কৃষকের ঘরে ধান নেই, গুদামে জায়গা নেই, রাখার জন্য বস্তাও নেই, এই অবস্থায় ঝিনাইদহে চলছে বিশেষ বরাদ্দের ধান ক্রয়
স্টাফ রিপোর্টার-
কৃষকের ঘরে ধান নেই, গুদামে জায়গা নেই, রাখার জন্য বস্তাও নেই, এই অবস্থায় ঝিনাইদহে চলছে ধান ক্রয়। জেলার ৬ উপজেলায় বোরো ধান কাটা মৌসুমে ২৫৪০ মেঃ টন ধান ক্রয় হলেও এখন আমন রোপন মৌসুমে কেনা হবে আরো ৪১৯৩ মেঃ টন ধান। যা প্রকৃত মৌসুমের চেয়ে দ্বিগুন। কৃষকরা বলছেন, সকরারি কর্মকর্তারা এখন কাদের নিকট থেকে এই ধান ক্রয় করবেন এটা তারাই জানেন। অধিকাংশ কৃষকের ঘরে এখন আর বিক্রি করার মতো ধান নেই।অবশ্য খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে গুদামে জায়গা না থাকলেও অল্পদিনের মধ্যে কিছুটা জায়গা তৈরী হবে। তবে তাদের রয়েছে বস্তার সংকট। আর কৃষক ছাড়া অন্য কারো নিকট থেকে তারা ধান ক্রয় করবেন না। ইতিমধ্যে কৃষকের আরো একটি তালিকা প্রনয়ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্য বিভাগ।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় ৬৭৩৩ মেঃ টন বোরো ধান ক্রয় করা হবে। এর মধ্যে ২৫৪০ মেঃ টন ইতিমধ্যে ক্রয় করা হয়েছে। এখনও ৪১৯৩ মেঃ টন ধান ক্রয় করবেন তারা। যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে, চলবে গোটা আগষ্ট মাস। খাদ্য বিভাগ আরো জানিয়েছেন, জেলার ৬ টি উপজেলায় মোট খাদ্যগুদাম রয়েছে ৯ টি। এসব গুদামে ধারণ ক্ষমতা ১৯ হাজার মেঃ টন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খাদ্যগুদামগুলোতে ধান, চাল ও গম মিলিয়ে মজুদের পরিমন ছিল ২২ হাজার মেট্রিক টন। এই হিসাব মতে জেলার খাদ্যগুদামগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য মজুদ রয়েছে। এরপরও কেনা হচ্ছে ৪১৯৩ মেঃ টন ধান।
এছাড়া ধান কিনে রাখার মতো বস্তারও সংকট রয়েছে প্রতিটি গুদামে। জেলা খাদ্য অফিসের হিসাব মতে এই মুহুর্তে তাদের বস্তার প্রয়োজন ১ লাখ ২০ হাজার, কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের হাতে বস্তা আছে মাত্র ২০ হাজার। ফলে এই জেলায় খাদ্য বিভাগের বস্তারও সংকট রয়েছে। তারপরও চলছে ধান ক্রয়।
এদিকে একাধিক কৃষক বলছেন তাদের ঘরে বিক্রি করার মতো আর কোনো ধান নেই। বেশির ভাগ কৃষকই প্রয়োজনে ধান বিক্রি করেছেন। বড় কৃষকদের ঘরে কিছু কিছু ধান থাকতে পারে। কিন্তু প্রান্তিক কৃষকরা সরকারের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন। সরকারি ভঅবে ১০৪০ টাকা মন দরে ধান ক্রয় করা হচ্ছে, আর তারা বাজারে সাড়ে ৬ শত থেকে সাড়ে ৭ শত টাকা দরে ধান বিক্রি করেছেন।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুর জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধঅনের চাষ করেছিলেন। এই ধান চাষ করতে গিয়ে বাকিতে সার-ঔষধ ক্রয় করতে হয়েছে। ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে সেই দেনা পরিশোধ করেছেন। এছাড়া আমন মৌসুমের ধান রোপনও শুরু হয়েছে। এই রোপনের জন্যও পয়সার প্রয়োজন। সেই কারনেও কিছু ধান বিক্রি করেছেন। এখন শুধু খাওয়ার ধান ছাড়া আর কিছুই নেই। আরেক কৃষক গোলাম রসুল জানান, তিনি সরকারি ভাবে ধান বিক্রির জন্য ঘুরে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে প্রয়োজনে বাজারে কম মুল্যে বিক্রি করেছেন। সদর উপজেলার কুলফডাঙ্গা গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, সরকার সময়মতো কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয় না করে এখন আমন রোপন মৌসুমে ক্রয় করছেন। এটা কেন করছেন সেটা তাদের বোধগম্য নয়।
তবে একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয়ের নামে আসলে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এই ধান গুদামে দেওয়া হবে। গ্রামের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা অনেককে দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলছেন। এরপর তার কৃষি কার্ডটিও হতিয়ে নিচ্ছেন। বিনিময়ে তাকেও কিছু পয়সা দেওয়া হচ্ছে। এখঅবে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সরকারি বেশি মুল্যে এই ধান বিক্রি করছেন।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাকিব সাদ সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা সাধারণত কৃষকের কৃষিকার্ড, ভোটার আইডি ও তালিকাগুলো সঠিক আছে কি না দেখি। এভাবে সঠিক কৃষক নির্নয় করে ধান কেনা হচ্ছে। তিনি গুদামে জায়গার সংকট স্বীকার করে জানান, আগষ্ট মাসে অনেক মাল ডেলিভারি হবে। তখন গুদাম খালি হবে। তবে বস্তার সংকট রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, সঠিক কৃষক ছাড়া কেউ তালিকাভুক্ত হলে বিষয়টি অভিযোগ পেলে তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
No comments