কালীগঞ্জে প্রবাসীর বাড়িতে রহস্যজনক আগুন!
কালীগঞ্জ প্রতিনিধি:প্রথমে কেরসিন ও পেট্রোলের গন্ধ পাচ্ছিলাম। পরে পোড়া ধোঁয়ার গন্ধ। সব মিলিয়ে শ্বাস বন্ধের উপক্রম হচ্ছিল। ভয়ে দরজা খুলিনি। সাহায্য চেয়ে পরিচিত জনের কাছে ফোন করছিলাম। পরে পুলিশ পরিচয়ে কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলেছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটে যাওয়া রহস্যজনক আগুন লাগার ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন পাতবিলা গ্রামের প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের স্ত্রী জুলি বেগম (৩৫)। রহস্য জনক আগুনে তাদের রান্না ঘরের কিছু টুকরো কাপড় ও অপর ২টি রুমে থাকা আলনা ও সোফা পুড়ে গেছে। কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) ইউনুচ আলী বলেন, রাত আনুমানিক ১ টার দিকে উপজেলার ৫নম্বর সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নের পাতবিলা গ্রামের আয়ূব হোসেনের ছেলে প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের বাড়িতে অগ্নিকা- ও ডাকাতির ঘটনা শুনে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়। তারা যেয়ে দেখতে পান নীচের বড় গেট বন্ধ। গেটের পরের আরেকটি কলাবসিবল গেটও বন্ধ ছিল। অনেক ডাকা ডাকির পরও বাড়ির লোকজন দরজা খুলছিল না। যার কারনে ভিতরে ডাকাত আছে সন্দেহে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের যন্ত্রপাতি দিয়ে দু’টি গেটই খুলেন। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করে পুলিশ দেখে সব দরজাই তালা মারা। পরে বাড়ির গৃহিনী একটি রুম থেকে বের হয়ে আসে। তিনি জানান, তার স্বামী ফিরোজ মাহমুদ ২৩ বছর ধরে সৌদি আরবে থাকায় বাড়িতে তিনি দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে দুই মেয়ে ফারিয়া মাহমুদ(১৪) এবং রোজ (৬) কে নিয়ে একটি রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ১টার দিকে বিদ্যুত চলে যাওয়ায় ঘুুম ভেঙ্গে যায়। কিছুক্ষণ পরে পোড়া পেট্রোলের গন্ধ ও পোড়া বন্ধে আতঙ্কিত হয়ে পরিচিত জনদের কাছে ফোন করি। পরে পুলিশ এসে আমাদের রুম থেকে উদ্ধার করে। সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন জানান, ঘটনা জানতে পেরে আমি রাত ৩টার দিকে কালীগঞ্জ থানার ওসিকে ফোনে ঘটনাটি জানাই এবং পরে ওই বাড়িতে গিয়ে পরিবারের খোঁজ খবর নিই। বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায় রান্না ঘরে এবং বাড়ির উত্তর পাশের একটি কক্ষে আগুনে আলনা পুড়ে গেছে। এই কক্ষে থাকা একটি মটর সাইকেল ও খাট অক্ষত অবস্থায় আছে। পূর্ব পাশের একটি কক্ষে সোফা পুড়ে গেছে। তবে টিভিতে আগুনের তাপ লাগলেও তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। বাড়ির প্রাচীরের ভেতরের দেওয়ালে একটি কাগজে “অপারেশন পি এন্ড এম” লেখা একটি স্টীকার মারা ছিল। এলাকাবাসীর ধারনা আগুন লাগিয়ে যাওয়ার পথে দূর্বৃত্তরা এটি লাগিয়েছে। কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শামছুর রহমান জানান, সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌছে বাড়ির সব জানালা দরজা বন্ধ পাই। একই সময় কালীগঞ্জ থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌছায়। এসময় এলাকাবাসি জানায়, বাড়ির ভিতরে ডাকাত থাকতে পারে। ফলে পুলিশের উপস্থিতিতে বাড়ির হাইড্রোলিক স্পেটার ব্যবহার করে দরজা ভেঙ্গে বাড়িতে থাকা মা ও মেয়েদের উদ্ধার করা হয়। আমাদের ডাকে বাড়ির একটি রুমে ডাকাতের ভয়ে লুকিয়ে থাকা মা ও মেয়েরা দরজা খুলে বেরর হয়ে আসে। আগুন কিভাবে লেগেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দু’টি কক্ষের ভেতরে আগুন লেগেছে। তবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে তা তাৎক্ষনিক ভাবে জানা যায়নি। কালীগঞ্জ থানার ওসি ইউনুচ আলী আরো জানান, বাড়িটি মজবুত ভাবে নির্মাণ করা। চারিদিকে উঁচু প্রাচীর ঘেরা। সেখানে গেট ভেঙ্গে প্রবেশ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। রুমের চাবি বাড়ির গৃহিনীর কাছে। তাহলে ঘরের ভিতরে আগুন লাগে কিভাবে? এছাড়া ডাকাতির কোন আলামত পাওয়া যায়নি। বাড়ি থেকে কোন মালামালও খোয়া যায়নি। বিষয়টি রহস্যজনক। তিনি আরো বলেন, ওই বাড়ির মালিকের বেশ কিছু ব্যাংক লোন ছিল। ব্যাংক লোনের কারনে এমনটি হতে পারে।
No comments