প্রাথমিকে চালু হচ্ছে কাগজবিহীন বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থা ই-মনিটরিং
চিত্রা নিউজ ডেস্ক: জিটাল পদ্ধতিতে কাগজবিহীন বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থা শুরু করতে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন ব্যবস্থা ডিজিটাল-করণে ই-মনিটরিং সিস্টেম নামে এ ব্যবস্থার প্রণয়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ। সনাতনী পদ্ধতিতে বিদ্যালয় পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় অনেক তথ্য বিভ্রাট হয়। এ সমস্যা কাটাতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিদ্যালয় পরিদর্শন ও তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করা হবে। আগামীকাল ১৩ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) ৬৪ টি জেলায় ই-মনিটরিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন। রাজধানীতে এ উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান হবে। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মতে, কাগজ-ভিত্তিক স্কুল মনিটরিং সিস্টেমটি স্কুল পর্যবেক্ষণ চিত্রকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করেনা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষন ও মূল্যায়ন (এম অ্যান্ড ই) বিভাগে সরবরাহ করার আগে বিভিন্ন স্তর থেকে পর্যবেক্ষন তথ্য একাধিকবার সমন্বয় করা হয়। এর ফলে কোন বিদ্যালয়ের মূল অবস্থার বিস্তারিত তথ্য হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় নথি ঘেঁটে পরিদর্শন প্রতিবেদন বের করতে হয় কর্মকর্তাদের। এ প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ। তাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও সেভ দ্য চিলড্রেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যবেক্ষন ব্যবস্থা ডিজিটাল করতে ই-মনিটরিং ব্যবস্থা উদ্ভাবন ও চালু করেছে। এ বিষয়ে সেভ দ্যা চিলড্রেনের আইসিটি ইন এডুকেশন বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার রুকসানা হোসেন জানান, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা যে তথ্য ছক ব্যবহার করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যবেক্ষণ করেন তার উপর ভিত্তি করেই অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিক ই-মনিটরিং সিস্টেম চালু করেছে সেভ দ্যা চিলড্রেনের আইসিটি টিম। স্কুল পর্যবেক্ষণের সারসংক্ষেপ এবং পর্যবেক্ষণের গুণগত ও পরিমানগত তথ্য ওয়েবভিত্তিক ড্যাশবোর্ডে আপলোড করা হবে। ই-মনিটরিং সিস্টেমে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা স্মার্টফোন বা ট্যাব ব্যবহার করে বিদ্যালয় পর্যবেক্ষণের তাৎক্ষনিক তথ্য (রিয়েল টাইম ডাটা) সংগ্রহ করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, সার্ভারে তথ্য আপলোড করার সাথে সাথে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন বিভাগ তা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে। ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম থেকে শিক্ষা কর্মকর্তারা দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সাথে স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের সুযোগ পাবেন। রুকসানা হোসেন আরো জানান, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের ৫টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ই-মনিটরিং সিস্টেম চালু হয়। এরপর ২০১৬ থেকে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আরো ৮০টি উপজেলায় ই-মনিটরিং ছড়িয়ে দেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য ৬৪ জেলা থেকে তৈরি করা হয়েছে মাস্টার ট্রেইনার। এছাড়া ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের আক্টোবরে ঢাকা মেট্রোপলিটনের ১২টি থানার শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ঘোষণার মাধ্যমে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে এসব থানা পেপারলেস মনিটরিং এলাকায় পরিণত হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশব্যাপী কাগজবিহীন স্কুল পরিদর্শন ব্যবস্থা ই-মনিটরিং বাস্তবায়নে অধিদপ্তর ৩৭২০ টি ট্যাবলেট কিনেছে। ই-মনিটরিং কাজে ব্যবহারের জন্য আক্টোবর-নভেম্বর মাসে দেশব্যাপি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে তা বিতরণ করা হয়। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাস থেকে ৬৪ টি জেলায় ই-মনিটরিং কার্যক্রম সম্প্রসারিত ও বাধ্যতামূলক করা হবে। মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, এই কার্যক্রমটি তাদের সময় ও পেপার ওয়ার্ক কমিয়েছে। এই সিস্টেমে শিক্ষার নীতি নির্ধারকরা আরো সহজে অগ্রাধিকার সনাক্ত করতে পারবেন। শিক্ষা বিভাগের কর্মক্ষমতা, নিরীক্ষণ এবং কার্যকরভাবে কোন নির্দিষ্ট কাজের ফলাফল মূল্যায়ণে সাহায্য করবে ই-মনিটরিং।
No comments