর জমি। যার মধ্যে বেশিরভাগ জমিতে চাষ হয়েছে স্বর্ণা জাত। এছাড়াও রয়েছে ব্রী-৪৯ জাত। কৃষি বিভাগের হিসাবে চাষকৃত জমি থেকে ৩ লাখ ৫৮৮ মেঃ টান চাল উৎপাদন হবে। যা ধানে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪৪৩ মেঃ টন। হিসাব অনুযায়ী প্রতি একরে ধান উৎপাদন হবার কথা ৪৫ মন। অবশ্য কৃষকরা বলছেন, এবার ধানগাছ যেভাবে বেড়ে উঠছিল তাতে উৎপাদন আরো বেশি হতো। তাদের হিসাবে একরে ৫০ থেকে ৫৫ মন ধান উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ধান গাছ ঝিমিয়ে পড়ছে, এতে উৎপাদন কমে যাবার আশংরা রয়েছে।
সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের মাঠে কথা হয় কৃষক রফিকুল ইসলামে সঙ্গে। তিনি জানান, দুই বিঘা জমিতে স্বর্ণা জাতের ধানের চাষ করেছেন। জমি তৈরী, ধানগাছ রোপন, আগাছা পরিষ্কার, একদফা সার-কীটনাশক দিয়েছেন। ধান গাছগুলোও তর তর করে বেড়ে উঠছিল। আশা ছিল একবিঘায় ১৮ থেকে ২০ মন ধান পাবেন। কিন্তু পানির অভাবে হঠাৎ গাছগুলো থমকে গেছে। জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। এই সময় ধানের জমিতে বৃষ্টির পানি থাকে। কিন্তু এবার স্যালো মেশিন দিয়ে পানি নিতে হচ্ছে। এতে তাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এরপরও তিন-চার দিন পর পর পানি দিয়েও মাটি ভিজিয়ে রাখা যাচ্ছে না। দ্রুতই মাটি ফেটে যাচ্ছে, আর এই ফাটা মাটিতে সেচের পানিও বেশি প্রয়োজন হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার বুজুরুক-মুন্দিয়া গ্রামের কৃষক আনছার আলী জানান, এই বর্ষা মৌসুমে সেচের আওতার বাইরেও কিছু জমি কৃষকরা ধান চাষ করে থাকেন। তিনিও তুলনামূলক উচু এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। সেই জমি পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ধানগাছগুলো লাল হয়ে গেছে। এখন এই জমির ধান কিভাবে বাঁচাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
কৃষক রাকিবুল ইসলাম জানান, বোরো মৌসুমে তারা স্যালো মেশিন থেকে পানি নিয়ে ধান চাষ করেন। এক মৌসুমে বিঘা প্রতি তাদের ২ হাজার থেকে ২২ শত টাকা দিতে হয়। আর রোপা আমন মৌসুমে বেশির ভাগ বৃষ্টির পানি ব্যবহার হয়। মাঝে মধ্যে সেচ দিয়ে থাকেন। এর জন্য এক মৌসুমে ৭ থেকে ৮ শত টাকা দিতে হতো। এবার প্রথম থেকেই স্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে যে সাামন্য বৃষ্টি হচ্ছে তাতে এখনও জমিতে পানি জমছে না। ফলে স্যালো মেশিনের সেচের উপর তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। এর ফলে উচু জমির চাষ হওয়া ধানের গাছগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, আর নিচু জমিতে সেচ দিলেও ফলন নষ্ট হবার আশংকা রয়েছে।
কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ঝিনাইদহের মাঠে এবার ধান ক্ষেত দেখে কৃষকের পাশাপাশি তারাও খুব খুশি ছিলেন। আশা করেছিলেন লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন পাবেন। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে কিছুটা নষ্ট হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এবার জুন মাসে ৯৬ মিঃ মিটার, জুলাই মাসে ১৭১ মিঃ মিটার ও আগষ্ট মাসে ১৯৬ মিঃ মিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি রোপা আমন চাষের জন্য খুবই সামান্য।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুর রউফ জানান জানান, বর্তমানে ধান গাছ যে স্তরে আছে তাতে একটু পানি কম থাকলেও ফলনের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। তবে কৃষকের সেচ দিতে হলে খরচ বেশি হবে। তিনি বলেন, ধান গাছে যখন মোচা (থোড়) হতে তখন পানি কম হলে ফলন কমে যাবে। তিনি বলেন, এ বছর বৃষ্টির পানির খুবই সমস্যা হচ্ছে। তবে এখনও তারা আশাবাদি ২/৩ দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, উচু জমিতে যারা ধান চাষ করেছেন তাদের ক্ষেত্রে একটু বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে।
No comments