শৈলকুপার ঐতিহ্যবাহী শাহী মসজিদ পরিদর্শনে আমাদের একদিন

তরিকুল ইসলাম, ইবি প্রতিনিধিঃ
শৈলকুপা শাহী মসজিদ ঝিনাইদহ জেলার একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন৷এটি শহরের অদূরে দরগাপাড়া নামক স্থানে অবস্থিত৷ আর এই শহরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী থাকেন৷গত বছর আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে শহরটি পরিদর্শনে যাই ৷ আমরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থান, শহর প্রভৃতি দেখতে বিভিন্ন ছুটিতে ঘুরে বেড়াই৷এরই ধারাবাহিকতায় গতবছর ৬জুলাই,২০১৮ইং এই নিদর্শনটি দেখতে আমাদের "উদ্ভাস ইনভেস্টিগেটর টিম" সিদ্ধান্ত নেই৷ ঠিক পরের দিনই অর্থাৎ ৭জুলাই ২০১৮,শনিবার আমরা যাই শৈলকুপা শহরে৷ টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সকাল আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে একত্রিত হই৷
তারপর মেইন গেট থেকে ঝিনাইদহগামী বাসে চড়ে গারাগন্জ বাস স্ট্যান্ডে নামি৷ এখান থেকে সিএনজিতে চড়ে শৈলকুপা শহরের অদূরে কবিরপুর স্ট্যান্ডে নামি৷ তারপর কুমার নদের উপর নির্মিত ব্রীজ পেরিয়ে শহরে প্রবেশ করতে হয়৷আমরা একটি ভ্যান ভাড়া করে শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় , শৈলকুপা সরকারি ডিগ্রি কলেজসহ শহরটি কিছুক্ষণ ঘুরে শাহী মসজিদে গেলাম৷শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে দরগা পাড়ায় মসজিদটি অবস্থিত৷মসজিদটির স্থাপনা, গম্বুজ, নকশার কারুকার্য, মাজার প্রভৃতি ভালকরে লক্ষ্য করলাম যা দেখতে খুবই চমকপ্রদ৷
শৈলকুপা শাহী মসজিদটি কুমার নদীর তীরে অবস্থিত যা দক্ষিনবঙ্গে সুলতানী আমলের মহাস্থাপত্যকীর্তির একটি অন্যতম নিদর্শন৷ঐতিহাসিকদের মতে, সুলতান আলাউদ্দিন হোসন শাহের যোগ্য উত্তরসূরি সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ এর শাসনামলে এটি নির্মাণ করা হয়৷ ১৫১৯সালে পিতার মৃত্যর পর নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ বাংলার সিংহাসনে বসেন৷ ১৫৩২সালে তিনি রাজকার্যে রাজধানী গৌড় থেকে ঢাকায় যাবার পথে তিনি কিছুদিন এখানে অবস্থান করেন৷সুলতান নুসরত শাহের সাথে ধর্মপরায়ন দরবেশ আরব শাহ ছিলেন৷ সেসময় শৈলকূপার পারিপ্বার্শিক অনুপম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন৷
সুলতানের অনুমতি পেয়ে আরব শাহ তাঁর দুই শিষ্য হাকিম খান ও সৈয়দ আব্দুল কাদের বাগদাদী সহ তিনজন এখানে থেকে যান৷ সুলতানের নির্দেশে মসজিদ নির্মাণ, সংস্কার, সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য কয়েকশত বিঘা জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেওয়া হয়৷মসজিদটির আয়তন প্রায় ৩২x১৯ বর্গফুট, দেয়ালগুলি সাড়ে পাঁচফুট প্রশস্ত৷
মসজিদটির চারপাশে গোলাকার, নকশাযুক্ত চারটি মিনার রয়েছে৷পূর্ব দেয়ালে তিনটি, দক্ষিণ ও পূর্ব দেয়ালে দুটি করে প্রবেশ পথ আছে৷ মূল প্রবেশ পথের দুপার্শ্বে দুটি ছোট মিনার আছে৷ ভেতরে দুটি স্তম্ভ আছে যার উপর ছয়টি গম্বুজ রয়েছে৷মসজিদের পূর্বে ৪৫x৩০বর্গফুট আয়নের মাজার রয়েছে৷ মাজারটিতে শাহ মুহম্মদ আরিফ ই রাব্বানী বা আরব শাহসহ আরও ছয়জন আউলিয়ার কবর রয়েছে৷
মসজিদের পশ্চিমে একটি ছোট সুন্দর দিঘী রয়েছে৷ সামনে উত্তরপার্শ্বে বড় ঈদগা এবং চারিদিক ইট নির্মিত প্রাচীর রয়েছে৷ঈদের সময় বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ঈদের নামাজ পড়তে আসেন৷ তাছাড়া প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণীর দর্শনার্থীরা দেখতে আসেন৷ছুটির দিনে অনেকেই মসজিদ প্রাঙ্গনে বেড়াতে যান৷ ঐতিহাসিক নিদর্শন শৈলকুপার শাহী মসজিদ সবাই আসতে পারেন যেকোন সময়৷

No comments

Powered by Blogger.