দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে কালীগঞ্ ইস্কনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।
স্টাফ রিপোর্টার:
শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর ৫৩২তম শুভ আবির্ভাব তিথি দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে ২১মার্চ বৃহস্পতিবার এক বর্ণাঢ্য হরিনাম সংকীর্ত্তন শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ কলেজপাড়া শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির হতে সকাল ৯টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের মূল সড়ক প্রদক্ষিণ করে মন্দির প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রাসহ প্রতিবছরের ন্যায় এবারো উৎসবটি পালন করতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির ইসকন কালীগঞ্জ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার , অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইস্কন ও সর্বস্তরের ভক্তবৃন্দ। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে চন্দ্রোদয় পর্যন্ত নির্জলা উপবাস , সকাল ৮টায় সংকীর্তন সহযোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বিকেল ৪টায় শ্রী শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত পাঠ, সন্ধ্যা ৬টায় শ্রীমম্নহাপ্রভুর মহা অভিষেক, ৭ টায় গৌর আরতি ও রাত সাড়ে ৮টায় অনুকল্প প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে শুভ গৌর পূর্ণিমা ২০১৯ইং । উক্ত অনুষ্ঠানমালা সফল করতে সকলের সবান্ধব উপস্থিতি ও সহযোগীতা একান্তভাবে কাম্য করেছেন উদ্যোক্তরা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসব আজ বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশে এই উৎসবটি ‘দোলযাত্রা’, ‘দোল পূর্ণিমা’ নামেও পরিচিত।
দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণবদের উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা এবং তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রং খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন।
কোনও কোনও স্থানে এ উৎসবকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। দ্বাপর যুগ থেকে পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির’।
সারাদেশে সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত এ উৎসব চলবে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পরস্পরকে আবির মাখিয়ে এ উৎসব উদযাপন করবেন।
দোল হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এর মাঝে আলাদা মর্ম ও মাহাত্ম্য যোগ করেছেন বৈষ্ণব অনুসারীরা একে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর শুভ আবির্ভাব তিথি গৌর পূর্ণিমা হিসেবে পালন করে ।দোলযাত্রা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসব পালনের রীতি স্থান ভেদে ভিন্ন হলেও উৎসবের মূল সুরে কোনো ভিন্নতা নেই। উল্লিখিত গানের কথাতেই যেন দোলযাত্রার মূল সুর ফুটে ওঠে। ভারতে এবং নেপালে এই উৎসবকে ‘হোলি’ বলা হয়। আবার এই একই উৎসবের অপর নাম ‘বসন্তোৎসব’।
বৈষ্ণব শাস্ত্র চৈতন্য চরিতামৃত পাওয়া যায় পূর্বে বহুকাল পর্যন্ত যা অর্পিত হয়নি এবং উন্নত ও উজ্জ্বল রসময়ী নিজের ভক্তি সম্পদ দান করার জন্য যিনি করুনাবশত কলিযুগে অবতীর্ণ হয়েছেন, যিনি স্বর্ণ থেকেও সুন্দর দ্যুতিসমূহের দ্বারা সমুদ্ভাসিত, সেই শচীনন্দন শ্রীহরি সর্বদা তোমাদের হৃদয়-কন্দরে স্ফুরিত হোন। ” ( চৈ.চ আদি ১/৪)আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে পৃথিবীতে ধর্মের চেয়ে অধিক অপধর্ম তথা ছলধর্মগুলোই যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সাই, নেড়া, সখীভেকী প্রভৃতি সহজিয়া সম্প্রদায় এর স্বকপোলকল্পিত ধর্ম প্রচারের ফলে যখন প্রকৃত সনাতন ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। তখন ভগবান সদাশিব ও মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীঅদ্বৈত আচার্য ঠাকুরকে পাঠালেন জগতে পুনরায় সনাতন ধর্মের স্থাপনা করতে। কিন্তু তিনি এসে দেখলেন পৃথিবীর অবস্থা বেগতিক, তাঁর পক্ষে তা শোধরানো অনেকটাই অসম্ভব। তখন তিনি জগতের মানুষের দুর্দশা উপলব্ধি করে গঙ্গাতীরে বসে তুলসীপত্র দিয়ে শালগ্রাম শিলার অর্চনা করতে লাগলেন, আর প্রচন্ড হুংকার করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জগতে আসার জন্য আহবান করতে লাগলেন। তাঁর সেই হুংকার এতটাই প্রকট ছিল যে, তা ব্রহ্মান্ডের সপ্ত আবরন ভেদ করে গোলকধামে শ্রীকৃষ্ণের কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে লাগল। ভক্তের প্রার্থনা শ্রবন করে ভগবান জগৎ উদ্ধারের নিমিত্তে ১৪০৭ শকাব্দের ফাল্গুনি পূর্ণিমার সন্ধ্যায় এই জগতে আবির্ভূত হলেন। সেই থেকে এই বিশেষ তিথিটি গৌর পূর্ণিমা নামে খ্যাত। ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সারা ভারতে ব্যাপকভাবে হরিনাম প্রচার করে রাধাকৃপা বিতরন করলেন। কিন্তু তবুও সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হলোনা। সেই কারনে তিনি পরবর্তীতে তাঁর সেনাপতি ভক্ত শ্রীল প্রভুপাদকে পাঠালেন। যিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) প্রতিষ্টা করে, সারা পৃথিবীজুড়ে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বানীর সার্থক প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। সেই সুবাদে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ব্যাপক পরিসরে এই গৌরপূর্ণিমা উৎসবের আয়োজন করে থাকে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও আগামী ২১মার্চ, বৃহস্পতিবার, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে সারাদেশে সকল ইসকন মন্দিরগুলোসহ প্রবর্তক শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির কালীগঞ্জে ব্যাপক পরিসরে এই উৎসবের আয়োজন করেছে ।
No comments