ঝিনাইদহে বিএনপি প্রার্থীর ওপর হামলা, আহত ২
চিত্রা নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-২ আসনে (সদর ও হরিণাকুণ্ডু) বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইব্রাহিম রহমান বাবুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় ২ কর্মী আহত হয়েছে।ইব্রাহিম রহমান বাবু শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) সকালে সদর উপজেলার জিয়া নগরে নেতা-কর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম রহমান বাবু জানান, ঝিনাইদহ-২ আসনে আগামী নির্বাচনের জন্য তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার একদিন পর নেতা-কর্মীদের সাথে বিভিন্ন অঞ্চলে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য বের হন । বিএনপির তরুণ এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘সকালে জিয়ানগর বাজারে পৌঁছালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একদল কর্মী অতর্কিতে তাদের ওপর চড়াও হয়। লাঠি-সোটা নিয়ে মারপিট শুরু করে। এসময় কুহিন, সাবু নামে দুই কর্মী আহত হয়। হামলাকারীরা মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ-উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হঠাৎ করেই উগ্রভাবে একদল যুবক বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর মারপিট শুরু করে। ঝটিকা হামলায় তারা লাঠি-সোটা ব্যবহার করেছিল । পরে খবর পেয়ে সদরের গান্না পুলিশ ক্যাম্প থেকে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হন। তবে গান্না ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই নাজমুল হোসেন জানান, ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা কাউকে পাননি। কোনো রকম আলামতও ছিলো না। প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহ-২ আসনে বিএনপির চার প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- চারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সভাপতি এসএম মশিউর রহমান এবং মসিউর রহমানের বড় ছেলে ইব্রাহিম রহমান বাবু। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৩টি, হরিণাকুন্ডু উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-২ (জাতীয় সংসদের ৮২) আসন। জেলার চারটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। ঝিনাইদহ-২ আসনটিতে বরাবরই বিএনপির রয়েছে বেশ শক্ত অবস্থান। আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনে সব সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত এ আসনটি ছিলো বিএনপির দখলে। সাবেক এমপি মসিউর রহমানকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু প্রথমবারের মতো পরাজিত করেন। তবে সফিকুল ইসলাম অপুু গত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির কাছে পরাজিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এক লাখ ৬২ হাজার ৪৬৪ ভোটের মধ্যে বিএনপির প্রার্থী মসিউর রহমান পান ৭৬ হাজার ১ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের মতিয়ার রহমান পান ৩৭ হাজার ১৬৬ ভোট। আর এ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর আবুল কাশেম পান ৩৩ হাজার ৯৭৫ ভোট। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির মসিউর রহমান পান ৮৩ হাজার ৯৬৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নূরে আলম সিদ্দিকী পান ৬৯ হাজার ৩৫৩ ভোট, জায়ামাতের নুর মোহাম্মাদ পান ৪১ হাজার ২৪৭ ভোট। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির মসিউর রহমান পান এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫১ ভোট। নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের নূরে আলম সিদ্দিকী পান এক লাখ ১৭ হাজার ৭০৬ ভোট । ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সফিকুল ইসলাম অপু পান এক লাখ ৬১ হাজার ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপির মসিউর রহমান পান এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৩৬ ভোট। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাহজীব আলম সিদ্দিকী পান ৬৭ হাজার ৯৮৪ ভোট। নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের সফিকুল ইসলাম অপু পান ৫১ হাজার ২৪৪ ভোট।
No comments