প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করে দূর্নীতিগ্রস্থ হ য ব র ল শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনা দরকার
আলহাজ্ব এম.এ. কাদের :
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” এ কথাটি শিক্ষিত সমাজের কারও অজানা নয়। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশী উন্নত। আমাদের দেশে শৃংখলা বহির্ভূত, অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থাই যেন আজ অনিয়ম দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে শিক্ষিতের হার ৭৩% হওয়া সত্বেও বিশ্বে উন্নত দেশের মত আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না। শিক্ষা একটি জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কাজেই এটাকে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা দূর্নীতিমুক্ত নির্ভুল এবং পরিকল্পিত ও কার্যকারী হলে যেমন একটা জাতি দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে, তেমনই ভাবে অপরিকল্পিত, ভুলসিদ্ধান্ত, দূর্নীতিগ্রস্থ হলে সে দেশ সহজেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এ জন্য নেপোলিয়ন বোনাপোর্টের “ওভ ুড়ঁ ধিহঃ ঃড় ফবংঃৎড়ু ধ হধঃরড়হ, ভরৎংঃ ফবংঃৎড়ু রঃং বফঁপধঃরড়হ” অর্থাৎ “যদি তুমি একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাও তাহলে প্রথমেই ঐ জাতির শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে।” উক্তিটি যথার্থ প্রমাণ রেখে গেছে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। কাজেই অধিক গুরুত্বের সাথে অভিজ্ঞ, জ্ঞাণী-গুনির সমন্বয় ঘটিয়ে বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রনয়ন, কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা দরকার।
বর্তমানে আমাদের দেশে অদক্ষ শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি, অপরিকল্পিত কারিকুলাম, প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়ন, কোচিং বানিজ্য ও ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, নোট ও গাইড বইয়ের দৌরাত্বের কারনে শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রকৃত শিক্ষার সুফল আমরা পাচ্ছি না।
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায় বর্তমন সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব রেখে চলতি অর্থ বছরে দেশের মোট বাজেটের ১৪.৬% অর্থাৎ প্রায় ৬৭ লক্ষ ৮ শত ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ প্রতিযোগিতামূলক নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকলেও ইতোপূর্বে বিভিন্ন দূর্নীতির পথ অনুসরণ করে অনেকে নিবন্ধিত হয়ে অসৎপথ অবলম্বন করে শিক্ষকের মত মহৎ পেশায় অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এ জন্যই শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতির কলংকের অধ্যায় সৃষ্টি করে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাছাড়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে অশিক্ষিত, অযোগ্য, অদক্ষ পরিচালনা কমিটি গঠন করার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনায় বিঘœ ঘটছে। অন্য দিকে সঠিক পরিকল্পনা (কারিকুলাম) না থাকায় অধিক বিষয় ও পড়াশুনার চাপে কোমলমতি শিশুদের মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে। অহেতুক অনেকগুলো বিষয়ের পাঠ্য বই স্কুলে শিশুদের আনা নেয়া বা বহন করে নেওয়া অমানবিক ও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাছাড়া যখন তখন হঠাৎ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়। ইতোপূর্বে শিক্ষক তৈরীর আগেই সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষা পাঠ গ্রহণে মহাসংকটে পড়ে, এ যেন ঘোড়ার আগে গাড়ী যাওয়া, অবাক কা-। তাছাড়া সৃজনশীলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তর ভিন্ন থাকার কথা হলেও ঐ বইয়ের (পাঠ্যপুস্তকের) নৈর্ব্যক্তিক (টিক) যে ৩০টি প্রশ্ন রাখা হয়েছে, সেটা সৃজনশীলের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ টিকের ৩০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে শিক্ষার্থীকে গোটা বইয়ের প্রত্যেকটি শব্দই হাফেজ সাহেবের মত মুখস্ত রাখতে হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ এবারের এস.এস.সি পরীক্ষায় বারটি বইয়ের সবটুকু মুখস্ত রাখা একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে কতটুকু সম্ভব, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা বিবেচনা করা হয়নি। এমনও দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থী রাতদিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬/১৭ ঘন্টা পড়েও তার সিলেবাস শেষ করতে পারছে না। একারনে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপে হতাশা বেড়ে যাচ্ছে। পড়াশুনার চাপে অনেক শিশুরই সঠিক মানসিক বিকাশে বিঘœ ঘটা, খিটমিটে স্বভাব, অল্প কারণে ধৈর্য্যহারা, ভাই-বোন পিতা-মাতার সাথে দুর্ব্যবহার বেড়েই চলেছে। অধিক পড়াশুনার কারণে খেলাধুলার সুযোগ মোটেই না থাকায় বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে সময় অতিরিক্ত পড়ার চাপে কোন বিনোদন না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে মরণ নেশার দিকে ঝুকে পড়ছে।
অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র ফাঁস গোটা জাতি বা দেশের জন্য একটি অভিশাপ। গত প্রায় ৩০ বছর ধরে পি.ই.সি, জে.এস.সি, এস.এস.সি, এইচ.এস.সি-র মত গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে আসছে। ইতোপূর্বে জানা গেছে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দুর্নীতির মহাবিপ্লব ঘটিয়ে দুর্নীতিবাজরা হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রেই নয়, চাকুরী ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে আসছে। যদিও গত এক বছর ধরে সরকার বিশেষ দৃষ্টি রাখায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের তেমন কথা শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু ফাঁসকারী চক্র রাতারাতি হাজার কোটি টাকা ইনকামে ডিজিটাল সুড়ঙ্গ তৈরীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই এ ব্যাপারে সরকারকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখে পরিকল্পনাকারীকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব কাজ হয়ে থাকে।
সঠিক পরিকল্পনার অভাবে অনেক পরীক্ষার্থীর খাতা, এমনকি বোর্ড পরীক্ষার খাতাও অবমূল্যায়ন হয়ে থাকে। অনেক সময় দুর্নীতির মাধ্যমে বোর্ড থেকে অদক্ষ পরীক্ষকদের মধ্যে খাতা বন্টন করা হয়। ইতোপূর্বে এমনও শোনা গেছে অনেক শিক্ষক শিক্ষা বোর্ড থেকে নিজ বিষয়ের খাতা না পেয়ে অন্য বিষয়ের খাতা দেখেছেন, তাছাড়া পরীক্ষককে তিনশত খাতা দেখার জন্য মাত্র দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়, যা একেবারেই অসম্ভব। যেখানে একটি খাতা মূল্যায়ন করতে কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট সময় দরকার, সেই হিসাবে তিনশত খাতা দেখার জন্য একশত পঞ্চাশ ঘন্টা দরকার। এই সময়ের অভাবেই অনভিজ্ঞ, অদক্ষ পরীক্ষক তার আত্মীয়-স্বজন, ছেলে-মেয়ে, এমনকি তার কাছে টিউশনিতে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়েও খাতা মূল্যায়ন করিয়ে থাকেন। এ কারনে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কম নম্বর পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে একেবারেই ভেঙে পড়ে। এসব কারণে অনেক পরীক্ষার্থী খাতাকল করে ত্রুটি পেলেও ঐ অদক্ষ পরীক্ষকের বিরুদ্ধে কোন শাস্তির বিধান আইনে রাখা হয়নি। কাজেই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না।
শিক্ষাই যেখানে জাতির মেরুদেন্ড সেখানে অপরিকল্পিত, দুর্নীতিগ্রস্থ শিক্ষাব্যবস্থাকে এত তাচ্ছিল্যভাবে দেখার কোন সুযোগ নাই। কারণ আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষা বিভাগের অনিয়ম দুর্নীতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই প্রতিযোগীতামূলক দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। অনেক দূর্নীতিবাজ শিক্ষক, সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে বই প্রকাশনী, কোম্পানীর সাথে আর্থিক সুবিধা পাওযার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে অহেতুক অপ্রয়োজনীয় নোট বই, গাইড বই শিক্ষাথীদের কেনার জন্য বাধ্য করে থাকে। তাছাড়া অনেক ক্লাস শিক্ষক তাদের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য বাধ্য করেন, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের কিছু কিছু শিক্ষক তাদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর বা ফেল করানোর হুমকিও দিয়ে থাকেন।
মান সম্মত শিক্ষার জন্য কোচিং বানিজ্য একটি বড় বাঁধা। ইদানিং বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজের ক্লাস না করে কোচিং, টিউশানি প্রাইভেট পড়ার দিকে বেশী ঝুকে পড়েছে। সরকার যেখানে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বাজেটের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে চায়, তখনই অধিক ক্ষমতাধর অপশক্তি কোচিং বানিজ্যের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। কারণ কোচিং বানিজ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগে হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া এ কোচিং সেন্টারগুলো বেশীর ভাগই রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত। বিশেষ করে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষার শেষে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী অংশ গ্রহণ করে থাকে। এতে করে ঢাকা শহরে অবস্থানের জন্য বাড়তি চাপ অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। তাছাড়া মেয়েদের জন্য নিরাপদ মেস (আবাসস্থল) পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক মহিলা মেসে তদারকিতে অসৎ, খারাপ মহিলা থাকার কারনে কোচিং করতে যাওয়া কোমলমতি নিষ্পাপ মেয়েদের ফুসলিয়ে বা ভয়ভীতি অথবা বিষয়টি গোপন রেখে বেড়াতে নিয়ে যেয়ে সম্ভ্রমহানী করার মত ঘটনা ঘটে থাকে। এইচ.এস.সি পাশের পর উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে পরিকল্পিত নিয়ম না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারে না। অনেক সময় একই দিনে বা পরের দিন কয়েক জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। যেমন: আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরের দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরের দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরের দিন বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে যা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কোন ভাবেই সম্ভব হয়ে উঠেনা।
আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা মূলতঃ দুর্নীতির কারনেই এগিয়ে যেতে পারছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অনুধাবন করে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিকে নিঃশেষ করার জন্য জিরোটলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই নীতি বাস্তবায়ন হলেই শিক্ষা ব্যবস্থায় দলমত নির্বিশেষে সঠিক প্রতিযোগীতার মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ হবে। সৎ, যোগ্য মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিতে হবে। এঁদের দ্বারা পাঠদানেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস অভিমুখে আবার ফিরে আসবে। শিক্ষা কারিকুলাম অবশ্যই বিচার বিশ্লেষণ করে সকল বিষয়ে কর্মমুখী শিক্ষা চালু করতে হবে। অতিরিক্ত বইয়ের চাপ কমিয়ে খেলাধুলার মাধ্যমে পড়াশুনা আনন্দের হতে হবে।
যে কোন মূল্যে প্রশ্নফাঁসকারীদের দলমত নির্বিশেষে কঠিন হাতে দমন করতে হবে। দমনে ব্যর্থ হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে ব্যর্থ হবে, অন্যদিকে অদক্ষ, অযোগ্য মেধাশুন্য শিক্ষার্থীরা অধিক গুরুত্বপূর্ণস্থান দখল করে সঠিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হবে। একারণে জাতি মেধাশুন্য হয়ে দেশ অনেক পিছিয়ে যেতে পারে।
বোর্ড পরীক্ষায় খাতা সঠিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরীক্ষকদের অবশ্যই অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। প্রতিটি খাতা মূল্যায়নের জন্য কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট সময় বেঁধে দিতে হবে। একজন পরীক্ষককে খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। কোন কারনে শিক্ষার্থীদের বোর্ড সার্টিফিকেট পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হলে, শিক্ষার্থীর অভিযোগ গুরুত্বের সাথে নিয়ে পরীক্ষার্থীর উপস্থিতিতে খাতা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে মূল্যায়ন করতে হবে এবং মূল্যায়নের গাফিলতি থাকলে ঐ অদক্ষ পরীক্ষকের ও প্রধান পরীক্ষকের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান রাখতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষায় বর্তমান নিয়ম অবশ্যই পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থী অযথা হয়রানী ও মানসিক চাপ থেকে বাঁচাতে হবে। এই হয়রানী বন্ধের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পনের দিনের মধ্যেই জয়েন্ট ইন্ট্রান্স পরীক্ষার নামে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সিরিয়ালের মাধ্যমে ভর্তি নিশ্চিত করে থাকেন। এই পদ্ধতি আমাদের দেশে অনুসরণ করা যেতে পারে বা আমাদের দেশে বর্তমান মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মত হতে পারে, অথবা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দৌড়াদৌড়ি হয়রানি ছাড়া মেধা যাচাইয়ে সঠিক পথে বের করে মেধাবীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে।
আমাদের দেশ এবং জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই শিক্ষা ব্যবস্থায় দলমত নির্বিশেষে কোনভাবেই অনিয়ম, দূর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে কোন ভাবেই রক্ষক যেন ভক্ষক না হতে পারে। মনে রাখতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হলে, দেশ এগিয়ে যাওয়ার সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
কাজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসলে “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” সত্য প্রমান হবে।
লেখক ঃআলহাজ্ব এম,এ,কাদের
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” এ কথাটি শিক্ষিত সমাজের কারও অজানা নয়। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশী উন্নত। আমাদের দেশে শৃংখলা বহির্ভূত, অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থাই যেন আজ অনিয়ম দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে শিক্ষিতের হার ৭৩% হওয়া সত্বেও বিশ্বে উন্নত দেশের মত আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না। শিক্ষা একটি জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কাজেই এটাকে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা দূর্নীতিমুক্ত নির্ভুল এবং পরিকল্পিত ও কার্যকারী হলে যেমন একটা জাতি দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে, তেমনই ভাবে অপরিকল্পিত, ভুলসিদ্ধান্ত, দূর্নীতিগ্রস্থ হলে সে দেশ সহজেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এ জন্য নেপোলিয়ন বোনাপোর্টের “ওভ ুড়ঁ ধিহঃ ঃড় ফবংঃৎড়ু ধ হধঃরড়হ, ভরৎংঃ ফবংঃৎড়ু রঃং বফঁপধঃরড়হ” অর্থাৎ “যদি তুমি একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাও তাহলে প্রথমেই ঐ জাতির শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে।” উক্তিটি যথার্থ প্রমাণ রেখে গেছে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। কাজেই অধিক গুরুত্বের সাথে অভিজ্ঞ, জ্ঞাণী-গুনির সমন্বয় ঘটিয়ে বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রনয়ন, কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা দরকার।
বর্তমানে আমাদের দেশে অদক্ষ শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি, অপরিকল্পিত কারিকুলাম, প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়ন, কোচিং বানিজ্য ও ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, নোট ও গাইড বইয়ের দৌরাত্বের কারনে শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রকৃত শিক্ষার সুফল আমরা পাচ্ছি না।
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায় বর্তমন সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব রেখে চলতি অর্থ বছরে দেশের মোট বাজেটের ১৪.৬% অর্থাৎ প্রায় ৬৭ লক্ষ ৮ শত ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ প্রতিযোগিতামূলক নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকলেও ইতোপূর্বে বিভিন্ন দূর্নীতির পথ অনুসরণ করে অনেকে নিবন্ধিত হয়ে অসৎপথ অবলম্বন করে শিক্ষকের মত মহৎ পেশায় অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এ জন্যই শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতির কলংকের অধ্যায় সৃষ্টি করে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাছাড়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে অশিক্ষিত, অযোগ্য, অদক্ষ পরিচালনা কমিটি গঠন করার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনায় বিঘœ ঘটছে। অন্য দিকে সঠিক পরিকল্পনা (কারিকুলাম) না থাকায় অধিক বিষয় ও পড়াশুনার চাপে কোমলমতি শিশুদের মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে। অহেতুক অনেকগুলো বিষয়ের পাঠ্য বই স্কুলে শিশুদের আনা নেয়া বা বহন করে নেওয়া অমানবিক ও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাছাড়া যখন তখন হঠাৎ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়। ইতোপূর্বে শিক্ষক তৈরীর আগেই সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষা পাঠ গ্রহণে মহাসংকটে পড়ে, এ যেন ঘোড়ার আগে গাড়ী যাওয়া, অবাক কা-। তাছাড়া সৃজনশীলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তর ভিন্ন থাকার কথা হলেও ঐ বইয়ের (পাঠ্যপুস্তকের) নৈর্ব্যক্তিক (টিক) যে ৩০টি প্রশ্ন রাখা হয়েছে, সেটা সৃজনশীলের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ টিকের ৩০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে শিক্ষার্থীকে গোটা বইয়ের প্রত্যেকটি শব্দই হাফেজ সাহেবের মত মুখস্ত রাখতে হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ এবারের এস.এস.সি পরীক্ষায় বারটি বইয়ের সবটুকু মুখস্ত রাখা একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে কতটুকু সম্ভব, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা বিবেচনা করা হয়নি। এমনও দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থী রাতদিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬/১৭ ঘন্টা পড়েও তার সিলেবাস শেষ করতে পারছে না। একারনে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপে হতাশা বেড়ে যাচ্ছে। পড়াশুনার চাপে অনেক শিশুরই সঠিক মানসিক বিকাশে বিঘœ ঘটা, খিটমিটে স্বভাব, অল্প কারণে ধৈর্য্যহারা, ভাই-বোন পিতা-মাতার সাথে দুর্ব্যবহার বেড়েই চলেছে। অধিক পড়াশুনার কারণে খেলাধুলার সুযোগ মোটেই না থাকায় বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে সময় অতিরিক্ত পড়ার চাপে কোন বিনোদন না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে মরণ নেশার দিকে ঝুকে পড়ছে।
অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র ফাঁস গোটা জাতি বা দেশের জন্য একটি অভিশাপ। গত প্রায় ৩০ বছর ধরে পি.ই.সি, জে.এস.সি, এস.এস.সি, এইচ.এস.সি-র মত গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে আসছে। ইতোপূর্বে জানা গেছে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দুর্নীতির মহাবিপ্লব ঘটিয়ে দুর্নীতিবাজরা হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রেই নয়, চাকুরী ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে আসছে। যদিও গত এক বছর ধরে সরকার বিশেষ দৃষ্টি রাখায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের তেমন কথা শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু ফাঁসকারী চক্র রাতারাতি হাজার কোটি টাকা ইনকামে ডিজিটাল সুড়ঙ্গ তৈরীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই এ ব্যাপারে সরকারকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখে পরিকল্পনাকারীকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব কাজ হয়ে থাকে।
সঠিক পরিকল্পনার অভাবে অনেক পরীক্ষার্থীর খাতা, এমনকি বোর্ড পরীক্ষার খাতাও অবমূল্যায়ন হয়ে থাকে। অনেক সময় দুর্নীতির মাধ্যমে বোর্ড থেকে অদক্ষ পরীক্ষকদের মধ্যে খাতা বন্টন করা হয়। ইতোপূর্বে এমনও শোনা গেছে অনেক শিক্ষক শিক্ষা বোর্ড থেকে নিজ বিষয়ের খাতা না পেয়ে অন্য বিষয়ের খাতা দেখেছেন, তাছাড়া পরীক্ষককে তিনশত খাতা দেখার জন্য মাত্র দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়, যা একেবারেই অসম্ভব। যেখানে একটি খাতা মূল্যায়ন করতে কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট সময় দরকার, সেই হিসাবে তিনশত খাতা দেখার জন্য একশত পঞ্চাশ ঘন্টা দরকার। এই সময়ের অভাবেই অনভিজ্ঞ, অদক্ষ পরীক্ষক তার আত্মীয়-স্বজন, ছেলে-মেয়ে, এমনকি তার কাছে টিউশনিতে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়েও খাতা মূল্যায়ন করিয়ে থাকেন। এ কারনে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কম নম্বর পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে একেবারেই ভেঙে পড়ে। এসব কারণে অনেক পরীক্ষার্থী খাতাকল করে ত্রুটি পেলেও ঐ অদক্ষ পরীক্ষকের বিরুদ্ধে কোন শাস্তির বিধান আইনে রাখা হয়নি। কাজেই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না।
শিক্ষাই যেখানে জাতির মেরুদেন্ড সেখানে অপরিকল্পিত, দুর্নীতিগ্রস্থ শিক্ষাব্যবস্থাকে এত তাচ্ছিল্যভাবে দেখার কোন সুযোগ নাই। কারণ আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষা বিভাগের অনিয়ম দুর্নীতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই প্রতিযোগীতামূলক দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। অনেক দূর্নীতিবাজ শিক্ষক, সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে বই প্রকাশনী, কোম্পানীর সাথে আর্থিক সুবিধা পাওযার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে অহেতুক অপ্রয়োজনীয় নোট বই, গাইড বই শিক্ষাথীদের কেনার জন্য বাধ্য করে থাকে। তাছাড়া অনেক ক্লাস শিক্ষক তাদের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য বাধ্য করেন, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের কিছু কিছু শিক্ষক তাদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর বা ফেল করানোর হুমকিও দিয়ে থাকেন।
মান সম্মত শিক্ষার জন্য কোচিং বানিজ্য একটি বড় বাঁধা। ইদানিং বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজের ক্লাস না করে কোচিং, টিউশানি প্রাইভেট পড়ার দিকে বেশী ঝুকে পড়েছে। সরকার যেখানে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বাজেটের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে চায়, তখনই অধিক ক্ষমতাধর অপশক্তি কোচিং বানিজ্যের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। কারণ কোচিং বানিজ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগে হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া এ কোচিং সেন্টারগুলো বেশীর ভাগই রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত। বিশেষ করে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষার শেষে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী অংশ গ্রহণ করে থাকে। এতে করে ঢাকা শহরে অবস্থানের জন্য বাড়তি চাপ অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। তাছাড়া মেয়েদের জন্য নিরাপদ মেস (আবাসস্থল) পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক মহিলা মেসে তদারকিতে অসৎ, খারাপ মহিলা থাকার কারনে কোচিং করতে যাওয়া কোমলমতি নিষ্পাপ মেয়েদের ফুসলিয়ে বা ভয়ভীতি অথবা বিষয়টি গোপন রেখে বেড়াতে নিয়ে যেয়ে সম্ভ্রমহানী করার মত ঘটনা ঘটে থাকে। এইচ.এস.সি পাশের পর উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে পরিকল্পিত নিয়ম না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারে না। অনেক সময় একই দিনে বা পরের দিন কয়েক জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। যেমন: আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরের দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরের দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরের দিন বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে যা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কোন ভাবেই সম্ভব হয়ে উঠেনা।
আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা মূলতঃ দুর্নীতির কারনেই এগিয়ে যেতে পারছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অনুধাবন করে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিকে নিঃশেষ করার জন্য জিরোটলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই নীতি বাস্তবায়ন হলেই শিক্ষা ব্যবস্থায় দলমত নির্বিশেষে সঠিক প্রতিযোগীতার মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ হবে। সৎ, যোগ্য মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিতে হবে। এঁদের দ্বারা পাঠদানেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস অভিমুখে আবার ফিরে আসবে। শিক্ষা কারিকুলাম অবশ্যই বিচার বিশ্লেষণ করে সকল বিষয়ে কর্মমুখী শিক্ষা চালু করতে হবে। অতিরিক্ত বইয়ের চাপ কমিয়ে খেলাধুলার মাধ্যমে পড়াশুনা আনন্দের হতে হবে।
যে কোন মূল্যে প্রশ্নফাঁসকারীদের দলমত নির্বিশেষে কঠিন হাতে দমন করতে হবে। দমনে ব্যর্থ হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে ব্যর্থ হবে, অন্যদিকে অদক্ষ, অযোগ্য মেধাশুন্য শিক্ষার্থীরা অধিক গুরুত্বপূর্ণস্থান দখল করে সঠিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হবে। একারণে জাতি মেধাশুন্য হয়ে দেশ অনেক পিছিয়ে যেতে পারে।
বোর্ড পরীক্ষায় খাতা সঠিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরীক্ষকদের অবশ্যই অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। প্রতিটি খাতা মূল্যায়নের জন্য কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট সময় বেঁধে দিতে হবে। একজন পরীক্ষককে খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। কোন কারনে শিক্ষার্থীদের বোর্ড সার্টিফিকেট পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হলে, শিক্ষার্থীর অভিযোগ গুরুত্বের সাথে নিয়ে পরীক্ষার্থীর উপস্থিতিতে খাতা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে মূল্যায়ন করতে হবে এবং মূল্যায়নের গাফিলতি থাকলে ঐ অদক্ষ পরীক্ষকের ও প্রধান পরীক্ষকের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান রাখতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষায় বর্তমান নিয়ম অবশ্যই পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থী অযথা হয়রানী ও মানসিক চাপ থেকে বাঁচাতে হবে। এই হয়রানী বন্ধের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পনের দিনের মধ্যেই জয়েন্ট ইন্ট্রান্স পরীক্ষার নামে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সিরিয়ালের মাধ্যমে ভর্তি নিশ্চিত করে থাকেন। এই পদ্ধতি আমাদের দেশে অনুসরণ করা যেতে পারে বা আমাদের দেশে বর্তমান মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মত হতে পারে, অথবা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দৌড়াদৌড়ি হয়রানি ছাড়া মেধা যাচাইয়ে সঠিক পথে বের করে মেধাবীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে।
আমাদের দেশ এবং জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই শিক্ষা ব্যবস্থায় দলমত নির্বিশেষে কোনভাবেই অনিয়ম, দূর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে কোন ভাবেই রক্ষক যেন ভক্ষক না হতে পারে। মনে রাখতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হলে, দেশ এগিয়ে যাওয়ার সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
কাজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসলে “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” সত্য প্রমান হবে।
লেখক ঃআলহাজ্ব এম,এ,কাদের
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
No comments